স্বাস্থ্য ডেস্ক:
কোন রোগ কোন মানুষের ওপর কোন ধরনের প্রভাব ফেলবে তা অনুমান করা কঠিন হলেও গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন যে, কিছু রোগ পুরুষদের চেয়ে নারীদের বেশি প্রভাবিত করে এবং এসব রোগে নারী মৃত্যুহার পুরুষ মৃত্যুহারের চেয়ে বেশি।
এ কারণে এসব রোগ সম্পর্কে নারীদের সচেতন থাকা প্রয়োজন। কোন রোগ নারীদের জন্য মারাত্মক তা জানা থাকলে নারীরা তাদের স্বাস্থ্যকে রক্ষা করতে সর্বোত্তম সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। ডা. নেসোশি ওকেকে ইগবোকোয়ে বাসল ডটকমকে বলেন, ‘কেন নারীদের কিছু রোগ বেশি হয় তার পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে।’ তিনি যোগ করেন, ‘বায়োলজিক্যাল এবং অ্যানাটমিক্যাল উভয় পার্থক্য অবশ্যই একটি ভূমিকা রাখতে পারে।….অ্যানাটমির পার্থক্য এবং এমনকি হরমোনগত পরিবর্তন এক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে।’
হৃদরোগ
গবেষণা অনুসারে, হৃদরোগে পুরুষের চেয়ে নারী বেশি মারা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন অনুসারে, চারজন নারীর মধ্যে একজন হৃদরোগে মারা যায়। মেডিক্যাল ডাক্তার শেরি রস বলেন, ‘নারী ও পুরুষদের ক্ষেত্রে হৃদরোগের ঝুঁকি সমান, কিন্তু এই অননুমেয় রোগে পুরুষের তুলনায় নারীর মারা যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।’ তিনি যোগ করেন, ‘নারীদের হার্ট অ্যাটাকের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত উপসর্গসমূহ তেমন স্পষ্ট নয়, যে কারণে তা নির্ণীত নাও হতে পারে। পুরুষদের মতো তাদের উপসর্গ স্পষ্ট নয় বলে ডায়াগনোসিস বিলম্ব হয়, যা হৃদরোগে বেশি নারী মারা যাওয়াতে সাহায্য করে।’ অনেক নারীদের ক্ষেত্রে কোনো উপসর্গ দেখা না দিলেও বুকে ব্যথা বা অস্বস্তি, শ্বাসকষ্ট অথবা অবসাদ অনুভূত হলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
টাইপ ১ ডায়াবেটিস
দ্য ল্যানসেট, ডায়াবেটিস অ্যান্ড এন্ডোক্রিনোলজিতে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে, টাইপ ১ ডায়াবেটিসে পুরুষদের তুলনায় ৩৭ শতাংশ বেশি নারী মারা যায়। এ প্রসঙ্গে নিউ ইয়র্ক সিটির অনলাইন ফার্মেসি ক্যাপসুলের চিফ ফার্মাসিস্ট সোনিয়া প্যাটেল বলেন, ‘গবেষকরা ধারণা করছেন যে পুরুষদের মতো নারীদের বেশি ইনসুলিন গ্রহণ না করা অথবা হরমোনের কারণে নারীদের অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অধিক জটিল হওয়ার সঙ্গে এর সম্পর্ক থাকতে পারে। যদি আপনার ডায়াবেটিসের লক্ষণ বা ডায়াবেটিস থাকে, তাহলে প্রেসক্রিপশন ওষুধ গ্রহণ করুন এবং অসংগত কিছু প্রকাশ পেলে ডাক্তারের কাছে যান।
অটোইমিউন ডিসঅর্ডার
শরীর নিজেই নিজেকে আক্রমণ করলে অটোইমিউন ডিসঅর্ডার হয়ে থাকে, যেমন- লুপাস, মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস ইত্যাদি। সোনিয়া প্যাটেল বলেন, ‘অটোইমিউন ডিসঅর্ডারে আক্রান্তদের ৭৮ শতাংশই নারী।’ তিনি যোগ করেন, ‘গবেষকরা ধারণা করেন যে, এর সঙ্গে হরমোনের অস্বাভাবিক হ্রাস-বৃদ্ধি এবং নারীদের মধ্যে পুরুষদের তুলনায় অধিক সক্রিয় ইমিউন প্রতিক্রিয়ার সম্পর্ক রয়েছে।’ যদি অটোইমিউন ডিসঅর্ডার ডায়াগনোসিস হয়, তাহলে ডাক্তার দ্বারা উপসর্গ মনিটর করুন এবং চিকিৎসা গ্রহণ করুন।
স্ট্রোক
বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এটাও পাওয়া যায় যে, নারীদের পুরুষদের তুলনায় বেশি স্ট্রোক হয়। প্যাটেল বলেন, ‘পুরুষদের চেয়ে নারীরা বেশি স্ট্রোকের শিকার হয় এবং নারী স্ট্রোক ভিকটিমদের মধ্যে মৃত্যহার ৬০ শতাংশ, যা পুরুষদের ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ।’ এরকম হওয়ার কারণগুলোর সঙ্গে সাধারণ হৃদরোগের কারণগুলোর সাদৃশ্য রয়েছে, যেমন- দীর্ঘ জীবন, কম মনোযোগী চিকিৎসা এবং হরমোন। নারীদের মধ্যে মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ হচ্ছে স্ট্রোক, তাই এর লক্ষণ সম্পর্কে অবগত হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। দুর্বলতা, মোটর ফাংশন বা গতিদায়ক কাজে সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ অথবা মাথাব্যথা থাকলে কালবিলম্ব না করে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন।
অ্যালকোহলের অপব্যবহার
নারীদের চেয়ে পুরুষেরা অ্যালকোহলের অপব্যবহার বেশি করলেও পুরুষদের তুলনায় নারীদের মারাত্মক সমস্যা বেশি হয়। ডাক্তার রস বলেন, ‘অ্যালকোহলের অপব্যবহারে নারীদের স্তন ক্যানসার, মস্তিষ্কের রোগ, যকৃতের রোগ এবং হৃদপিণ্ডের রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। অ্যালকোহলের অপব্যবহারে প্রণোদিত এসব দীর্ঘমেয়াদী সমস্যায় পুরুষদের চেয়ে নারীদের মৃত্যুর সম্ভাবনা বেশি।’ যদি আপনি অ্যালকোহলের অপব্যবহারে জড়িত থাকেন, তাহলে এর থেকে পরিত্রাণের পথ অনুসন্ধান করুন।
অ্যালজেইমার’স রোগ
স্মৃতিভ্রংশ জনিত রোগ অ্যালজেইমার’স সাধারণত বৃদ্ধদের মধ্যে দেখা দেয় এবং গবেষকরা সাজেস্ট করছেন যে, এ রোগে পুরুষদের তুলনায় নারীদের মৃত্যুর সম্ভাবনা বেশি। ফার্মাসিস্ট প্যাটেল বলেন, ‘অ্যালজেইমার’স নিয়ে অনেক গবেষণা চলমান থাকলেও ধারণা করা হচ্ছে যে, একটি শক্তিশালী কারণে নারীরা অ্যালজেইমার’স রোগে পুরুষদের চেয়ে বেশি ভুগে এবং কারণটি হচ্ছে ইস্ট্রোজেন যা নারীদের ব্রেইনকে ক্ষয় থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে, যেখানে পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন মেকানিজম কাজটি করে থাকে।’ তিনি যোগ করেন, ‘যখন মেনোপজের সময় ইস্ট্রোজেন কমে যায়, তখন নারীদের ব্রেইন অধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং অ্যালজেইমার’স বিকশিত হতে পারে।’
ফুসফুসের রোগ
নারীরা ফুসফুস রোগের উচ্চ ঝুঁকিতেও থাকতে পারে, যেমন- ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ বা (সিওপিডি), অ্যাজমা অথবা পালমোনারি ফাইব্রোসিস। ইমার্জেন্সি মেডিসিন এবং পিডিয়াট্রিক ইমার্জেন্সি মেডিসিনের চিকিৎসক আইরিন টিয়েন বাসল ডটকমকে বলেন, ‘নারীদের মধ্যে ফুসফুসের রোগ বিকশিত হওয়ার সম্ভাবনা অধিক এবং এসব রোগে নারী মৃত্যুহারও বেশি।’ এমনটা হওয়ার কারণ এখনো স্পষ্টভাবে জানা যায়নি।
দৈনিকদেশজনতা / আই সি