নিজস্ব প্রতিবেদক:
জাল-জালিয়াতি ও দুর্নীতিতে আক্রান্ত ব্যাংকিং খাত পুরো অর্থনীতিতে দূষিত রক্ত প্রবাহিত করছে বলে মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটি বলছে, নতুন করে কিছু নীতি সংস্কারের মাধ্যমে সরকারি ব্যাংকগুলোর মত বেসরকারি ব্যাংকগুলোতেও সুশাসন অভাব তৈরি হয়ে দুর্নীতি বিপর্যস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এছাড়া ইসলামী ব্যাংকে সাম্প্রতিক সময়ের পরিবর্তন ব্যাংকটিকে অধ:পতনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
আজ শনিবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইন অডিটোরিয়ামে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির অর্থনীতিবিদরা এসব কথা বলেন।
সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো দুর্নীতিতে বিপর্যস্ত। প্রতিবছর জনগনের ট্যাক্সের টাকা থেকে মূলধনের যোগান দিচ্ছে সরকার। ব্যাংকিং খাতকে রক্ষার জন্য আগামী বাজেটে ব্যাংকিং কমিশন করতে হবে। ওই কমিশন ব্যাংকিং খাতের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধানের সুপারিশ করবে। সরকার ওই সুপারিশ মালা বাস্তবায়ন করবে।
তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোর পরিচালক পদে নিয়োগ ও দায়িত্বপালন সম্পর্কিত আইন পরিবর্তন করা হচ্ছে। এতে একটি ব্যাংকে একই পরিবারের চারজন ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালন করবেন। কয়েক বছরের প্রচেষ্টার বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে কিছুটা সুশাসন ফিরে এসেছে। এই আইন পরিবর্তনে ফলে আবার আগের জায়গায় ফিরে যাচ্ছি। এতে ব্যাংকিং সুশাসনের অভাব দেখা দেবে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, সূচকের দিক থেকে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে ছিল ইসলামী ব্যাংক্। দেশের অথর্নীতিতে ব্যাংকটি ভালো অবদান রেখে আসছে। রাষ্ট্র বিরোধী ষড়যন্ত্রের অভিযোগে সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছিল সেটি সঠিক ছিল। কিন্তু বর্তমানে ব্যাংকটির শীর্ষঋণ গ্রহীত শীর্ষ মালিকে পরিণত হয়েছেন। এটি ব্যাংকটিকে অধ:পতনে নিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাত অর্থনীতির জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দুর্নীতি আক্রান্ত অর্থনীতির জন্য নিরব ক্যান্সার। অন্য খাতকে দুষিত করছে ব্যাংকিং খাত।
সামগ্রিক অর্থনীতি নিয়ে সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দেশের আর্থিক ব্যবস্থা কাঠামোগত রূপান্তর হচ্ছে। প্রতিবছর বাজেটের আকার বাড়ছে কিন্তু সেই হারে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ বাড়ার পাশাপাশি দুর্নীতি বাড়ছে।
তিনি বলেন, সরকার যে জিডিপির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে তাতে বেসরকারি খাত ভূমিকা রাখতে পারছে না। প্রবৃদ্ধি হলেও উৎপাদনশীলতা ও কর্মসংস্থান বাড়ছে না। প্রবৃদ্ধির পেছনে বিনিয়োগ, ভোগ ও সঞ্চয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু এসবে যোগান আসছে সরকারের পক্ষ থেকে। ব্যক্তিখাত পিছিয়ে পড়ছে।
তিনি আরও বলেন, চলতি বছর শেসে রাজস্ব আদায়ে ৩৮ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি হবে। সরকার ভ্যাট বাড়িয়ে রাজস্ব আদায়ের চিন্তা করছে এটি ঠিক হবেনা। ভ্যাট হার ১৫ শতাংশ না করে ১২ শতাংশ করা যেতে পারে। বাড়তি রাজস্বের জন্য অর্থনীতি গতি আনতে হবে। প্রত্যক্ষ কর, কর্পোরেট কর ও রপ্তানী বাড়লে এমনিতেই রাজস্ব আদায় বাড়বে।
দৈনিক দেশজনতা/ এমএম