নিজস্ব প্রতিবেদক:
সবাইকে কাঁদিয়ে বীরপ্রতীক হামিদুল হক ইন্তেকাল করেছেন। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাইহি রাজিউন)। বৃহস্পতিবার ভোর সোয়া ৪টায় রাজধানীর মালিবাগে ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালে চিকিৎসাধীন তার মৃত্যু হয়। বীরপ্রতীক হামিদুল হকের ছেলে ওবাইদুল ইসলাম বলেন, ভোরে চিকিৎসাধীন থেকে বাবার মৃত্যু হয়। সকালে মরদেহ নিয়ে বাড়ির পথে রওনা হয়েছি। সেখানে জানাজা শেষে দাফন হবে।
সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের প্রধান নির্বাহী (সিইও) প্রিন্সিপাল অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ বলেন, বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। ফুসফুসে সমস্যা থাকায় অক্সিজেনও নিতে পারছিলেন না। আজ ভোরে হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে তার মৃত্যু হয়। এর আগে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি ও ফুসফুসের বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। গত ২৭ মার্চ ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালে ভর্তি করা হয় হামিদুল হককে। ভর্তির পর তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে গত ১ এপ্রিল আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়।
উল্লেখ্য, গত ২৫ মার্চ ‘অর্থাভাবে চিকিৎসা পাচ্ছেন না বীর প্রতীক হামিদুল হক’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল লিমিটেডের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার ( সিইও) ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) মহাসচিব প্রিন্সিপাল অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজের নজরে আসলে বীর প্রতীকের চিকিৎসার দায়িত্বভার নেন তারা।
গত ২৭ মার্চ ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। গত ২৮ মার্চ হামিদুল হকের শারীরিক পরীক্ষা করা হলে ধরা পড়ে নানা ধরণের রোগ। তার শরীরে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনিতে সমস্যা, প্রটেস্ট বড় হওয়া, পটাসিয়ামের পরিমান কম থাকা, লাঞ্চে পানি জমে ঠান্ডা লাগা, শ্বাস কষ্টজনিত রোগ ও ফুসফুসে ইনফেকশনের সমস্যা ছিল।
১৯৭১ সালে স্থানীয় কচুয়া পাবলিক উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন হামিদুল হক। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শুনতে ৫ মার্চ ভোরে ঢাকার পথে রওনা দেন তিনি। বাল্যবন্ধু ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবদুস সামাদের হলে গিয়ে উঠেন তিনি। ৭ মার্চ ভোরে চলে যান রেসকোর্স ময়দানে (এখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান)। ঐতিহাসিক সেই ভাষণে অনুপ্রাণিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে। যোগ দেন টাঙ্গাইলের কাদেরিয়া বাহিনীতে। কালিহাতীসহ বেশকিছু স্থানে যুদ্ধ করেন।
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য হামিদুল হককে বীরপ্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তার বীরত্বভূষণ নম্বর ৪২২। তিনি ১৯৭২ ও ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার দেখাও করেছেন। ১৯৯০ সালে সখীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে বিজয়ী হন। তার বাবার নাম হাবিল উদ্দিন, মা কছিরন নেসা, স্ত্রী রোমেচা বেগম। তাদের চার মেয়ে, এক ছেলে। দীর্ঘ কর্মময় জীবনে মানুষটি শিক্ষকতা করেছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। জ্ঞানের আলো ছড়িয়েছেন। অর্থ-সম্পদের পেছনে ছোটেননি কখনো। চাননি তেমন কিছুই। সবার কাছ থেকে পেয়েছেন সম্মান-শ্রদ্ধা। তাতেই তুষ্ট ছিলেন।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি