আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, সিরিয়ায় মার্কিন সেনার উপস্থিতি অব্যাহত রাখতে চাইলে সৌদি আরবকে এর জন্য অর্থ দিতে হবে। অথচ এর আগে সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছিলেন ট্রাম্প। মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনেও একই কথা বলেন তিনি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘সিরিয়া থেকে তার দেশের সব সেনা প্রত্যাহার এবং এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হতে চান তিনি।’ সিরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহার নিয়ে ভিন্ন মত দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা দফতর। খবর আলজাজিরার।
সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য হল সিরিয়া থেকে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের মূলোৎপাটন করা। আমরা এই মিশনের সমাপ্তিতে উপনীত হয়েছি। এ বিষয়ে অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।’ প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের সেনারা দেশে ফিরে আসুক। কিন্তু সৌদি আরব এ সিদ্ধান্তের কারণে চিন্তিত। এ জন্য আমি তাদের বলেছি, আপনারা যদি সিরিয়ায় মার্কিন সেনা চান তবে অর্থায়ন আপনাদেরই করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘গত ১৭ বছরে ৭ লাখ কোটি ডলার খরচ করা হয়েছে। আমরা কিছুই পাইনি। মৃত্যু ও ধ্বংস ছাড়া কিছুই পাইনি। এটি খুবই ভয়ানক। তাই এটাই সময় সেনা প্রত্যাহারের।’
এর আগে সৌদি যুবরাজ মুহাম্মাদ বিন সালমান বলেছিলেন, সিরিয়ায় ইরানের কর্তৃত্ব দমানোর জন্য মার্কিন সেনাদের উপস্থিতি জরুরি। ট্রাম্প যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনা ফিরিয়ে নিতে চাইলেও ভিন্ন মত প্রকাশ করেছে পেন্টাগন ও পররাষ্ট্র দফতর। দুই দফতরের শীর্ষ কর্মকর্তারা এ ইস্যুতে সম্পূর্ণ ভিন্ন নীতি নিয়েছেন। তারা বলছেন, সিরিয়ায় মার্কিন সেনাদের মিশন শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেনা ফিরিয়ে নেয়া হবে না। মঙ্গলবার ওয়াশিংটন ডিসির একটি ফোরামে বক্তৃতায় মার্কিন কেন্দ্রীয় কমান্ডের প্রধান জেনারেল জোসেফ ভোটেল বলেন, ‘যদিও আইএসের কবল থেকে ইরাক ও সিরিয়ার শতকরা ৯০ শতাংশ ভূমি উদ্ধার করা হয়েছে তার পরও সেখানে মার্কিন সেনা উপস্থিতির দরকার রয়েছে।
এখনও এমন কিছু এলাকা রয়েছে যেখানে আইএসের উপস্থিতি ও তৎপরতা রয়েছে।’ পররাষ্ট্র দফতরের শীর্ষ দূত ব্রেট ম্যাকগুর্ক বলেন, ‘আইএস এখনও শেষ হয়ে যায়নি। আমরা সিরিয়ায় গিয়েছি আইএসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য কিন্তু আমাদের মিশন এখনও শেষ হয়নি।’ মার্কিন কর্মকর্তারা সিরিয়ায় আইএসবিরোধী লড়াইয়ের দাবি করলেও বাস্তবতা হচ্ছে- সেখানে মার্কিন হামলায় আইএসের বড় কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর নেই। বরং মার্কিন বিমান হামলায় ইরাক ও সিরিয়ায় হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। এমনকি ইরাক ও সিরিয়ার বহু সেনাও মারা গেছেন। মার্কিন নির্লিপ্ততার কারণেই রুশ সামরিক বাহিনী সিরিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয়েছে।
মেক্সিকো সীমান্তে সেনা মোতায়েনের পরিকল্পনা ট্রাম্পের : মেক্সিকো সীমান্তে সেনা মোতায়েনের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের আগ পর্যন্ত সীমান্তের নিরাপত্তায় ওই সেনা সদস্যরা মোতায়েন থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি। গত মঙ্গলবার বাল্টিক নেতাদের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজের সময় ট্রাম্প এ কথা বলেন। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিসের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, সেনা মোতায়েনের এ সিদ্ধান্তকে ‘বড় পদক্ষেপ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
দ্য গার্ডিয়ান বলেছে, মেক্সিকো সীমান্তে সেনা মোতায়েনের ঘটনা অবশ্য নতুন নয়। ট্রাম্পের আগের প্রশাসনের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ২০১০ সালে সীমান্ত সুরক্ষা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এক বছরের জন্য সেখানে ন্যাশনাল গার্ডের ১২০০ সেনা পাঠিয়েছিলেন। এর আগের প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ২০০৬ সালে সেখানে পাঠিয়েছিলেন ৬ হাজার সেনা। তারা দুই বছর মোতায়েন ছিল।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি