আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
যুক্তরাজ্যের মিত্ররা বিরল সংহতি দেখিয়ে একশো’র বেশি রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছে। হঠাৎ করে পশ্চিমা দেশের একজোট হয়ে এই পদক্ষেপে ব্যাপক চাপে পড়েছে রাশিয়া। গণহারে রুশ কূটনীতিক বহিষ্কারের জন্য দেশটি যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছে। মস্কোর দাবি, রুশ কূটনীতিকদের বহিষ্কারের জন্য ওয়াশিংটন বিভিন্ন দেশকে চাপ দিচ্ছে। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ অভিযোগ করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপের বিভিন্ন দেশকে ব্যাপকভাবে ব্ল্যাকমেইল করেছে। এই ঘটনার যথাযথ জবাব দেওয়া হবে। অবশ্যই এ ধরনের ধৃষ্টতা সহ্য করা হবে না। খবর:বিবিসি ও সিএনএন’র।
গত ৪ মার্চ ব্রিটেনে অবস্থানরত পক্ষত্যাগী সাবেক রুশ গুপ্তচর সেরগেই স্ক্রিপাল এবং তার মেয়ে ইউলিয়ার ওপর ‘মিলিটারি-গ্রেড নার্ভ এজেন্ট’ হামলা হয়। এই বিষ প্রয়োগ করে হত্যা চেষ্টার জন্য রাশিয়াকে দায়ী করে আসছে ব্রিটেন। এই ঘটনার ভয়াবহতা তুলে ধরে রাশিয়ার বিরুদ্ধে মিত্রদের ঐক্যবদ্ধ করতে পুরোপুরি সমর্থ হয়েছে দেশটি। ইতিমধ্যে ২০টির বেশি দেশ ১০০ এর বেশি রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছে যা ইতিহাসে সর্বোচ্চ। সবার আগে ব্রিটেন ২৩ রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে। ৬০ জন কূটনীতিক বহিষ্কারের আদেশ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এছাড়া ইউক্রেন ১৩, ফ্রান্স ৪, জার্মানি ৪, পোল্যান্ড ৪, কানাডা ৪, চেক প্রজাতন্ত্র ৩, লিথুয়ানিয়া ৩, ডেনমার্ক ২, নেদারল্যান্ডস ২, ইতালি ২, স্পেন ২, এস্তোনিয়া ১, ক্রোয়েশিয়া ১, ফিনল্যান্ড ১, হাঙ্গেরি ১, লাটভিয়া ১, রোমানিয়া ১, সুইডেন ১, আলবেনিয়া ২, অস্ট্রেলিয়া ২, নরওয়ে ১ এবং মেসিডোনিয়া ১ জন রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট পুতিনের সরকার সবার স্বার্থ ও রীতির বাইরে গিয়ে মহাদেশের ভেতরে ও বিশ্বব্যাপী বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। ইউরোপের একটি সার্বভৌম গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোর সাথে এই হুমকি প্রতিরোধ করবে। আইসল্যান্ড ঘোষণা দিয়েছে তারা রাশিয়ার সাথে উচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক আলোচনা স্থগিত করছে। তাদের রাষ্ট্রীয় নেতারা জুনে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টেও যাবে না বলে জানিয়েছে। অস্ট্রেলিয়াও ইঙ্গিত দিয়েছে যে তারা বিশ্বকাপ ফুটবল বয়কট করতে পারে। এ মাসের শুরুতে যুক্তরাজ্যও জানিয়েছে, তারা মন্ত্রী বা রাজপরিবারের সদস্যদের বিশ্বকাপে পাঠাবে না। ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টুস্ক বলেছেন, গত সপ্তাহের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রুশ কূটনীতিকদের বরখাস্ত করা হচ্ছে। আগামীতে আরো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। তবে অস্ট্রিয়া, গ্রিস ও পর্তুগাল জানিয়েছে তারা তাদের দেশ থেকে কোনো রুশ কূটনৈতিককে বহিষ্কার করবে না। তবে যুক্তরাজ্যের প্রতি পূর্ণ সমর্থন প্রকাশ করেছে তারা। অন্যদিকে চীন দেশগুলোকে স্নায়ুযুদ্ধের মানসিকতা ত্যাগ করতে আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এই আচরণকে ‘অবন্ধুত্বপূর্ণ’ উল্লেখ করে বলেছে, এ ব্যবস্থায় অংশ নেওয়া দেশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাশিয়ার উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রায়াবকভ বলেছেন, কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি, তারপরও মস্কো ওয়াশিংটনের সঙ্গে কৌশলগত স্থিতিশীল আলোচনা বন্ধ করবে না। প্রসঙ্গত, ১৯৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান স্নায়ুযুদ্ধকালে ৮০ জন রুশ কূটনৈতিক বহিষ্কার করেন। ২০১৬ তে বারাক ওবামা প্রশাসন মার্কিন নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে ৩৫ জন রুশ কূটনীতিক বহিষ্কার করে। যদিও মস্কো এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি