২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ভোর ৫:৫৪

প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলেই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে : মির্জা ফখরুল

মারুফ শরীফ, নিজস্ব প্রতিবেদক :

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পার্লামেন্ট ভেঙে দিন, অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করুক। তাহলেই এদেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হবে।
আজ শনিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে জাতীয় যুব সংহতি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন তখনই হবে, যখন এদেশে নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হবে। নির্বাচন তখনই হবে, যখন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মুক্ত হয়ে আসবেন। নির্বাচন তখনই হবে, যখন একটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হবে। আপনাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। আপনারা অবিলম্বে দেশনেত্রীকে মুক্তি দিন, যেন তাঁর সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা যায়। তিনি নিজে যেভাবে চাইবেন সেভাবে চিকিৎসা হবে। অন্যদিকে সুষ্ঠু নির্বাচনের একটা লেভেল প্রেয়িং ফিল্ড তৈরি করুন।
কোথাও এখন নিরাপত্তা নেই দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রতিদিন খবরের কাগজ খুললেই ধর্ষণ-হত্যা-খুন-জখম। সময় কোথায় পুলিশের? পুলিশ তো এখন ব্যস্ত আছে বিরোধী দলকে ঠেকাতে। তাদের সময় কোথায় এইসব অপরাধীদের ধরার? যার কারণে এসব অপরাধ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। কয়েকদিন আগে রাজীব, দুই বাসের রেষারেষিতে যার হাত চলে গেল। কী নির্মম! সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী সাহেব বলছেন, যারা বাস ড্রাইভার আর যারা আরোহী তাদের সমস্যার কারণে এরকম হচ্ছে। হাস্যকর ব্যাপার ছাড়া কী বলবো এটা?
মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা যেখানে পুরো সিস্টেমটা তৈরি করতে পারছেন না, যেখানে আপনি আজকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। সে জায়গায় আরোহীদের আপনি দোষ দিচ্ছেন। স্বাস্থ্য খাতসহ সব জায়গায় আজকে চরম নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে। এর একটাই কারণ, তাহলো এই অবৈধ সরকার ক্ষমতা দখল করে বসে আছে।
পররাষ্ট্রনীতি চরম ব্যর্থ দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, ব্রিটেনের রানী এলিজাবেথের সঙ্গে করমর্দণ করছেন, আমরা দেখছি। কিন্তু তাতে কী লাভ হচ্ছে। মিয়ানমারের সঙ্গে এত সুসম্পর্ক, আজকে ১০ লাখের ওপর রোহিঙ্গা এসে আমাদের এখানে আশ্রয় নিয়েছে। এখন পর্যন্ত একজন মানুষকেও আপনারা ফেরত পাঠাতে পারেননি। ভারত এত বন্ধু যে তারা এখন সম্পর্কের সর্বোচ্চ স্তরে অবস্থান করছে। সে ভারতের সঙ্গে এখন পর্যন্ত তিস্তা নদীর পানির কোনও সুরাহা হয়নি। এখনও সীমান্তে আমাদের লোকদের গুলি করে মেরে ফেলা হচ্ছে। অথচ তার কোনও সুরাহা এই সরকার করতে পারেনি। এরা কোনও কিছুই করতে পারবে না। কারণ, এদের জনগণের কোনও সমর্থন নেই।
ক্ষমতাসীন দল স্বাধীনতার চেতনাকে অপহরণ করেছে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, এই সরকার তাদের নিজেদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য, পাকাপোক্ত করার জন্য দেশ থেকে গণতন্ত্রকে পুরোপুরি বিদায় করার চক্রান্ত করছে। আজকে সারাদেশে একটা ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। মানুষের মৌলিক বিষয়, যেমন কথা বলার স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সংগঠন করার স্বাধীনতা, ভোট দেয়ার স্বাধীনতা, নেতা নির্বাচন করার স্বাধীনতা, সবকিছুই এই সরকার বুলেট-পিস্তলের জোরে অপহরণ করেছে।
সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও সাজানো মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগের যে নীল নকশা, তার মাধ্যমেই তাঁকে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। একজন সাধারণ মানুষও যে বিচারটা পান, তা বেগম খালেদা জিয়া পাননি। কারও পাঁচ বছরের সাজা হলে আপিল করার সঙ্গে সঙ্গে জামিন পেয়ে যান। বেগম খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে বোধ হয় সিদ্ধান্তই ছিল তাঁকে জামিন দেয়া যাবে না। মানুষের যে আকাঙ্খা এবং যে গণতান্ত্রিক সমাজ এই তাকে সরকার ধ্বংস করে দিয়েছে।
সিপিডির মন্তব্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের যে উন্নয়ন তা উন্নয়ন নয়। মানুষের প্রকৃত কোনও আয় বাড়েনি। মানুষের ন্যূনতম ক্রয় ক্ষমতা বাড়ছে না এবং কর্মসংস্থান নেই। কর্মসংস্থান কোথাও হচ্ছে না, কলকারখানাগুলো বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ব্যাংকগুলো তাসের ঘরের মতো যে কোনও সময় ভেঙে পড়বে। এটা শুধু সময়ের অপেক্ষা। এত লুটপাট হয়েছে এসব ব্যাংকে। প্রত্যেকটা ব্যাংকে নিজস্ব লোককে পরিচালকের পদে বসিয়ে লুটপাটের চূড়ান্ত ব্যবস্থা করে রেখেছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবস্থা আরও শোচনীয় উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি, তারা পাস করে চাকরি চায়। তারা চাকরির সুযোগ পাচ্ছে না, কারণ ৫৬ শতাংশ কোটার জন্য বরাদ্দ। ৪৪ শতাংশ শুধু মেধাবীদের সুযোগ দেয়া হয়। সেই মেরিট আবার আওয়ামী ছাত্র থাকলে হয় তাছাড়া হয় না। তারপরও ভাইভাতে পাস করলে তার ডিএনএ টেস্ট করে বের করা হয় চৌদ্দগুষ্টিতে কে বিএনপি ছিল।

দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ

প্রকাশ :এপ্রিল ২১, ২০১৮ ৯:৫৭ অপরাহ্ণ