নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে দেশি পেঁয়াজের দাম আরও কমেছে। খুচরা বাজারে ৩২-৩৫ টাকা এবং পাইকারি বাজারে ২৭-২৮ টাকা কেজি পাওয়া যাচ্ছে দেশি পেঁয়াজ। এক সপ্তাহ আগেও খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজারের কিজি ছিল ৪০ টাকা। আর পাইকারিতে ছিল ৩০ টাকার ওপরে।
এদিকে পেঁয়াজারের পাশাপাশি কাঁচামরিচ এবং বিভিন্ন ধরণের সবজি গত কয়েক সপ্তাহের মতো ক্রেতাদের নাগালের মধ্যেই রয়েছে। বেশির ভাগ সবজির কেজি এখন ২০-৩০ টাকার মধ্যে। তবে কয়েকটি সবজির দাম ৪০ টাকার ওপরে রয়েছে।
শুক্রবার কারওয়ানবাজার, শান্তিনগর, রামপুরা, মালিবাগ হাজীপাড়া এবং খিলগাঁও অঞ্চলের বিভিন্ন বাজার ঘুরে এবং ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে এখন সব ধরণের পেঁয়াজ-মরিচের সরবরাহ বেড়েছে। নতুন দেশি পেঁয়াজের পাশাপাশি ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজে বাজার ভরপুর। তবে পেঁয়াজের দাম কমাতে সব থেকে বেশি ভূমিকা রেখেছে মেহেরপুরের পেঁয়াজ।
ব্যবসায়ীদের মতে, বাজারে দেশি পেঁয়াজারের কেজি যখন ১০০ টাকার ওপরে চলে যায়, তার কিছুদিন পরেই মেহেরপুরের পেঁয়াজ বাজারে আসতে থাকে। লালচে-কালো রঙের এই পেঁয়াজ বাজারে আসার পর থেকেই পেঁয়াজের আকাশচুম্বী দামে ছেদ পড়ে। দেখতে দেখতে ১০০ টাকা থেকে পেঁয়াজারের কেজি নেমে এসেছে ৪০ টাকার নিচে।
ব্যবসায়ীরা বলছে, প্রথম যখন মেহেরপুরের পেঁয়াজ বাজারে তখন এর দাম ছিল ৫০-৬০ টাকা। এরপর ধিরে ধিরে কমতে কমে এখন এই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে। যার প্রভাব পড়ে অন্য পেঁয়াজেও। যে কারণে ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ৯০ টাকা থেকে কমে এখন ২৫ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
হাজিপড়া বৌ-বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা নতুন দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ৩৫ টাকা কেজি দরে। আর ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ২৫ টাকা কেজি দরে। ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে মেহেরপুর থেকে আসা নতুন পেঁয়াজ।
এ বিষয়ে বাজারটির ব্যবসায়ী মো. জামাল হোসেন বলেন, ভারতের পেঁয়াজ এবং মেহেরপুরের পেঁয়াজের দাম গত সপ্তাহ যা ছিল এখন তাই রয়েছে। তবে দেশে পেঁয়াজের দাম কমেছে। আড়ত থেকে কম দামে দেশি পেঁয়াজ আনতে পারছি, সে কারণে আমরাও কম দামে বিক্রি করতে পারছি।
কারওয়ানবাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী হাসান মিয়া বলেন, ভালো মানের দেশি পেঁয়াজের এখন বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা পাল্লা দরে। অর্থাৎ প্রতিকেজির দাম সর্বোচ্চ ২৮ টাকা। এক সপ্তাহ আগেও এই পেঁয়াজের পাল্লা বিক্রি করেছি ১৬০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কেজির দাম ৩২ টাক।
পেঁয়াজের এমন দাম কমার বিষয়ে এই ব্যবসায়ী বলেন, মেহেরেপুরের পেঁয়াজের কারণেই এমন দাম কমেছে। বাজার এখন মেহেরপুরের পেঁয়াজে ভরপুর। এই পেঁয়াজ আকারে বড় হলেও এর সাদ অনেকটা দেশি পেঁয়াজের মতো। যে কারণে স্বল্প আয়ের মানুষ কম দামে এই পেঁয়াজ কিনছে। যে কারণে দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজের চাহিদা কমে গেছে। ফলে দামও কমেছে। তবে এক শ্রেণির ক্রেতা আছেন যারা দেশি পেঁয়াজই কিনেন। কারণ মেহেরপুরের পেঁয়াজ দেখতে কিছুটা কালো রঙের। ফলে অনেকের ধারণা এই পেঁয়াজ দিয়ে রান্না করলে তরকারির রঙ কালো হয়ে যাবে।
এদিকে কারওয়ানবাজারে এক কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে। যা রামপুরা, খিলগাঁও, মালিবাগ অঞ্চলের বাজারগুলোতে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
মরিচের দামের বিষয়ে খিলগাঁও তালতলা বাজারের মো. কামাল বলেন, কয়েক সপ্তাহ ধরেই কাঁচামরিচের দাম কম। এখন এক পোয়া কাঁচামরিচ ১০ টাকা পাওয়া যাচ্ছে। আর কেজি নিলে দাম আরও কিছু কম রাখা যাবে।
পেঁয়াজ-মরিচের পাশাপাশি অধিকাংশ সবজির দামও এখন বেশ কমই আছে। তবে বাজারে নতুন আসা সজনের ডাটার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকায়। বাজারে এই সবজিটির দামই সব থেকে বেশি। এছাড়া কেজি ৩০ টাকার ওপরে থাকা সবজির মধ্যে পটল বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা কেজি। একই দামে বিক্রি হচ্ছে বরবটি ও ঢেড়স। এক সপ্তাহের ব্যবধানে এই সবজিগুলোর দাম কেজিতে ১০ টাকার মতো কমেছে।
আর কম দামের সবজির মধ্যে লাউ আগের সপ্তাহের মতোই ২৫ থেকে ৩৫ টাকা পিচ বিক্রি হচ্ছে। তবে কিছুটা দাম বেড়েছে পাকা টমেটোর। গত সপ্তাহে ১৫-২০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পাকা টমেটো এখন বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকা কেজি দরে।
গত সপ্তাহে ২০-৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া বেগুনের দাম কমে এখনো ২০-৩০ টাকায় রয়েছে। শিমও আগের সপ্তাহের মতোই ৩০-৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া গাজর ২০ টাকা, শশা ২০ টাকা, ছোট আকারের কাঁচা মিষ্টি কুমড়া ২৫-৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা পেপে বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকা কেজি দরে।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ