আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ধর্ষণ, যৌন নিপীড়নসহ জঘন্য অপরাধের জন্য মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) মুখোমুখি করতে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন একজন রোহিঙ্গা নারী।
তিনি বলেছেন, মিয়ানমারে অস্ত্র বিক্রি ও প্রাকৃতিক সম্পদের জন্য প্রতিযোগিতা করে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও সহিংসতার নিন্দা জানানো ভন্ডামি।
নিপীড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির প্রতিনিধি হিসেবে আইনজীবী রাজিয়া সুলতানা জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে এ আর্জি জানান। রাজিয়া ২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশে অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে নারী ও শিশুদের ওপর কাজ করছেন। নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ সমতা ও ন্যায়বিচার পাওয়ার মাধ্যমে সঙ্ঘাতময় পরিস্থিতিতে যৌন সহিংসতা প্রতিরোধের ওপর গতকাল নিউ ইয়র্কে নিরাপত্তা পরিষদে উন্মুক্ত বির্তক অনুষ্ঠিত হয়।
রাজিয়া সুলতানা বলেন, কেবলমাত্র রোহিঙ্গা হওয়ার কারণে মিয়ানমার সেনাবাহিনী আমাদের নারী-শিশুদের ওপর গণধর্ষণ ও নির্যাতন চালিয়েছে, তাদের হত্যা করেছে। নিজ বাড়িতে বা বাংলাদেশে পালিয়ে আসার সময় রোহিঙ্গা নারী-শিশুরা ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ছয় বছরের শিশুও তাদের হাত থেকে রেহায় পায়নি। অনেককে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে।
নিজ গবেষণা ও সাক্ষাতকারে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতি তিনি বলেন, গত আগস্ট থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা অধ্যুষিত ৩৫০টি গ্রাম আক্রমন করে পুড়িয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে ১৭টি গ্রামে তিন শতাধিক রোহিঙ্গা নারী ধর্ষণের প্রমাণ পাওয়া গেছে। যৌন সহিংসতায় শতাধিক সৈন্য অংশ নিয়েছে। রাখাইনের বিস্তৃর্ণ এলাকাজুড়ে এই সহিংসতা চলেছে। ধর্ষণের পর রোহিঙ্গা নারীদের ওপর যেভাবে নির্যাতন চালানো হয়েছে তাতে শুধু ভীতি সঞ্চারই নয়, বরং তাদের গর্ভধারণের ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
বাংলাদেশে শরণার্থী ক্যাম্পগুলোর পরিস্থিতি বর্ণনা করে রাজিয়া সুলতানা বলেন, রোহিঙ্গা তরুণী-যুবতীদের হয় অপহরন, না হয় চাকরি বা বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অনেকেই ক্যাম্পে নিজেদের ভবিষ্যত দেখতে না পেয়ে এ সব প্রলভনে পা দিচ্ছে, কিন্তু আর ফিরে আসছে না।
চলতি মাসে বাংলাদেশ সফরের সময় কক্সবাজারে রোহিঙ্গা নারীদের সাথে কথা বলার জন্য নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানা তিনি।
মিয়ানমারে রাখাইনসহ, শান, কোচিন ও অন্যান্য রাজ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর চালানো নৃশংসতা বন্ধে আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগ, রাজনৈতিক ও আইনি সমর্থন দেয়ার জন্য নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি অনুরোধ জানান রাজিয়া সুলতানা।
সঙ্ঘাতপূর্ণ এলাকায় যৌন সহিংসতা বিষয়ক জাতিসঙ্ঘের বিশেষ দূত প্রামিতা প্যাটার্ন বলেন, জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের নতুন প্রতিবেদনে মিয়ানমারসহ অন্যান্য দেশে যৌন সহিংসতাকে যুদ্ধের কৌশল ও রাজনৈতিক দমন-পীড়নের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করার চিত্র ফুটে উঠেছে।
তিনি বলেন, সঙ্ঘাতকালিন ধর্ষন বন্ধে অপরাধীদের জরুরিভিত্তিতে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
যৌন সহিংসতার শিকার নারীদের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে একটি বিশেষ তহবিল গঠনের আহ্বান জানান জাতিসঙ্ঘের বিশেষ দূত।
দৈনিক দেশজনতা/ টি এইচ