স্পোর্টস ডেস্ক:
২০১৫ সালের পর থেকে একজন ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি এখন কতটা ধারাবাহিক তার জন্য আরেকটা পরিসংখ্যান দেখা যাক। একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার সেঞ্চুরির সংখ্যা মোট ৯টি‚ যার মাঝে ৫টি সেঞ্চুরিই এসেছে ২০১৫ সালের পর! শুধু ওয়ানডেতেই নয় টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেও অন্যদের তুলনায় তামিম অনেক বেশিই পরিণত। তাই তো দেশসেরা ব্যাটসম্যানের তকমাটি এখন তামিমের গায়েই সবথেকে বেশি শোভা পায়। ৩‚ ৫‚ ৭৬‚ ৮৪‚ ৮৪ এই হল তামিমের শেষ পাঁচ ওয়ানডের রান সংখ্যা। গড় করলে যা দাঁড়ায় পঞ্চাশের কোটায়। ২০১৫ সালের পর থেকে বদলে যাওয়া তামিম ইকবালের এ ছিল একটি ছোট্ট খণ্ডচিত্র।
ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ জন্মাবার অন্যতম কারণ ছিল পরিবার। যেখানে নিজ চাচা আকরাম খানই ছিলেন ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি জয়ের অন্যতম কারিগর। সেখানে ভাতিজার ক্রিকেটের প্রতি ঝোঁক তো থাকবেই। এছাড়া তামিমের বাবাও ক্রিকেটপ্রেমিক ছিলেন। প্রায়ই এলাকায় নিজ খরচে ছোটখাটো টুর্নামেন্টের আয়োজন করতেন তামিমের বাবা, যেন দুই ছেলে নাফিস ইকবাল এবং তামিম ইকবালের ক্রিকেটে কিছুটা উন্নতি হয়। সেক্ষেত্রে তিনি একজন সফল বাবাই বটে। নাফীস ইকবাল দেশের হয়ে শুধুমাত্র কিছু টেস্ট ম্যাচ খেললেও ছোট ছেলে তামিম ইকবাল দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটেরও একজন বড় তারকা। মূলত একজন আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান হিসেবেই পরিচিত তামিম ইকবাল। তবে এই অভ্যাসটা সেই ছোটবেলা থেকেই। এ প্রসঙ্গে বড় ভাই নাফীস ইকবাল বলেন‚ ‘তামিমের বয়স যখন ১২ কি ১৩ তখন ও ১৪৮ রানের একটা ইনিংস খেলেছিল যেখানে প্রতিপক্ষের টার্গেটই ছিল ১৫০’!
২০০৬ সালে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে দারুণ পারফরমেন্সের পর বোর্ডের নজর কাড়েন ওপেনার তামিম ইকবাল এবং ২০০৭ বিশ্বকাপের জন্য তাকে দলে ডাকা হয়। বিশ্বকাপের আগেই অবশ্য একই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেক হয়েছিল তামিমের। তবে অভিষেকের পর পরই বিশ্বকাপের মতো এত বিশাল মঞ্চে খেলতে নামাটা যে কোনো ক্রিকেটারের জন্যই একই সাথে অনেক রোমাঞ্চজনক এবং ভীতিকরও বটে। আর প্রথমেই প্রতিপক্ষ যদি ভারতের মত মহাশক্তিধর কোনো দল হয় তবে তো কথাই নেই। তবে ভয়কে জয় করে এই ড্যাশিং ওপেনার একটি সুন্দর ইনিংস উপহার দিয়েছিলেন সেদিন। ৫৩ বলে ৫১ রান করে তামিম ইকবাল নিজের প্রথম অর্ধশতক তুলে নিয়েছিলেন এবং সেইসাথে বাংলাদেশও দেখা পেয়েছিল ভারতের বিপক্ষে এক স্মরণীয় জয়ের! আর সেই থেকেই ধীরে ধীরে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে যান তিনি।
পরিসংখ্যান বলে ওয়ানডেতে তামিমের সবচেয়ে পছন্দের প্রতিপক্ষটি হলো প্রতিবেশি পাকিস্তান। ক্রিকেট দলগুলোর মাঝে এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের বিপক্ষেই তামিম সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ করেছেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে তামিম এ পর্যন্ত খেলেছেন ১৬টি ওয়ানডে। আর ৪৫.০৬ গড়ে করেছেন ৬৭৬ রান। যার মাঝে রয়েছে দুইটি সেঞ্চুরি এবং ৫টি হাফসেঞ্চুরি। তবে পরিসংখ্যান অনুযায়ী স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে তামিমের ব্যাটিং গড় সবথেকে বেশি, ৯৫! অবশ্য স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে তিনি খেলেছেনই কেবল একটি ওয়ানডে।
২০০৭ এ ওয়ানডেতে অভিষেকের প্রায় এক বছর পর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে অভিষেক ঘটে তামিমের। তবে টেস্টে কাঙ্খিত সেই প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পেতে তামিমকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল ২০০৯ পর্যন্ত। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। বলা বাহুল্য সেবার একেবারেই নতুন দল নিয়ে ক্যারিবিয়ানরা হাজির হয়েছিল টাইগারদের সামনে। বিশ্বাস করতে একটু কষ্ট হলেও সেই ম্যাচে সাতজন ক্যারিবিয়ান প্লেয়ারের অভিষেক হয়েছিল। আর সেই ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে তামিম টেস্ট ফরম্যাটে তার ব্যাক্তিগত প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পান। সেবার প্রথম ইনিংসে ৩৩ এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ১২৮ করেছিলেন তিনি। তামিমের এই সেঞ্চুরি সেবার দলকে এনে দিয়েছিল দারুণ এক জয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম এবং দলের জন্য সেটি ছিল টাইগারদের দ্বিতীয় টেস্ট জয়।
টেস্টে দুই বছর পার করতে না করতেই নতুন এক রেকর্ড গড়েন এই বামহাতি ওপেনার। ২০১০ সালের মার্চ মাসে ইংল্যান্ডদের বিপক্ষে ১২০ বলে ৮৬ রানের একটি ইনিংস খেলে শচীন টেন্ডুলকার এবং বাংলাদেশের সৈয়দ আশরাফুল হকের পর তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে কম বয়সে দ্রুততম ১০০০ রান তুলে নেন। এখন পর্যন্ত তামিম ৫৪টি টেস্ট‚ ১৭৯টি ওয়ানডে এবং ৬৪টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। যার মধ্যে টেস্টে ৩৮.৬৯ গড়ে ৩৯৮৫, ওয়ানডেতে ৩৪.৯৯ গড়ে ৬০১৮ এবং টি-টোয়েন্টি ২৩.৭১ গড়ে করেছেন ১৪২৫ রান!
বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে তামিম যেসকল জায়গায় প্রথম:
*আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০ হাজার রান ছোঁয়া প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার তামিম ইকবাল।
*একদিনের ক্রিকেটে পরপর চার ম্যাচে চারটি অর্ধশতক করা একমাত্র বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল।
*ক্রিকেটের সকল ফরম্যাটে শতক হাঁকানো একমাত্র বাংলাদেশি ক্রিকেটার তামিম ইকবাল।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি