লাইফ স্টাইল ডেস্ক:
অফিসে, পথে-ঘাটে, বাসে-ট্রেনে অনেক জায়গাতেই নারী অবমাননাকর, অসম্মানজনক পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারেন। কিন্তু এ থেকে পরিত্রাণের উপায় কী? কেনই বা সমাজে বাড়ছে বিকৃত মানসিকতার মানুষের সংখ্যা? আইনের জটিল পথে না হেঁটেও কি প্রতিরোধ করা যায় এমন ঘটনা?
যৌন নিগ্রহ কী?
কোনো পুরুষের আচার-আচরণে যখন কোনো নারী শারীরিক বা মানসিকভাবে উত্ত্যক্ত হন তখন বিষয়টিকে যৌন নিগ্রহ বলে ধরা হয়। অশ্লীল কথা বলা, যৌন উত্তেজক ছবি দেখানোর চেষ্টা করা, কু-ইঙ্গিত দেওয়া অথবা গায়ে হাত দেওয়া-সবই যৌন নিগ্রহের পর্যায়ে পড়ে।
যৌন নিগ্রহের ঘটনা কি বেড়েছে?
আর্থ-সামাজিক কারণে আজকাল যৌন নিগ্রহের ঘটনা বেড়েছে। আগেও যে হয়নি তা নয়। তবে সেভাবে হয়তো জানাজানি হতো না। কেননা পুরুষশাসিত সমাজের নিয়ন্ত্রণ তখন মেয়েরা মাথা পেতে মেনে নিতেন, ভয় পেতেন এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে কীভাবে প্রতিবাদ করবেন বুঝতেন না। আজকাল প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া পজেটিভ ভূমিকা নিয়ে নির্যাতিত মেয়েদের পাশে দাঁড়ায়। মিডিয়া এখন এ ব্যাপারে অনেক বেশি সোচ্চার। শিক্ষার কারণে মেয়েরাও এখন আত্মসচেতন এবং আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন। তারা নিজেদের অবমাননার কথা জোর গলায় বলতে আর ভয় পান না। এ ব্যাপারে পরিবার ও সমাজ আগের তুলনায় কিছুটা সচেতন।
যৌন নিগ্রহের কারণ কী?
আজকাল মানুষের মধ্যে হতাশা খুব বেশি, কমে এসেছে রিপু দমনের ক্ষমতা। এর পিছনে পরিবেশের রয়েছে বড় ভূমিকা। বিশ্বায়নের কল্যাণে সমাজের একটা অংশ লাভবান হলেও একটা বড় অংশ রয়েছে গভীর অন্ধকারে। নাইটক্লাব-মাল্টিপ্লেক্সে যৌনতার প্রদর্শনী, সম্পর্কের ভাঙন, নীতিহীন সম্পর্ক তৈরি, ইন্টারনেটের কল্যাণে অবাধ ভার্চুয়াল মেলামেশার সুযোগ সবই কম-বেশি এর জন্য দায়ী। এছাড়া রগরগে বিজ্ঞাপন, টিভি, সিনেমায় অশ্লীল ছবির লাগামছাড়া প্রচারে মানুষের মূল্যবোধ একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে। এমনিতেই প্রবল চাপ ও স্ট্রেসের এই জীবনযাত্রায় রিপুর তাড়না খুব। তাই একেবারে ছয়-সাত বছরের মেয়েরাও আজকাল বাসা, রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজে যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। সর্বোপরি যৌন নিপীড়নের কিছু চিরাচরিত কারণ তো আছেই। যেমন পুরুষের ইগো, লিঙ্গের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে গর্ব, নারীকে ভোগের বস্তু বলে মনে করা, ব্যর্থ প্রেম, জীবনের সঠিক দিশা খুঁজে না পাওয়া এসব অন্যতম কারণ বলে মনোবিদরা মনে করেন।
প্রতিরোধের উপায়
বাবা-মা, শিক্ষক, মিডিয়া, মনোবিদ, সরকার- এককথায় পরিবার ও সমাজের এই ব্যাপারে বড় দায়িত্ব রয়েছে। ছোটবেলা থেকেই ছেলেমেয়েরা যদি বাবা-মায়ের কাছ থেকে সঠিক শিক্ষা পায়, তাহলে তারা পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে উঠতে পারবে। কোনটা ভালো আর কোনটা মন্দ পরিবার থেকে এই ভীত গড়ে দিতে পারলে পরবর্তী জীবনে ওদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা অনেক কম হবে।
লোকলজ্জার ভয়ে অনেক সময় নির্যাতিতা নারী চুপ করে থাকেন। আবার কখনো ভাবেন যা হয়েছে তা একবারই হয়েছে, আর হবে না। এটা বড় ভুল। ছোট মেয়েরা ভয়ে অথবা অপরাধবোধে অনেক সময় মুখ খুলতে চায় না। ছোট থেকেই তাদের শিক্ষা দেওয়া দরকার যে, এ ধরনের কোনো কিছু ঘটলে যেন সঙ্গে সঙ্গে বাবা-মাকে জানায়। অফিসে এমন ঘটনায় অন্য কোনো সহকর্মী বা বন্ধুকে ব্যাপারটা খুলে বলবেন। প্রয়োজনে কথা বলুন উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে। মোট কথা নির্যাতিতা নারী কখনোই চুপ থাকবেন না। যে কোনো প্রয়োজনে সাহায্য নিতে পারেন মনোবিদ বা কাউন্সিলরের। আইনি পরামর্শ নিতে সুবিধা হবে যদি কবে, কোথায়, কখন, কীভাবে নিগ্রহের শিকার হচ্ছেন তার একটা লিখিত রেকর্ড রাখেন। যদি ঘটনার সাক্ষী কেউ থাকেন তার নামটিও উল্লেখ করতে ভুলবেন না। সচেতন থাকুন, নিরাপদে থাকুন- আগামী কাল নারী দিবসে নারীর জন্য শুভকামনা।