বিনোদন ডেস্ক:
পয়লা বৈশাখে বাঙালি অতীত ভুলে নতুনের আবাহনে মেতে ওঠে। উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্য দিয়ে দিনটি পালিত হয়। কিন্তু আমার মনে হয়, বৈশাখের মূল আনন্দ বৈশাখী মেলা। এর বাইরে মজার আর কিছু দেখি না। মানুষের জীবনে সময় বিভিন্নভাগে ভাগ করা থাকে। ছোট সময়ের এক অনুভূতি, আবার যখন একটু বড় হয়েছি তখন অন্যরকম অনুভূতি, আবার এখনকার একটা অনুভূতি। সময় পরিবর্তনের সঙ্গে অনুভূতির পরিবর্তন হচ্ছে।
একটা সময় যা করতে পারতাম এখন তা করতে পারি না। ছোটবেলা একটা গাড়ি, একটা পুতুল বা একটা মাটির ঘোড়াতেই অনেক খুশি হতাম। তখন এগুলোই ছিলো বৈশাখ, এগুলোই ছিলো বৈশাখী আনন্দ। এখন একটা বেলি ফুলের মালা, লাল পাড়ের সাদা শাড়ি পরব, হাতভর্তি চুড়ি; একটু ঘুরতে বের হবো-দিনটি আনন্দে কেটে যাবে। সত্যি বলতে আমাদের এই ঐতিহ্য আমরা এখনও ধারাবাহিকভাবে মেনে যাচ্ছি। এটা কিন্তু প্রকৃত আনন্দ না। প্রকৃত আনন্দ হচ্ছে নানুর হাত ধরে মেলায় ঘুরতে যাওয়া। মেলায় বাঁশি বাজবে, বাতাসা খাব, নাগরদোলায় উঠবো, চিৎকার দেব-এটাই মজা, এটাই আনন্দ! রোলার কোস্টারে তো নাগরদোলার সেই আনন্দ নেই।
মনে পড়ছে, বৈশাখের মেলায় গিয়ে নানুর হাত ধরে রাখতাম যেন হারিয়ে না যাই। মেলায় উচ্চ স্বরে মাইক বাজতো, গান-বাজনা হতো, রঙিন ফিতা উড়তো, ঢোল বাজতো, বাঁশি বাজতো- এগুলো খুব মিস করি। বাতাসা বেশি খাওয়া যাবে না, দাঁতে পোকা ধরবে, বাতাসা গলে সেই রস জামায় মেখে যেত। আঠা আঠা হয়ে যেত সব। বাড়ি ফিরে এজন্য বকা খেতে হতো। লাঠি চকলেট ছিলো রং করা। খেলে জিহবা, ঠোঁটে লেগে যেত।
মেলা থেকে যেসব খেলনা কিনে দিত নানু এগুলো কেউ চুরি করতো না বা হারিয়ে যেত না। কিন্তু কিছুদিন গেলে আমি নিজেই ইচ্ছে করে ভেঙে ফেলতাম। ভাঙতে ভালো লাগতো। এটাই আমার খেলা ছিলো। একটু বড় হওয়ার পর মেলায় গেলে ছেলেরা ফিরে ফিরে তাকাতো। সে সময় নাগরদোলার সবাইকে নামিয়ে দিয়ে একা উঠতাম। এটা ওদের দেখানোর জন্য করতাম।
এখন দায়িত্ব পালন করতে করতে বৈশাখ চলে যায়। বলা যায় দায়িত্বময় বৈশাখ। বন্ধুদের আবদার রাখতে হয়। তাদের আবদার থাকে যেমন আমার হাতের ইলিশ ভাজা, আমার হাতের রান্না-এইসব। এগুলো উপভোগ করি। এখন মেলার অনুষ্ঠানে পারমর্ফ করার আমন্ত্রণ পাই। সবাইকে বিনোদন দিতে হবে। সবাইকে বিনোদন দিচ্ছি কিন্তু আমি কতটা পাচ্ছি সেটাই এখন দেখার বিষয়। এখন বৈশাখ অনেকটা ফেসবুককেন্দ্রিক হয়ে গেছে।