নিজস্ব প্রতিবেদক:
আজ থেকে শুরু হচ্ছে উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা । এবার ১৩ লাখ ১১ হাজার ৪৫৭ জন শিক্ষার্থী অংশ নেবে। গত কয়েক বছর ধরে পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রশ্নপত্রের নিরাপত্তাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে ডিজিটাল পদ্ধতিসহ নানা কৌশল নিয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সরকারের মাঠ প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং শিক্ষা বোর্ডগুলো পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের এবার সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলেছে।
পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে প্রবেশ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ৩০ মিনিট পরে যারা ঢুকতে চাইবে তাদের নাম রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর তালিকাভুক্ত করে রাখা হবে। কোনো শিক্ষার্থী বার বার দেরি করলে তাকে দ্বিতীয় বা তৃতীয় দিন থেকে পরীক্ষা দিতে দেয়া হবে না। এমনকি তাকে আটক করা হতে পারে। পরীক্ষা কেন্দ্রের ২শ’ গজের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি থাকবে এবং স্থানীয় প্রশাসনকে তা কঠোরভাবে কার্যকর করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ে সন্দেহভাজন লেনদেন হলে থানায় জানাতে হবে।
প্রশ ফাঁস ঠেকাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। পরীক্ষার ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীদের নিজের সিটে বসতে হবে। শিক্ষার্থী প্রবেশের পর প্রশ্নের সেট লাটারির মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে নির্ধারণ করে পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে জানিয়ে দেয়া হবে। প্রশ্নের ট্রাংক সিলগালা ছাড়াও বিশেষ ডিভাইস থাকবে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন। ট্রেজারি থেকে প্রশ্ন কেন্দ্রে পরিবহনে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ট্রেজারি বা থানা থেকে কেন্দ্রে দূরত্ব বিবেচনা করে প্রশ্ন সরবরাহ করা হবে। প্রত্যেক কেন্দ্রের জন্য একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বা দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নিয়োজিত থাকবেন। ট্রেজারি থেকে প্রশ্ন বহনকালে ম্যাজিস্ট্রেট বা ট্যাগ (সংযুক্ত) অফিসারের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ট্রেজারি বা থানা থেকে কেন্দ্র সচিবসহ পুলিশ পাহারায় কেন্দ্রে প্রশ্নপত্র পৌঁছানো হবে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বা দায়িত্বশীল কর্মকর্তা, কেন্দ্রসচিব ও পুলিশ কর্মকর্তার উপস্থিতিতে বিশেষ নির্দেশনা মেনে প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খুলতে হবে। বৃহস্পতিবার থেকে পরীক্ষা সামনে রেখে এইচএসসি পর্যায়ের কোচিং সেন্টার বন্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা বাস্তবায়নে ঢাকার বাইরে কোথাও কোথাও অভিযান চালানো হচ্ছে। পিরোজপুরে ১১টি কোচিং সেন্টারে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু ঢাকাসহ দেশের বেশিরভাগ জায়গায় কোচিং সেন্টার খোলা রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
কেন্দ্র সচিব ছাড়া অন্য কেউ মোবাইল ফোন বা কোনো ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করতে পারবেন না। কেন্দ্র সচিব মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারলেও তা স্মার্টফোন হতে পারবে না। শিক্ষার্থীরা যাতে নকল করতে না পারে সে জন্য কেন্দ্র সচিবদের প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা বোর্ডগুলো।
এ প্রসঙ্গে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয়ক কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিয়াউল হক বলেন, প্রশ্নফাঁস ঠেকতে সব ধরনের আগাম ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পরীক্ষার দিন সকালে লটারি করে প্রশ্নপত্রের সেট নির্ধারণ করা হবে। পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে জেলা প্রশাসকে জানিয়ে দেয়া হবে। তিনি সে অনুসারে প্রশ্ন সেট কেন্দ্র সচিবদের জানিয়ে দেবেন। তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী এরই মধ্যে প্রত্যেক কেন্দ্রের জন্য পৃথক খাম ও পৃথক সেটে সিকিউরিটি টেপ দিয়ে আটকানো হয়েছে। জেলা প্রশাসকরা ট্রেজারিতে এ কাজ সম্পন্ন করেছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার/নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে সিকিউরিটি টেপ লাগানো হয়েছে। তাদের উপস্থিতিতে কেন্দ্র সচিব তা খুলবেন। এতে তাদের যৌথ স্বাক্ষর থাকতে হবে।
ঢাকা বোর্ড চেয়ারম্যান আরো জানান, পরীক্ষার্থীদের সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে নিজ নিজ কেন্দ্রে পৌঁছে পরীক্ষায় বসতে হবে। বিকেলে পরীক্ষা থাকলে একইভাবে পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে আসনে বসতে হবে। কোনো পরীক্ষার্থী সময়মতো কেন্দ্রে প্রবেশ না করলে তাকে পরীক্ষা শুরুর আগ পর্যন্ত ঢুকতে দেয়া হবে। তবে ওই পরীক্ষার্থীকে কেন্দ্র সচিবের কাছে রাখা রেজিস্ট্রার খাতায় নিজের নাম, প্রতিষ্ঠান, রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর, নিজ ঠিকানা লিখতে হবে। কেন্দ্র সচিব এ তথ্য স্থানীয় থানা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেবেন। দেরিতে কেন্দ্রে পৌঁছানো শিক্ষার্থীদের তথ্য এবারই প্রথমবারের মতো তালিকাভুক্ত করা হবে।
দৈনিক দেশজনতা/ টি এইচ