২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৩:০৬

জাতিসংঘের কালো তালিকায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

রোহিঙ্গাদের ওপর যৌন সহিংসতা চালানোর দায়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেজ নিরাপত্তা পরিষদে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে ‘সমষ্টিগতভাবে শাস্তি’ দেয়ার কৌশলের অংশ হিসেবে যৌন নিপীড়ন চালানো হয় বলে মন্তব্য করা হয়েছে এ প্রতিবেদনে। সোমবার নিরাপত্তা পরিষদে সঙ্ঘাতপূর্ণ এলাকায় যৌন সহিংসতারোধ বিষয়ক বৈঠকে এই প্রতিবেদন তুলে ধরা হবে।

নিরাপত্তা পরিষদে পাঠানো জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রতিবেদন আগাম হাতে পাওয়ার দাবি করে এ খরব দিয়েছে মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি। জাতিসংঘের কালো তালিকায় আওতায় আনা হয়েছে বিভিন্ন দেশের সরকার, বিদ্রোহী ও চরমপন্থী ৫১টি গ্রুপকে। এতে সঙ্ঘাতপূর্ণ অঞ্চলে যৌন সহিংসতা প্রতিরোধের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

নিরাপত্তা পরিষদে পাঠানো প্রতিবেদনে অ্যান্তোনিও গুতেরেজ বলেছেন, আন্তর্জাতিক চিকিৎসাকর্মীরা বাংলাদেশে পালিয়ে আসা প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে অনেকের ওপর শারীরিক ও নৃশংস যৌন নির্যাতনের মানসিক ভীতি বহনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছেন। মিয়ানমারের সশস্ত্রবাহিনী স্থানীয় মিলিশিয়াদের সাথে নিয়ে এই নিপীড়ন চালিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ২০১৬ সালের অক্টোবর ও ২০১৭ সালের আগস্টে সামরিক বাহিনীর ক্লিয়ারেন্স অপারেশনের সময় এসব নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে।

মহাসচিব বলেন, এসব কর্মকান্ড রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিপীড়ন, ভয় দেখানো আর সমষ্টিগতভাবে শাস্তি দেয়ার কৌশলের অংশ ছিল। পরিকল্পিত নিপীড়নের মাধ্যমে নিজ মাতৃভূমি থেকে বিতাড়িত করে রোহিঙ্গাদের ফেরার পথ বন্ধ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, যৌন সহিংসতার শিকার বেশিরভাগই ছিলেন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা নারী ও কিশোরী। দূরবর্তী ও গ্রামীণ এলাকায় বসবাস করা এসব ভিকটিমদের সাহায্য পাওয়ার কোনো সুযোগও ছিল না। নিপীড়নের হাত থেকে গর্ভবতী নারীরাও রোহাই পায়নি। রোহিঙ্গাদের উচ্চহারে গর্ভধারণের প্রবণতা সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠির জন্য হুমকি হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে।

জাতিসংঘের কালো তালিকার আওতায় এসেছে কঙ্গোর সশস্ত্র বাহিনী ও জাতীয় পুলিশসহ ১৭টি, সিরিয়ার সশস্ত্রবাহিনী ও গোয়েন্দা বিভাগসহ সাতটি, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক ও দক্ষিন সুদানের ছয়টি, মালির পাঁচটি, সোমালিয়ার চারটি, সুদানের তিনটি এবং ইরাক ও মিয়ানমারের একটি গ্রুপ। মিয়ানমারে কেবলমাত্র সশস্ত্রবাহিনীকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এর বাইরে তালিকায় রয়েছে বোকো হারাম, যারা একাধিক দেশে সন্ত্রাসবাদী কর্মকান্ড পরিচালনা করে।

গুতেরেজ বলেন, গণধর্ষনের অধিকাংশ ঘটনায় অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। যৌন সহিংসতার অভিযোগে ইসলামি স্টেট (আইএস) বা বোকো হারামের একজন সদস্যকেও আজ পর্যন্ত বিচারের আওতায় আনা যায়নি।

এর আগে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংসতা চালানোর অভিযোগে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েন মিয়ানমার সেনাবাহিনীর শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তা।

গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্বপরিকল্পিত ও পদ্ধতিগতভাবে রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংস অভিযান চালায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী। নিরাপত্তা চৌকিতে বিদ্রোহী গ্রুপ আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মির (আরসা) হামলাকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযানের কারণ বলে জানায় দেশটির সেনাবাহিনী।

মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল (আই ই) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে জানায়, সামরিক বাহিনী প্রচারণার মাধ্যমে সেখানকার সমাজকে রোহিঙ্গাবিদ্বেষী করে তুলেছে। আর সমাজের অভ্যন্তরে ছড়িয়ে পড়া সেই বিদ্বেষই রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞের কারণ।

জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দিতে এবং তাদের ফেরার সমস্ত পথ বন্ধ করতে আরসার হামলার আগে থেকেই পরিকল্পিত সেনা অভিযান শুরু হয়েছিল। রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়ে পোড়ামাটি নীতিতে চালানো এ অভিযানকে জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের প্রধান জাতিগত নিধন হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন।

দৈনিক দেশজনতা/ টি এইচ

 

প্রকাশ :এপ্রিল ১৫, ২০১৮ ৭:৪৮ অপরাহ্ণ