বেসরকারি বিমান কোম্পানী ইউএস-বাংলা এয়ার লাইন্সের একটি উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়েছে গত সোমবার। নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ত্রিভূবন বিমান বন্দরে উড়োজাহাজটি ৬৭ জন যাত্রী ও ৪ জন ক্রুসহ অবতরণের সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। দুর্ঘটনায় ৪৯ জন নিহত হয়েছেন, বাকীরা আহত অবস্থায় কাঠমান্ডুর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। নিহতদের মধ্যে ২৫জন বাংলাদেশী নাগরিক। তারা বিভিন্ন কাজে নেপাল যাচ্ছিলেন। সিলেটের রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজে অধ্যয়নরত ১৩জন নেপালী শিক্ষার্থীও নিহত হয়েছে।
ভয়াবহ এ দুর্ঘটনার খবর মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বে। বিশেষত বাংলাদেশের মানুষ মর্মান্তক এ দুর্ঘটনার খবরে হতহ্বিল হয়ে পড়ে। ওই ফ্লাইটে নেপালগামী বাংলাদেশী যাত্রীদের স্বজনরা ভীড় জমায় বারিধারাস্থ ইউএস-বাংলা এয়ার লাইন্সের অফিসে। স্বজনদের অবস্থা জানতে তারা ব্যাকুল হয়ে পড়েন। বিমান দুর্ঘটনায় নিহতের জন্য শোক প্রকাশ করে শোকবার্তা দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীল। শোকবার্তায় নেতৃবৃন্দ নিহতদের রুহের মাগফিরাত এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেছেন। নেতৃবৃন্দ নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে তাদেরকে ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানিয়েছেন। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সফর সংক্ষিপ্ত করে গতকাল ঢাকায় ফিরে এসেছেন।
কি কারণে উড়োজাহাজটি দুর্ঘটনায় পড়েছে তা এখনো সঠিকভাবে জানা যায় নি। তবে, বিভিন্ন বার্তা সংস্থার খবরে বলা হয়েছে, অবতরণের ঠিক আগে বিমানটিতে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিয়েছেল এবং অবতরণের আগ মুহূর্তে ইঞ্জিনে আগুন ধরে গিয়েছিল। তবে, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ বলছে যে, ত্রিভূবন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের ভুল সিগন্যালের কারণে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। বিমানটির পাইলট এবং বিমানবন্দরের সিগন্যাল কর্মকর্তার কথোপকথনের যে অডিও ইউটিউবে ছড়িযে দেয়া হয়েছে, তাতে দেখা যায় পাইলটকে তিনবার তিন ধরনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এতে বিভ্রান্ত হয়ে পাইলট নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে থাকতে পারেন বলে অনেকে অনুমান করছেন। তবে, বিধ্বস্ত বিমানের ব্ল্যাকবক্সটি উদ্ধার করা হয়েছে। সেটি পরীক্ষা করলে দুর্ঘটনার মূল কারণ জানা যাবে।
যে কারণেই দুর্ঘটনাটি ঘটে থাকুক, এটা যে একটি অত্যন্ত মর্মন্তুদ ঘটনা তাতে কোনো সন্দেহ নেই। হাসি মুখে বিমানে চড়েছিল যে মানুষগুলো, তারা গন্তব্যে পৌঁছার আগেই পরিণত হয়েছে নিষ্প্রাণ লাশে। যারা বেঁচে গেছেন, তারা এক ভয়াবহ স্মৃতির স্বাক্ষী হয়ে রইলেন। সারাবিশ্বে এ ধরণের ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা বিরল না হলেও বাংলাদেশে খুব কমই ঘটেছে। ১৯৮৪ সালের ২৫ আগষ্ট ঢাকা বিমানবন্দরে সংঘটিত এক ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় ৪৯জন নিহত হয়েছিল। দীর্ঘদিন পরে আবার তেমনি একটি দুর্ঘটনা দেশবাসীকে তাই শোকে মুহ্যমান করে দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, দুর্ঘটনার পরপরই নেপাল সরকার ত্বরিত উদ্ধার কাজ শুরু করে। আহতদের উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় কাঠমান্ডুর বিুভন্ন হাসপাতালে। কাঠমান্ডুস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তারাও দুর্ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন এবং উদ্ধার কাজে তদারকি শুরু করেন। এদিকে দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের স্বজনদের ইতোমধ্যেই কাঠমান্ডু নিয়ে গেছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ।
যে কারণেই দুর্ঘটনা ঘটে থাকুক তা যে অপুরণীয় ক্ষতি করলো তা অস্বীকার করা যাবে না। এ দুর্ঘটনায় অনেকগুলো সম্ভাবনাময় জীবনের সমাপ্তি ঘটেছে, যা কখনোই কাঙ্খিত ছিলো না। বিভিন্ন মহল থেকে দুর্ঘটনার মূল কারণ খুঁজে বের করার জন্য আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানানো হয়েছে। এ দাবি অযৌক্তিক নয়। যে কোনো দুর্ঘটনার কারণ খূঁজে বের করা অত্যন্ত জরুরি। যদি কর্তৃপক্ষ বা কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তির গাফলতির কারণে দুর্ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরণের ঘটনা না ঘটে সে জন্য এর প্রয়োজন রয়েছে। আমরা আশা করবো সরকার এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
আমরা মর্মান্তিক এ বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করছি এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। সে সাথে গভীর সমবেদনা জানাই নিহতদের স্বজনদের প্রতি। মহান আল্লাহ রাব্বুল আল আমীন সবাইকে এ শোক সইবার শক্তি দান করুন।