স্বাস্থ্য ডেস্ক:
চিকিৎসাবিষয়ক জার্নাল ল্যানচেটের এক গবেষণা বলছে, ভারতে পুরুষের তুলনায় মেয়েদের ক্যান্সার ধরা পড়ছে বেশি। বিশ্বজুড়ে যেখানে মেয়েদের তুলনায় পুরুষের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা ২৫ শতাংশ বেশি। সেখানে ভারতে উল্টো চিত্র। তবে ভারতে মেয়েদের তুলনায় পুরুষরা ক্যান্সারে মারা যান বেশি। কারণ ভারতে ৭০ শতাংশ মেয়েদের স্তন, সার্ভিক্যাল(গর্ভাশয়), ডিম্বাশয় ও জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্তের ঘটনা দেখা যায়।-খবর বিবিসি অনলাইন।
সেসব ক্ষেত্রে চিকিৎসার মাধ্যমে বেঁচে থাকা সম্ভব। আর দেশটির পুরুষরা মূলত ফুসফুস ও মুখের ক্যান্সারে ভোগেন। দুটিই ধূমপান ও তামাক ব্যবহারের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রাণঘাতী ও বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ। বলা হচ্ছে, ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে প্রতি বছর প্রায় ৯০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। ভারতে মেয়েদের মধ্যে এখন সবচেয়ে বেশি দেখা যায় স্তন ক্যান্সারের সমস্যা, যা সেখানকার মেয়েদের ২৭ শতাংশ ক্যান্সারের জন্য দায়ী। গত কয়েক বছরে যার হার বেড়েছে।
মেয়েদের স্তন ও ডিম্বাশয়ে ক্যান্সারের ঘটনাগুলো বেশি দেখা দেয় ৪৫-৫০ বছরের দিকে। উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে তা ষাট বছরের দিকে দেখা যায়। জিনগত ও পরিবেশগত কারণে সেটি হতে পারে। ক্যান্সার অনেকসময় জিনগত রোগ হিসেবে হয়ে থাকে। যে কারণে অনেক পরিবারে একাধিক মানুষের মধ্যে স্তন ক্যান্সার দেখা যায়। কিন্তু ভারতে যে স্তন ক্যান্সার হচ্ছে, তার ১০ শতাংশের নিচে হচ্ছে উত্তরাধিকার সূত্রে। ফলে মেয়েদের বেশিরভাগ ক্যান্সারের কারণ অনুসন্ধানে জিনগত স্ক্রিনিং খুব একটা কাজে আসবে না।
এরপর অঞ্চলগত বৈচিত্র্য রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, স্তন ক্যান্সারের ঘটনা বেশি দেখা যায় রাজধানী দিল্লিতে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা এর কারণ বলতে পারছেন না। তারা শুধু সচেতনতা বৃদ্ধি ও রোগ পরীক্ষার হার বৃদ্ধির বিষয়ে ধারণা দিচ্ছেন।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ক্যান্সার প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চের পরিচালক ও গবেষক ড. রবি মেহরোত্রা বিশ্বাস করেন, স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকির কারণগুলো হচ্ছে- চর্বিযুক্ত খাবার, স্থূলতা, দেরিতে বিয়ে, কম সন্তান সংখ্যা, প্রসবের পর পর্যাপ্ত বুকের দুধ না খাওয়ানো। তিনি আরও বলেন, অনেক মেয়ের ক্ষেত্রেই ক্যান্সার দেরিতে ধরা পড়ে সচেতনতার অভাবে এবং চিকিৎসকের কাছে যেতে অনিচ্ছার কারণে।
কিন্তু আমেরিকায় ৮০ শতাংশ স্তন ক্যান্সার প্রাথমিক ও দ্বিতীয় স্তরেই নির্ণয় করা সম্ভব হয়। অন্যদিকে ভারতে বেশিরভাগ স্তন ক্যান্সার ধরা পড়ে তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপে গিয়ে।
ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তরা পাঁচ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকেন। যেটি সহজে মোকাবেলা করা সম্ভব। সার্ভিক্যাল ক্যান্সার মূলত হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস বা এইচপিভি থেকে সৃষ্ট। ভারতে মেয়েদের ২৩ শতাংশ এই ক্যান্সারে আক্রান্ত।
২০০৮ সাল থেকে ১১-১৩ বছরের মেয়েদের এইচপিভি ভাইরাসের টিকা কর্মসূচি শুরু হয়। বিশ্বজুড়েই এ ভাইরাসের দ্বারা ক্যান্সার আক্রান্তের ঘটনা কমে এসেছে। ভারতে এখন দিল্লি এবং পাঞ্জাবেই কেবল এইচপিভি ভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি বহাল রয়েছে। তবে ভারতে এখনও মেয়েদের ক্ষেত্রে সার্ভিক্যাল ক্যান্সার বা গর্ভাশয়ের ক্যান্সার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। ক্যান্সারে আক্রান্ত মেয়েদের এক-চতুর্থাংশের মৃত্যুর কারণ এটি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি সব ধরনের ক্যান্সারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রতিরোধ যোগ্য। গর্ভাশয়ের ক্যান্সারে কোনো মেয়েদের মৃত্যু কাম্য নয়। সে জন্য প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে আরও খোলামেলা ও জোরালোভাবে কথাবার্তা বলতে হবে। সেই সঙ্গে এইচপিভিকেও সরকারের বিনামূল্যে গণটিকা কর্মসূচির আওতায় আনতে হবে। ল্যানচেট ক্যান্সার বিষয়ে ভারতের পাঞ্জাবের মেয়েদের নিয়ে এবং যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী পাঞ্জাবিদের নিয়ে সমান্তরালভাবে গবেষণারও পরামর্শ দিয়েছে। ফলে ক্যান্সারের ক্ষেত্রে জিনগত ও পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে গবেষণার সুযোগ তৈরি হবে বলে তারা মনে করছে। ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ড. মেহরোত্রা বলছেন, কিছু অগ্রগতি হচ্ছে। তবে অনেক প্রশ্নের সমাধান পেতে এখনও লম্বা পথ পেরোনো বাকি।
দৈনিকদেশজনতা / আই সি