স্বাস্থ্য ডেস্ক:
অনেকেই মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য নিউট্রিশনের ভূমিকা ভুলে যান। শুধুমাত্র ওষুধ প্রয়োগে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। তবে এটাও বলছি না যে, ওষুধের কোনো ভূমিকা নেই। কিন্তু, ওষুধের মাধ্যমে যে উপাদানগুলো আমরা শরীরে নিচ্ছি, মানসিক স্বাস্থ্য ভালো করার জন্য তা বিভিন্ন ধরনের খাবার থেকেই পাওয়া সম্ভব। যেমন প্যাকজিল, সেলেক্সা, লেক্সাপ্র বা ভিবরিডের পরিবর্তে আমরা আয়োডিন, ভিটামিন ১২, ভিটামিন ৩ বা ওমেগা৩ ফ্যাট যুক্ত খাবার গ্রহণ করতে পারি।
একটি গবেষণা থেকে বলা হয় মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণকারী এই উপাদানগুলোর ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য নিয়মিত পরিমিত পরিমাণে নিউট্রিয়েন্ট যুক্ত খাবার খাওয়া উচিত। আর এই নিউট্রিশনের অভাব আপনার মধ্যে হতাশা নামক মানসিক সমস্যা তৈরি করে। আসুন আজ আমরা জেনে নেই মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিউট্রিশন যুক্ত খাবার সম্পর্কে।
১. ভিটামিন ডি
আমরা অনেকেই প্রয়োজনের কম ভিটামিন ডি গ্রহণ করে থাকি। এর অভাবে শুধু যে হতাশা বৃদ্ধি পায় তা নয়, উদ্বেগ, দুঃখ এবং ডিমেনশিয়াও বাড়তে পারে। হতাশা প্রতিরোধে ভিটামিন ডি গ্রহণ করতে পারেন।
২. আয়োডিন
এই উপাদানকে নতুন ভিটামিন ডি হিসেবে ধরা যেতে পারে। আয়োডিন মেটাবোলিজম তৈরি করে এবং থাইরয়েডের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। আমাদের প্রতিদিন যে পরিমাণ আয়োডিন গ্রহণ করা উচিত তা আমরা করি না।
৩. ভিটামিন বি কমপ্লেক্স
ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের মধ্যে ১১টা বি ভিটামিন রয়েছে, যা পুরো নিউরোট্রান্সমিটার উৎপাদন এবং কার্যকারিতার সঙ্গে জড়িত। যেমন মস্তিষ্কের ভর বজায় রাখতে ভিটামিন বি ১২ এর সাহায্যের দরকার হয়। ভিটামিন বি ১২ এর অভাবে হতাশা দেখা দেয়। মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বি ভিটামিনগুলোর মধ্যে রয়েছে বি১, বি৬, বি৩ এবং ফ্লেট। এগুলোর অভাবও উচ্চমাত্রায় বিষণ্নতার ঝুঁকি বাড়ায়।
৪. ম্যাগনেসিয়াম
জিঙ্কের মতো ম্যাগনেসিয়ামও আলাদা ৩০০টি বায়োকেমিক্যাল পথের সঙ্গে জড়িত যা হাড় এবং দাঁত সুস্থ রাখে, উদ্বেগ কমায়, রক্তচাপ কমায় এবং অনেক ক্ষেত্রে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়। অথচ আমরা অনেকেই প্রয়োজনের অর্ধেক ম্যাগনেসিয়াম গ্রহণ করে থাকি।
৫. ওমেগা৩-ফ্যাট
মস্তিষ্ক গঠনের জন্য ওমেগা-৩ ফ্যাট ডিএইচএ বেশ জরুরি। যখন এর অভাব দেখা দেয় তখন অন্যান্য ফ্যাট এর জায়গা দখল করে নেয়। যেমন: ট্রান্স ফ্যাট, যেটি মস্তিষ্কে সমস্যা তৈরি করে। ট্রান্স ফ্যাট মস্তিষ্কে প্রদাহ বাড়িয়ে দেয়, যা বৃদ্ধির ফলে হতাশা তৈরি হয়।
৬. ভিটামিন সি
ভিটামিন সি এর অভাবে গিঁটে ব্যথা, দাঁতের মাড়িতে রক্তপাত, শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হয়। তবে ভিটামিন সি এর অভাবে আরেকটি যে বড় সমস্যা দেখা দেয়, তা হল হতাশা।
৭. আয়রন
আয়রনের অভাব ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের মধ্যে বেশি দেখা দেয়। আয়রনের অভাবে মূলত অ্যামোনিয়া হয় যা হতাশার মতো মানসিক রোগের উপসর্গ।
৮. জিঙ্ক
এটি একটি অক্লান্ত বন্ধু, যা ২৫০টি আলাদা বায়োকেমিক্যাল পথ বা প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত, যা প্রায় প্রতিটি ফাংশনকে সমর্থন করে। এটি নিউরোট্রান্সমিটার উৎপাদন এবং কার্যক্রমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া স্বাস্থ্যকর হজম প্রক্রিয়া এবং সুস্থ চালিকা শক্তির জন্য জিঙ্ক দরকার। একটি সুস্থ হজম প্রক্রিয়া মানসিক স্বাস্থ্যকেও সুস্থ রাখে।
৯. সেলেনিয়াম
থাইরয়েডের কার্যক্রম ভালো রাখার জন্য আয়োডিনের মতো সেলেনিয়ামেরও দরকার আছে। স্বাস্থ্যকর থাইরয়েড হতাশা কমানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে।
উৎস:
১. ভিটামিন ডি: তৈলাক্ত মাছ যেমন: স্যামন, সার্ডিন, ম্যাকেরল, হেরিং ও ট্রাউট থেকে এবং কম পরিমাণ ডিম থেকে।
২. আয়োডিন: আয়োডিনের উৎস হিসেবে আয়োডিনযুক্ত লবণ, দুধ, দই এবং ডিম বেশ ভালো।
৩. ভিটামিন বি কমপ্লেক্স: শস্যদানা, বাদাম, বীজ, গাঢ় সবুজ সবজি এবং মাংসে পাওয়া যায়।
৪. ম্যাগনেসিয়াম: বাদাম, বীজ জাতীয় খাবার, গাঢ় সবুজ রঙের সবজি, ডার্ক চকলেট ম্যাগনেসিয়ামের ভালো উৎস।
৫. ওমেগা৩-ফ্যাট: খাদ্যের মধ্যে তৈলাক্ত মাছ (স্যামন, টুনা, সার্ডাইন, ম্যাকেরল প্রভৃতি), ওমেগা-৩ ফরটিফাইড ডিম এবং বিভিন্ন সাপ্লিমেন্ট ওমেগা৩ ফ্যাটের মূল উৎস।
৬. ভিটামিন সি: মূলত টক জাতীয় ফল, এছাড়া ক্যাপসিক্যাম, সাইট্রাস, কিউই এবং স্ট্রাবেরিতে ভিটামিন সি পাওয়া যায়।
৭. আয়রন: আয়রনের ভালো উৎস হিসেবে রয়েছে মাংস, কলিজা, ডিম এবং মটরশুটি।
৮. জিঙ্ক: জিঙ্কের ভালো উৎস হচ্ছে- গরুর মাংস, মুরগিং মাংস, মিষ্টি কুমড়ার বীজ, শিম বীজ, বাদাম, সূর্যমুখীর বীজ ইত্যাদি।
৯. সেলেনিয়াম : মাছ, চিংড়ি, কলিজা এবং মুরগি সেলেনিয়ামের ভালো উৎস।
দৈনিকদেশজনতা / আই সি