মারুফ শরীফ, নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অনৈতিক অবৈধ্য আওয়ামী সরকার জনগণের ওপর ভয়াবহ অত্যাচার নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছে। আইনের শাসনকে একে একে ধ্বংস করে চলেছে। গণতন্ত্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে ফেলেছে। মানুষের শেষ ভরসার স্থল উচ্চ আদালতে সরকারের ইচ্ছারই প্রতিফলন ঘটানো হচ্ছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আদালতের বিভিন্ন সিদ্ধান্তে আমরা সেটাই দেখতে পাচ্ছি।
‘নিম্ন আদালততো সম্পূর্ণভাবেই সরকারের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হচ্ছে’- এমন মন্তব্য করে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, সুপ্রিম কোর্ট বলেছে- একটা মামলায় জামিন পাওয়ার পর আরেকটা মামলায় শোন অ্যারেস্ট দেখানো একেবারে বেআইনি। তারপরও এটাই করছেন তারা।
অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা ধ্বংস হলে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি হবে। মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল ধ্বংস হলে কারো জন্য সুখকর হবে না।
গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব কথা বলেছেন। উচ্চ আদালতের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এক(সরকার) পক্ষের শুনানীর পর আগামী রোববার পর্যন্ত বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন আদেশ স্থগিত করায় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানাতে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে বিএনপি।
সংবাদ সম্মেলনে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আবদুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এ জে মোহম্মদ আলী, আতাউর রহমান ঢালী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, আবদুস সালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, নজরুল ইসলাম মঞ্জু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাষ্ট মামলায় দন্ডপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে থাকা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টেও দেয়া জামিন আগামী রোববার পর্যন্ত স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। এই সময়ের মধ্যে জামিন স্থগিতের আবেদনকারীদের নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করতে বলেছেন উচ্চ আদালত।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আইনি প্রক্রিয়ায় যে মামলায় জামিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে, সেগুলোকে দীর্ঘসূত্রতার পাশাপাশি বিভিন্ন ছলচাতুরী ও কলা কৌশলের মাধ্যমে বিলম্বিত করছে সরকার। হাইকোর্টে যখন দেশনেত্রীকে জামিন দেয়া হলো, তারপরে সুপ্রিম কোর্টে এসে আবার সেই দীর্ঘসূত্রতা শুরু হয়েছে। ম্যাডাম যাতে কারাগার থেকে বের হতে না পারেন, সে জন্য ছলচাতুরী করে সমস্ত ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেছেন, বিএনপির নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে, আগামী জাতীয় নির্বাচন থেকে দূরে সরানোর জন্য নীলনকশার মধ্য দিয়ে তাঁকে কারা অন্তরীণ করে রাখা হয়েছে। মওদুদ আহমদ বলেন, আজকে বেগম খালেদা জিয়ার হাইকোর্টে জামিন দেয়ার রায় আপিল বিভাগ স্থগিত করে সকলকে বিস্মিত করেছে। সারা দেশের মানুষ উচ্চ আদালত থেকে যা প্রত্যাশা করে নাই সেটাই আজকে ঘটেছে। মামলা শোনানীর সময় আপিলকারী দুদকের আইনজীবী বক্তব্য উপস্থাপন করার পর বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের কোনো বক্তব্য না শুনেই হাইকোর্টেও দেয়া জামিনের আদেশ রোববার পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে।
এত তাড়াহুড়া করে অপর(আসামী) পক্ষের কথা না শুনেই এই ধরনের একটি রায় আমরা কেউ প্রত্যাশা করিনি। উপস্থিত আইনজীবীরা এই একতরফা সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। দুই পক্ষের কথা শুনে দেশের উচ্চ আদালত যে কোনো রায় দিতে পারেন। এক(সরকার) পক্ষের বক্তব্য শুনে এই ধরনের আদেশ দেয়া মোটেই যুক্তিসঙ্গত নয়। এতে দেশের উচ্চ আদালতের ঐতিহ্য এবং ভাবমূর্তি দুইই ক্ষুন্ন হয়েছে বলে আমরা মনে করি’ বলে মন্তব্য করেন ব্যারিষ্টার মওদুদ।
মওদুদ বলেন, আদালত বিচারপ্রার্থী জনগণের প্রতিপক্ষ হতে পারে না। দেশে সুবিচার নিশ্চত করার দায়িত্ব সুপ্রিম কোর্টের। আমরা এই রায়ে ক্ষুব্ধ, দুঃখিত এবং আশাহত হয়েছ্।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, আপনারা দেখছেন, সমগ্র জাতি দেখেছে, দেশের সর্বোচ্চ নির্বাহী পদে যিনি(প্রধানমন্ত্রী) আছেন তিনি বলছেন ‘এতিমের টাকা চুরি করা হয়েছে’। সঙ্গে সঙ্গে তার যারা সভাসদ, তাদেও মুখেও একই কথা ‘এতিমের টাকা চুরি করা হয়েছে’। আদালতে আমরা দেখিয়েছি, ‘যে টাকা অরফানেজ ট্রাষ্টে দেয়া হয়েছিল তার একটি পয়সাও আত্মসাৎ করা হয়নি। বর্তমানে ওই খাতে টাকা বেড়ে ৬ কোটি টাকা আছে। তাহলে আত্মসাৎ করা হলো কোথায়? কেন এ অভিযোগ করা হোলো’ প্রশ্ন করেন খন্দকার মাহবুব।
তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে টাকা আত্মসাতের জন্য সাজা দেয়া হয়নি। দেয়া হয়েছে আত্মসাতের সহযোগিতার অভিযোগে। সহযোগিতা উনি কীভাবে করলেন? ট্রাষ্ট আইনে ট্রাস্ট চলছে। সেখানে কোনো টাকা আত্মসাৎ হলো না। তারপরও তাকে সাজা দেয়া হলো।খন্দকার মাহবুব বলেছেন, মোট কথা মামলা করতে হবে। বেগম খালেদা জিয়াকে জনবিচ্ছিন্ন করে তাকে কারাগারে রাখতে হবে। তাই একের পর এক মামলা দেয়া হয়েছে। কোনো কোনো মামলায় করা হয়েছে হুকুমের আসামি। এখন আমাদের মনে হচ্ছে, এই মামলাগুলোয় একের পর এক তাকে শ্যোন অ্যারেস্ট করে দীর্ঘ দিন জেলে রাখবে। সরকার পক্ষ সরকারি খরচে নির্বাচনের প্রচারণা করবে। আমরা যারা বিএনপির নেতাকর্মী আছি, তারা কোর্টের দ্বারে দ্বারে জামিন চাইব আর হাজিরা দেয়ায় ব্যস্ত থাকবো।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ