নিজস্ব প্রতিবেদক:
জীবিত কন্যা সন্তান রেখে মৃত পুত্র সন্তান দেয়ার অভিযোগ উঠেছে নগরের বেসরকারি চাইল্ড কেয়ার ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় মঙ্গলবার দিবাগত রাত একটার দিকে সিএমপি পাঁচলাইশ থানায় অভিযোগ করেছেন শিশুটির চাচা আলমগীর হোসেন। থানা অভিযোগটি সাধারণ ডাইরি (জিডি) হিসেবে গ্রহণ করে তদন্ত শুরু করেছে। পাঁচলাইশ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মহিউদ্দিন মাহমুদ এই তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, আদালতের অনুমতি নিয়ে ডিএনএ টেস্ট করিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কন্যা শিশুটির চাচা মো. আলমগীর হোসেন জানান, বিয়ের পাঁচ বছর পর নোয়াখালীর সেনবাগে বাবার বাড়িতে গত ১২ এপ্রিল কন্যা সন্তান জন্ম দেন প্রবাসি বড় ভাই মহিউদ্দিনের স্ত্রী রোকসানা আক্তার। জন্মের এক ঘণ্টা পর বাচ্চা অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত তাকে নিয়ে যাওয়া হয় নোয়াখালীর মা ও শিশু হাসপাতালে। সেখানে প্রায় ৩ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর শিশুটি শারীরিক অবস্থা অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামে নিয়ে আসার পরামর্শ দেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।
তিনি জানান, গত ১৫ এপ্রিল শিশুটিকে ভর্তি করা হয় নগরের গোলপাহাড় মোড়ে ট্রিটমেন্ট হাসপাতালের তৃতীয় তলায় অবস্থিত বেসরকারি চাইল্ড কেয়ার ক্লিনিকে। ভর্তির পর চিকিৎসকরা শিশু কন্যাটিকে আইসিইউ’তে রাখেন। দু’দিন পর ১৭ এপ্রিল (মঙ্গলবার) সকাল ৮টায় শিশুকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। এসময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শিশুটির পরিবারকে বলেন, বাচ্চার প্রচুর রক্তক্ষরণের ফলে চেহারা বিকৃত হয়ে গেছে। তাই তার বিভৎস চেহারা না দেখাই ভাল। বাড়িতে নিয়ে দ্রুত দাফন করে ফেলুন। এরপর তড়িঘড়ি করে শিশুটিকে কাফনের কাপড়ে মুড়িয়ে রিলিজ করে দেন (ছাড়পত্র দিয়ে দেন) চাইল্ড কেয়ার কর্তৃপক্ষ।
পাঁচলাইশ থানার সামনে অ্যাম্বুলেন্সে মৃত বাচ্চা নিয়ে বসে থাকা প্রবাসি মউিদ্দিনের স্ত্রী ও কন্যা শিশুর মা রোকসানা জানান, গ্রামের বাড়িতে গোসল করানোর সময় কন্যা শিশুর পরিবর্তে পুত্র শিশুর লাশ দেখে সবাই চমকে উঠে। এরপর লাশ নিয়ে থানায় চলে আসেন তারা। এই বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযোগ অস্বীকার করে চাইল্ড কেয়ার হাসপাতালের পরিচালক ডা. ফাহিম হাসান রেজা বলেন, এটা ভুল বোঝাবুঝি। প্রতিটি শিশুর পরিচিতি হিসেবে একটি ট্যাগ লাগানো থাকে। ভর্তিকালীন আমাদের রেজিস্ট্রারে ছেলে হিসেবেই চিহ্নিত আছে।
তিনি একটু চিন্তিতভাবে বলেন, রিসিপশনে ভুল করতে পারে। কিন্তু রেজিস্ট্রারে ভুল হতে পারে না। ডাক্তার দেখেই রেজিস্ট্রার তৈরি করেন। শিশু কন্যাটির চাচা আলমগীর অভিযোগ করে বলেন, চাইল্ড কেয়ার কর্তৃপক্ষ ভর্তি করানোর সময় রোগীর ব্যবস্থাপত্রে শিশু কন্যা উল্লেখ করেছে। নোয়াখালীর মা ও শিশু হাসপাতালেও শিশু কন্যা নামে লিপিবদ্ধ করা হয়। তিনি বলেন, শিশুটি মারা যাওয়ার আগে ২টি পরীক্ষা দেন চাইল্ড কেয়ার কর্তৃপক্ষ। তার মধ্যে একটি শেভরন ল্যাবরেটরিজে এবং অপরটি ট্রিটমেন্ট হাসপাতালে করা হয়। ওই পরীক্ষার রিপোর্টেও কন্যা শিশু হিসেবে উল্লেখ আছে। তবে মৃত্যুর পর কিভাবে পুত্র সন্তান হয়ে যায়?
ওসি মহিউদ্দিন মাহমুদ বলেন, নগরীর চাইল্ডকেয়ার হাসপাতালে নবজাতক শিশু চুরি হওয়ার একটি অভিযোগ পেয়েছি। চাইল্ড কেয়ারের পক্ষ থেকে হস্তান্তর করা মৃত বাচ্চাটিও থানা হেফাজতে আছে। পরবর্তী করণীয় ডিএনএ টেস্ট করা। এই জন্য আদালতের অনুমতি চাওয়া হবে।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি