Daily Deshjanata দেশ ও জনতার বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর
মারুফ শরীফ, নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, সরকার মুক্তিপণ আদায় করতে বেগম খালেদা জিয়াকে এক স্যাঁতসেতে পরিত্যাক্ত কারাগারে আটকে রেখেছে।
তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনকে নির্বাচনের বাইরে রেখে সরকার এক নির্দয় ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তাঁকে চাপ প্রয়োগ করে তাদের একতরফা নির্বাচনকে বিপদমুক্ত করতে চাচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজীজ উলফাত, বিএনপির নির্বাহী সদস্য আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।
‘খালেদা জিয়ার সাজা বাড়াতে দুদক আপিল করবে’- দুদকের আইনজীবীর এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে ‘দলের প্রতিক্রিয়া কী’ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে রিজভী বলেন, দুদক হচ্ছে রাতকানা বাদুরের মতো। সরকারের এমপি মন্ত্রীরা দন্ডিত হবার পরও দিব্যি পদে থেকে কাজ করছেন। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না দুদক। অথচ বিরোধী দল পীড়নের ক্ষেত্রে হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে সরকারের এই তল্পিবাহক প্রতিষ্ঠানটি।
ভয়ঙ্কর অসহিষ্ণু পরিবেশে শেখ হাসিনা রক্তলোলুপ শাসকের মতো দেশ শাসন করছে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, জগণের ধৈর্যচ্যুতি ঘটছে। গণতন্ত্র, মানুষের মৌলিক অধিকার, ভোটাধিকার ইত্যাদি দাবি করার অপরাধেই বেগম খালেদা জিয়াকে সইতে হচ্ছে অবর্ণনীয় ও নিষ্ঠুর নির্যাতন। আওয়ামী সরকরের অভিপ্রায় হলো-অসুস্থতা ও শোকে বেদনায় বিপর্যস্ত হয়ে তাদের নির্দেশিত হিসাব বেগম খালেদা জিয়া মেনে নিবেন।
রিজভী বলেন, সরকার বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে এখনও চিনতে পারেনি। তাদের নিশ্চয়ই মনে থাকার কথা- স্বৈরাচারী এরশাদের নির্বাচনে অংশ না নিয়ে তিনি যে ‘আপোষহীন’ নেত্রী উপাধী পেয়েছেন এটি তাঁর দৃঢ় ব্যক্তিত্বের জন্য এবং জনগণের প্রতি প্রদত্ত অঙ্গীকার রক্ষার জন্য। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর মতো জনগণের সাথে প্রতারণা করার ঐতিহ্য বেগম খালেদা জিয়ার নেই। একই অনড় কমিটমেন্টের কারণে মঈন উদ্দিন-ফখরুদ্দিনের অবৈধ সরকারও বাংলাদেশ থেকে দেশনেত্রীকে বিদেশে পাঠাতে পারেনি। ২০১৫ সালে গুলশানের চেয়ারপারসন কার্যালয়ে বেগম খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠ পুত্রের মৃত্যু সংবাদে শোকে পাথর হয়েও তাঁকে রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে টলাতে পারেনি বর্তমান ভোটারবিহীন আওয়ামী লীগ সরকার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিচার বিভাগকে কব্জায় রাখতে রাষ্টের প্রধান আইন কর্মকর্তাকে অসীম ক্ষমতা দিয়ে রেখেছেন মন্তব্য করে রাষ্টের প্রধান আইন কর্মকর্তার প্রতি প্রশ্ন করে রিজভী আহমেদ বলেন, আপনি কিভাবে বলেন বেগম খালেদা জিয়া কারাগার থেকে আর বের হতে পারবেন না? আপনার পদ কী চীফ জাষ্টিসেরও ওপরে?
রিজভী বলেন, এদিকে আইনমন্ত্রীও বলেছেন-উচ্চ আদালত জামিন দিলেও বেগম খালেদা জিয়া কারাগার থেকে মুক্তি পাবেন না। এর মাধ্যমেই প্রমান হয় বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দি করে রাখা, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে মিথ্যা সাজানো মামলায় দন্ড দেয়া আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই এগুলো হচ্ছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বলতে চাই বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা রাজনৈতিক, নি¤œ আদালতের দেয়া সাজা রাজনৈতিক ও জামিন স্থগিতের আদেশও রাজনৈতিক। সারাদেশের জনগণ সেটিও দৃঢ়ভাবে বিশ^াস করে। বিএনপি চেয়ারপারসনের জনপ্রিয়তাই শেখ হাসনার প্রতিহিংসার কারণ, অন্য কিছুই নয়।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি-এ মুহুর্তে যদি নির্বাচন হয় এবং সে নির্বাচন যদি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হয় এবং জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজের ভোট নিজে দিতে পারে তাহলে বিএনপি বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ টের পেয়েছে-জনগণ তাদের সাথে নেই, নিরপেক্ষ ভোট হলে তাদের ভরাডুবি হবে। তাদের দুঃশাসনে দেশের মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। বারবার মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করার জবাব জনগণ দিতে প্রস্তত।
রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ দিশেহারা হয়ে ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা সাজানো ও জালনথির মাধ্যমে মামলা দিয়ে নি¤œ আদালতকে ব্যবহার করে সাজানো রায় দিয়ে কারবন্দি করে রেখেছে। নকলের ছাঁচে ঢালাই করা আইনী প্রক্রিয়ায় সাজা দিয়ে এখন বেগম খালেদা জিয়া যাতে জামিনে বের হতে না পারেন সেজন্য আদালতকে শুধু প্রভাবিতই নয়, সরকার সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য ‘বিএনপি চেয়ারপারসনের জামিন স্থগিতে সরকারের কোন হস্তক্ষেপ নেই’ মন্তব্যের জবাবে রিজভী আহমেদ বলেন, কাদের সাহেবের কথাতেই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে ‘ঠাকুর ঘরে কে রে, আমি কলা খাইনি’র মতো ঘটনা। অর্থাৎ বেগম খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিতে সরকার সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছে।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি
