নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ত্রিভূবন বিমানবন্দরে সংঘটিত বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে বাইশ জনের মরদেহ দেশে আনা হয়েছে গত সোমবার। বিধ্বস্ত ইউএস-বাংলা এয়ার লাইন্সের ক্যাপ্টেন-ক্রু ও যাত্রীসহ ছাব্বিশ বাংলাদেশী নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন ওই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায়। সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, নিহতদের লাশ বিমানবন্দর থেকে বনানী আর্মি স্টেডিয়ামে নিয়ে আসা হয়। সেখানে নামাজে জানাজা শেষে দাফনের জন্য নিহতদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আর্মি স্টেডিয়ামে নিহতদের কফিন পৌঁছানোর পর এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয় বলে গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে। স্বজনদের আহাজারিতে গোটা স্টেডিয়ামে সৃষ্টি হয় শোকাবহ পরিবেশ। পিতা-মাতাহারা শিশুরা যখন বাবা-মা বলে চিৎকার করছিল উপস্থিত সবার চোখ হয়ে পড়েছিল অশ্রুসিক্ত।
আসলে এমন মৃত্যু কখনোই কাম্য নয়। যে তরতাজা মানুষটি পরিবারের কাছ থেকে হাসিমুখে বিদায় নিয়ে ‘ফিরে আসব’ বলে বেরিয়ে গেল, সে আর এলো না। এলো তার হিম শীতল মৃত্যু সংবাদ। ফিরে এলো ঠিকই, তবে নিষ্প্রাণ নির্জীব লাশ হয়ে। এ শোক কী সইবার মতো? আরেকটি মর্মান্তক ঘটনাও দেশবাসীকে প্রচ- আঘাত করেছে। সেটি হলো- বিমানটির পাইলট আবিদ সুলতানের স্ত্রীর ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে উপনীত হওয়া। স্বামীর মর্মান্তিক মৃত্যু সংবাদ পাবার পরই তিনি স্বাভাবিকতা হারিয়ে ফেলেছিলেন। দু’দিনের মাথায় আক্রান্ত হন ব্রেইন স্ট্রোকে। এখন হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে আছেন। তার অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটাপন্ন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তিনি সুস্থ হয়ে তার সদ্য পিতৃহারা পুত্রটির কাছে আবার ফিরে আসতে পারবেন কীনা তা কেউই বলতে পারছেন না। আর ফিরলেও তিনি কতটা স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবেন তাও বলা যাচ্ছে না।
বস্তুত, ‘একটি দুর্ঘটনা, সারা জীবনের কান্না’ বলে যে একটি কথা প্রচলিত আছে, তা যে কতটা কঠিন সত্য তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ইউএস-বাংলা এয়ার লাইন্সের উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় নিহতদের স্বজনরা এ দুঃসহ স্মৃতি বয়ে বেড়াবেন আজীবন। প্রিয়জনদের মুখ তাদের চোখে ভেসে উঠবে জীবন চলার পথের বাঁকে বাঁকে। এই একটি দুর্ঘটনা কতগুলো পরিবারকে বিপর্যস্ত করে দিল, যবনিকাপাত ঘটালো বেশ কয়েকটি সম্ভাবনাময় জীবনের। এর মধ্যে উদীয়মান সাংবাদিক ফয়সালের কথা তার পরিচিত কেউ ভুলতে পারবে বলে মনে হয় না। অকালেই ঝরে গেল ফয়সাল। এ দেশ এ জাতি তার কাছ থেকে হয়ত অনেক কিছু পেতো। কিন্ত ত্রিভূবন বিমানবন্দরের এক সর্বনাশা দুর্ঘটনা সব সম্ভাবনার অবসান ঘটিয়ে দিল। জীবন শুরু না হতেই নিভে গেল ফয়সালের জীবনপ্রদীপ। আসলে প্রতিটি জীবনই মূল্যবান। কিন্তু নিয়তি কখনো কখনো সবকিছু এলোমেলো করে দেয়।
নেপাল দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ এখনো জানা যায় নি। বিধ্বস্ত ফ্লাইটটির ব্ল্যাকবক্স পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে জার্মানীতে। ওটার পরীক্ষা নিরীক্ষ শেষ হলে বেরিয়ে আসবে দুর্ঘটনার মূল কারণ। এতে নিহতদের পরিবারের তেমন কোনো লাভ-ক্ষতি হয়ত নেই। কেননা, দুর্ঘটনার কারণ জানা গেলেও নিহতরা আর ফিরে আসবেন না। তবে, এর প্রয়োজন আছে। সুষ্ঠু তদন্ত করে বের করা দরকার দুর্ঘটনার মুল কারণ। যাতে ভবিষতের জন্য সবাই সতর্ক থাকতে পারেন এমন অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা এড়িয়ে যেতে।
আমরা নিহতদের অত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং তাদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদেরকে পহাড়ের মতো ভারি এ শোক সইবার তৌফিক দান করুন।