মারুফ শরীফ, নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদ ‘সরকার দলের ভিতরে একটা কিছু হয়েছে’ মন্তব্য করে বলেন, এই দলের মহাসচিবের কথা নাই বললাম। সকল নেতার বক্তব্যই একটু পাল্টেছে। তাদের নিজেদের কথা সাংঘর্ষিক। একদিকে তারা বলছেন, ‘আমরা চাই বিএনপি নির্বাচনে আসুক। অন্যদিকে বলছেন, খবরদার কোনো সভা-সমাবেশ করতে দেব না। ঘরোয়া কোনো বৈঠকও না। আপনাদের সব নেতাকর্মীর নামে মামলা দেব। তাদের বাড়িতে বাড়িতে পুলিশ পাঠাব।’
সরকারি দল নেতাদের এসব বক্তব্যের প্রেক্ষিতে মওদুদ বলেন, সেই জন্যই বলি, প্রতারণা বলতে যেটা বোঝায়, সেটার চ্যাম্পিয়ন হচ্ছে এই আওয়ামী লীগ।
শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন আয়োজিত ‘খালেদা জিয়ার কারাবাস দীর্ঘায়িত করার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে নাগরিক প্রতিবাদ সভা’ শীর্ষক আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি আমির হোসেন বাদশাহর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক এম জাহাঙ্গীর আলমের সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খান, যুববিষয়ক সহসম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মাদ রহমাতুল্লাহ, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত সেলিম প্রমুখ।
ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদ নির্বাচন কমিশনকে সরকারের ‘পদলেহী’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘এই কমিশনের কোমরে জোর নেই, মনে ন্যূনতম সাহস নেই। তারা বলে না, এটা কী রকমের গণতন্ত্র? একটি দল সরকারি খরচে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছে। কমিশন বসে বসে তা দেখছে।
‘সরকারি দলের দায়িত্বশীল নেতা, বিদেশি কূটনীতিক, সুশীল সমাজ এবং প্রভাবশালী গণমাধ্যমগুলো বিএনপিকে নির্বাচনে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে’ উল্লেখ করে প্রবীণ এই নেতা বলেন, ‘হাত-পা বেঁধে বিএনপিকে বলছেন, আপনারা সাঁতার কাটেন। আমাদেরকে সাঁতার কাটতে বলছেন, অথচ আমাদের নেত্রীকে জেলখানায় বন্দি করে রেখেছেন। আমাদের বিরুদ্ধে ৭৮ হাজার মামলা। ১১ লাখ নেতাকর্মী আসামি। হাজার হাজার নেতাকর্মী জেলবন্দি। আমাদের যারা সত্যিকারের কর্মী, যারা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেবেন, তাদের বাড়িতে থাকতে দেয়া হয় না, তাদের গ্রেফতার করে জেলখানায় ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় আমরা কিভাবে সাঁতার কাটবো! বলে তিনি বিষ্ময় প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, একাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সরকার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে। সরকার যত যা কিছুই করুক না কেন, বিএনপিই তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ। এজন্যই তারা আমাদের হাত-পা বেঁধে নির্বাচনী মাঠে সাঁতার কাটতে বলছে।
মওদুদ আহমদ বলেন, ‘বর্তমান অবৈধ সরকারের কোনো নৈতিকতা নেই। তারা একমুখে বলে বিএনপি নির্বাচনে আসুক। ওই মুখেই আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। তারা কখনোই চায় না বিএনপি নির্বাচনে আসুক।
বিএনপির এই নেতা বলেন, শেখ হাসিনা জনগণের টাকায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কখনোই নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারেন না। যদি প্রচারণা চালাতেই হয় তাহলে আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে তার প্রচারণা চালানো উচিত। বিরোধী দলকেও সে সুযোগ দিতে হবে। একতরফা প্রচারণা জনগণ কখনোই মেনে নেবে না।
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, আমাদের সভা সমাবেশ করতে দেয়া হয় না। বাংলাদেশের ৮০/৯০ ভাগ এলাকায় কোনো ঘরোয়া কর্মসূচি পর্যন্ত করতে দেয়া হয় না। কোনো একটা রুমে বসে যে সভা করব, তারও কোনো উপায় নাই। আবার আপনারা বলছেন নির্বাচনে আসতে।
সরকার ‘হামলা-মামলা, নির্যাতন করে সাংগঠনিকভাবে বিএনপিকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে’ অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, তারপরও আমরা টিকে আছি কেবল একটা কারণে, সেটা হলো মাঠপর্যায়ে, তৃণমূল পর্যায়ে, কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর, ছাত্র সবার সমর্থনে ওপর নির্ভর করে। এরাই তো আমাদের শক্তি। এই শক্তিকে যে সুযোগ-সুবিধা দেয়া উচিত, সেই সুযোগ-সুবিধা থেকে আমদের বঞ্চিত করা হচ্ছে।
সরকার বিচার বিভাগকে ধ্বংস করে দিয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির শীর্ষ নেতা মওদুদ আহমদ বলেন, এই সরকারের আমলে বাংলাদেশের যদি সবচেয়ে বড় কোনো ক্ষতি হয়ে থাকে, সেটা হলো- বিচার বিভাগ; উচ্চতর আদালত বলেন, নিম্ন আদালত বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বলতে যেটা বোঝায়, এই স্বাধীনতা নানা অপকৌশলের মাধ্যমে সরকার ছিনিয়ে নিয়েছে।
মওদুদ আহমদ বলেন, এখন কোনো আদালতে বিচারপতির পক্ষে ভয়-ভীতি ও শঙ্কামুক্ত বিচার করা সম্ভব নয়। আমি যদি আজকে বিচারপতি থাকতাম, আমিও একশ বার চিন্তা করতাম, আমি সরকারের বিপক্ষে কোনো রায় দিই। বেগম খালেদা জিয়ার মামলা বা আমাদের মামলার ব্যাপারে তাহলে আমার অসুবিধা হতে পারে, এটাই স্বাভাবিক। বিচার বিভাগের খাতাকলমে স্বাধীনতা আছে, বাস্তবে তা নেই। মুক্তমনে বিচার করার যে শক্তি থাকার কথা, সেটা এখন আছে বলে আমি অন্তত মনে করি না।
মওদুদ আহমদ বলেন, আমরা আশাবাদী। বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রপ্রেমী। বাংলাদেশের মানুষ স্বৈরাচার পছন্দ করে না। তারা স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে মাঠে নামে, আন্দোলন করে এবং নিজেদের বিজয় ছিনিয়ে আনে।
দৈনিক দেশজনতা /এন আর