বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক :
এক সময় ভাইকিংরা দ্বীপটির নাম রেখেছিল ‘সমুদ্রের নেকড়ে’ বা Fingal’s Cave। স্কটল্যান্ডের অদূরে উত্তাল সমুদ্রের নীল পানির বুকে দাঁড়িয়ে থাকা বিস্ময়কর সেই দ্বীপে অবশ্য কেউ বাস করে না। হাজার বছর ধরে নাবিকেরা রহস্যময় এই দ্বীপটিকে দেখে আসছে। একই সঙ্গে ভর করেছে আতঙ্ক।
স্কটল্যান্ডের অধীনে উত্তরাঞ্চলীয় সমুদ্রের মাঝে স্টাফা দ্বীপপুঞ্জে ‘ফিংগাল’স কেভ’র অবস্থান। প্রকৃতির আশ্চর্য খেয়ালের কারণে ‘ফিংগাল’স কেভ’-এর ভেতরে তৈরি হয়েছে অসংখ্য খিলান। ভূতত্ত্ববিদদের মতে, আজ থেকে প্রায় ৬ কোটি বছর আগে লাভা থেকে এই গুহার সৃষ্টি। এর গলিত পাথর খড়িমাটির উপর দিয়ে যাওয়ায় গুহাটি এই বিশেষ আকৃতি পায়।
আয়ারল্যান্ডের ‘জায়ান্ট’স কজওয়ে’ নামের অপর স্থানের সঙ্গেও এর আশ্চর্য রকমের মিল। যদিও ভূতত্ত্ববিদদের মতে, এদের মধ্যে মিল নাকি আপতিক নয়। তবে তাদের ধারণা, এই দুই প্রাকৃতিক বিস্ময়ের মধ্যে যোগসূত্র রয়েছে। তারা মনে করেন, একই লাভাস্রোত থেকে এই দুই গুহার সৃষ্টি হয়।
এমনকি দুটি গুহার সঙ্গে সংযোগ ছিল বলেও উপকথা রয়েছে। পরে নাকি সেই সেতু ধ্বংস হয়ে যায়।
তবে প্রাচীনকালে আইরিশ জাতি গোষ্ঠী একে দানবের তৈরি বলেই মনে করতো। গুহার ভেতরের নানা শব্দ নিয়েও ছিল নানা গুজব। তাদের ধারণা দানোরাই গুহাতে বাস করতে গিয়ে এমন শব্দ করতো।
উনিশ শতকের জার্মান ধ্রুপদী সঙ্গীত রচয়িতা ফেলিক্স মেন্ডেলসন এই গুহাকে নিয়ে রচনা করেছিলেন বিখ্যাত কম্পোজিন ‘হেব্রিড’স ওভারচার’। যা তিনি ফিংগালস গুহা’র রহস্যময় শব্দকে কল্পনা করে রচনা করেছিলেন।
অবশ্য এখন দিন পাল্টেছে। বিজ্ঞানের উৎকর্ষতায় অনেক প্রাকৃতিক রহস্যের সমাধান মিলেছে। হাতে এসেছে অন্ধকার আর আতঙ্ককে দূর করার আধুনিক প্রযুক্তি। তারই সুবাদে স্থানটিতে এখন পর্যটকেরা ভীড় জমান। যে দ্বীপ একসময় ভয়ঙ্কর জলদস্যুরাও এড়িয়ে চলতো, সেখানে এখন মানুষের সমাগম ঘটে।
বছরের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে দর্শণার্থীরা গুহাটিতে ভ্রমণ করে থাকেন। গুহাটি ভ্রমনের সুবিধার্থে বেশ কিছু সংস্থা ইয়ট ভাড়া দিয়ে থাকেন। পাশাপাশি গুহাটি ঘুরে দেখতেও গাইডের ব্যবস্থা করে থাকে। ফলে পায়ে হেঁটে গুহাটি ঘুরে দেখারও সুযোগ হয় পর্যটকদের।
অবশ্য সে সবই দিনের বেলা। রাতে আদিম সেই রহস্য নিয়েই সাগরের বুকে মাথা জাগিয়ে থাকে ‘ফিংগালস কেভ