মাদারীপুর প্রতিনিধি:
মাদারীপুর ও বরিশাল সীমানার বাকাই গ্রামের একটি খালের মধ্যে স্লুইস গেটের কাজ অসমাপ্ত রেখেই কোটি টাকা বিল তুলে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। প্রায় ৮ বছর ধরে কালকিনি ও গৌরনদী এই দুই উপজেলার লাখো মানুষ ভোগান্তি পোহালেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না পানি উন্নয়ন বোর্ড। অবশ্য, শিগগিরই তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে গৌরনদী উপজেলা প্রশাসন।
জানা যায়, মাদারীপুরের কালকিনি ও বরিশালের গৌরনদী উপজেলার সীমানা বাকাই গ্রামে একটি স্লুইস গেট নিমার্ণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড বরিশালের পক্ষ থেকে ২০১০-১১ অর্থবছরে প্রথমে দরপত্র আহ্বান করা হয়। নানা জটিলতার কারণ দেখিয়ে ২০১৩ সালে পুনরায় দরপত্র আহ্বান করলে ১ কোটি ৫৩ লাখ টাকার স্লুইস গেট নির্মাণ কাজ পায় খুলনার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আমিন অ্যান্ড কোম্পানি। এরপর আমিন অ্যান্ড কোম্পানির কাছ থেকে চুক্তিতে কাজটি নিয়ে নেন বরিশালের ঠিকাদার আব্দুস সালাম বাদল, জামাল হোসেন ও বদরুল আলম।
অভিযোগ উঠেছে, অ্যাপ্রোস সড়কসহ স্লুইস গেট নির্মাণ কাজ অসমাপ্ত রেখেই কোটি টাকা বিল তুলে নিয়েছেন তারা। অ্যাপ্রোস সড়ক না থাকায় যানবাহন পারাপার ও যাতায়াতে এলাকাবাসীর দুর্ভোগ কমছে না। আল-আমিন বেপারী নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, কালকিনি উপজেলার কাজীবাকাই, ডাসার, নবগ্রাম ইউনিয়ন এবং গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের লাখো মানুষের যোগাযোগের অন্যতম সড়ক এটি। স্থানীয়রা মিলে বাকাই গ্রামের এই খালটিতে বেড়িবাঁধ দিয়ে যাতায়াত করলেও স্লুইস গেট চালু ও অ্যাপ্রোচ সড়ক না থাকায় বর্ষার দিনে ভোগান্তি বেড়ে যায় কয়েকগুণ।
স্থানীয় এক আওয়ামী নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, বার বার পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ঠিকাদারের কাছে ধর্না দিয়ে ৮ বছরেও কাজটির সমাপ্তি ঘটানো সম্ভব হয়নি। শুকনো মৌসুমে কোনোমতে যাতায়াত করা গেলেও বর্ষার দিনে প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা। দ্রুত এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া দরকার। অথচ, কাজ অসমাপ্ত রেখেই বিল উত্তোলন করে নিয়ে গেছে তারা।
গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আলম সেরনিয়াবাদ অভিযোগ করে বলেন, কী কারণে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজটি অসমাপ্ত রেখেছে আমার জানা নেই। তারা জনগণের দুর্ভোগের কথা কখনই ভাবেন না। এলাকাবাসী নিজ উদ্যোগে খালের মধ্যে বাঁধ দিয়ে যাতায়াত করলেও বর্ষার দিনে দুর্ঘটনার মাত্রা বেড়ে যায়। তাই দ্রুত এ বিষয়টির সমাধান চাই। বরিশালের ঠিকাদার আব্দুস সালাম বাদল, জামাল হোসেন ও বদরুল আলম মোবাইল ফোনে জানান, কাজটি যাতে সঠিকভাবে শেষ না হয় এ জন্য এলাকাবাসী একটি মামলা করেছেন। আর তাই দেরি হচ্ছে, তবে আমরা যতটুকু কাজ করেছি, ততটুকু বিল নিয়েছি। বাড়তি কোনো বিল আমরা নেইনি।
এদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বরিশালের গৌরনদী অফিসে একাধিকবার গিয়েও কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে, মোবাইল ফোনে বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান জানান, আমরাও কাজটি যাতে দ্রুত শেষ করা যায় এ বিষয়ে তৎপর রয়েছি। এলাকাবাসীর মাঝে একটু ঝামেলা থাকায় কাজটি দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে রয়েছে। শুকনো মৌসুমে কাজটি এবার সম্পন্ন করা হবে।
গৌরনদী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা খালেদা নাসরিন বলেন, শিগগিরই খোঁজ নিয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। যেহেতু দুটি উপজেলার মানুষের যাতায়াতের অন্যতম সড়ক এটি, তাই পদক্ষেপও দ্রুত নেয়া হবে। আর কাজ না করে যদি ঠিকাদার বিল উত্তোলন করে নেয়, তাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ঠিকাদারের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি