নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজধানীর হাতিরঝিলে তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) ভবনটি ভাঙতে যে সময় আবেদন করা হয়েছিল সে বিষয়ে আদেশ দেয়নি আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে বিজিএমইএ আর সময় চাইবে না এ সংক্রান্ত মুচলেকা চেয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।
মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চে বিষয়টি আদেশের জন্য তিন নম্বর কার্যতালিকায় ছিল।
বিজিএমইএর আইনজীবীকে উদ্দেশ্যে করে আদালত বলেছেন, ‘ভবন কতদিনের মধ্যে ভাঙবেন সে বিষয়ে মুচলেকা দিতে হবে। অন্যথায় কোনো সময় আবেদন গ্রহণ করা হবে না। বারবার সময় আবেদন করেন। এতে আমাদেরই লজ্জা লাগে।’ পরে আদালত মামলাটি নট টুডে (আজকে নয়) রাখেন।
গত রবিবার ভবনটি ভাঙতে সময় বাড়াতে বিজিএমইএ- এর পক্ষে করা আবেদনের শুনানি শেষে আদেশের জন্য আজকের দিন ধার্য রেখেছিল সর্বোচ্চ আদালত।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পক্ষে আদালতে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। বিজিএমই’র পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট কামরুল হক সিদ্দিকী। তার সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ মইনুল ইসলাম।
ভবন ভাঙতে একাধিকবার সময় নিয়েছে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ গত বছরের ৮ অক্টোবর সাত মাস সময় দেয় আপিল বিভাগ। আগামী মে মাসে সেই সময় শেষ হবে। তার আগেই সময় বৃদ্ধির জন্য আবেদন করে পোশক শিল্প নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানটি।
১৯৯৮ সালের ২৮ নভেম্বর বিজিএমইএ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। নির্মাণ শেষ হলে ২০০৬ সালের ০৮ অক্টোবর ভবনটির উদ্বোধন করা হয়। এরপর থেকে এটি বিজিএমইএ’র প্রধান কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
২০১১ সালের ৩ এপ্রিল বিজিএমইএর ভবন ৯০ দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়ে রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে বিজিএমইএকে নিজস্ব অর্থায়নে ভবনটি ভাঙতে বলা হয়। ভবনটি নির্মাণের আগে ওই স্থানের ভূমি যে অবস্থায় ছিল, সে অবস্থায় ফিরিয়ে আনতেও নির্দেশ দেওয়া হয়। এর দুই বছর পর ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ হাইকোর্টের ৬৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। রায়ে আদালত বলেন, ভবনটির সৌন্দর্য ও মহিমান্বিত হাতিরঝিল প্রকল্পে একটি ক্যান্সারের মতো। এই ধ্বংসাত্মক ভবন অচিরেই বিনষ্ট করা না হলে এটা শুধু হাতিরঝিল নয়, গোটা ঢাকা শহরকে সংক্রমিত করবে।
রায়ে আদালত বলেন, বিজিএমইএ যাদের কাছে ওই ভবনের ফ্ল্যাটের অংশ বিক্রি করেছে, তাদের টাকা ফেরত দিতে হবে। দাবি করার এক বছরের মধ্যে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলা হয় রায়ে। এর কারণ হিসেবে বলা হয়, বিজিএমইএ ভবনের সঙ্গে তাদের চুক্তি ছিল বেআইনি।
বিজিএমইএর ওই ভবন নির্মাণ বা ভবনের অংশ কারো কাছে বিক্রি করার কোনো অধিকার ছিল না। ওই জমির ওপর বিজিএমইএর মালিকানা নেই বলেও রায়ে উল্লেখ করা হয়। ভবনটি বেআইনিভাবে নির্মাণ করায় তারা কোনো সুদ পাওয়ার দাবিদার নয় বলে মত দেন আদালত। এই রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেন বিজিএমইএ সভাপতি। লিভ টু আপিলের শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ২ জুন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগ লিভ টু আপিল খারিজ করে রায় দেন।
এ আদেশ পুনর্বিবেচনা চেয়ে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে যা গত বছরের ৫ মার্চ খারিজ হয়। পাশাপাশি কার্যালয় সরাতে কতদিন সময় লাগবে তা জানিয়ে বিজিএমইএর আইনজীবীকে আবেদন দিতে বলেন। এর ধারাবাহিকতায় তিন বছর সময় চেয়ে আবেদন করে বিজিএমইএ, যার শুনানি নিয়ে ওই বছরের ১২ মার্চ আপিল বিভাগ ছয় মাস সময় দেন। এরপর থেকেই আবেদন করে সময় বৃদ্ধি করছে বিজিএমইএ।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ