স্বাস্থ্য ডেস্ক:
অনেকে বিভিন্ন কারণে সকালের খাবার এড়িয়ে চলেন। এতে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নানারকম বিরূপ প্রভাব পড়ে। এ প্রতিবেদনে সকালে না খাওয়ার ৮টি কুফল তুলে ধরা হলো।
হৃদরোগের ঝুঁকি: গবেষণা অনুসারে, প্রায় ৩১ মিলিয়ন আমেরিকান ব্রেকফাস্ট এড়িয়ে চলেন। কেউ কেউ ক্যালরি বাদ দেওয়ার চেষ্টা করেন, কেউ সকালে খুব ব্যস্ত থাকেন এবং অন্যরা বলেন যে, তারা ক্ষুধা অনুভব করেন না। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, সুস্থ জীবনধারার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে ভালো ব্রেকফাস্ট করা। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণায় আবিষ্কার হয় যে, যেসব লোক ব্রেকফাস্ট এড়িয়ে গেছেন তাদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি ২৭ শতাংশ বেশি। গবেষকরা ধারণা করছেন, দীর্ঘসময় উপোস থাকলে শরীরের ওপর চাপ পড়ে এবং শরীরের পক্ষে কাজ সম্পাদন করা কঠিন হয়। ফলে বিপাকীয় পরিবর্তন হয়।
ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে: ব্রেকফাস্ট না খেলে রক্তে শর্করার ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব নারী ব্রেকফাস্ট খেতেন না তাদের টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি ২০ শতাংশ বেশি ছিল। ডা. গ্যাস্টিলাম বলেন, সকালের খাবার এড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে ইম্পেয়ারড গ্লুকোজ টলারেন্স বা আইজিটির সংযোগ রয়েছে, যা প্রি-ডায়াবেটিস এবং ডায়াবেটিস বিকাশের আশঙ্কা বৃদ্ধি করে। কারণ হচ্ছে যখন আমরা দীর্ঘসময় উপোস থাকার পরে ক্ষুধার্ত হওয়ার কারণে প্রচুর খাই, তখন রক্তে শর্করা বৃদ্ধি পায়- যা শরীরের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। ফলে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স হতে পারে।
ওজন বেড়ে যেতে পারে: গবেষণায় আবিষ্কার হয় যে, ব্রেকফাস্ট না খাওয়ার সঙ্গে ওজন বৃদ্ধির সংযোগ পাওয়া গেছে। হাউসটনে অবস্থিত ইউটিহেলথ স্কুল অব নার্সিংয়ের ডায়াবেটিস এডুকেটর শ্যানন আর. ওয়েস্টন বলেন, ‘একটি থিওরি হচ্ছে- যেসব লোক ব্রেকফাস্ট খান তারা আদর্শ শরীর ওজন এবং ভালো স্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত জীবনধারার চর্চা বেশি করেন। অন্য থিওরি হচ্ছে- যারা ব্রেকফাস্ট খান না তারা পরবর্তীতে খাওয়ার সময় অতিরিক্ত খাবার খান এবং দিনের আয়েসি ঘণ্টাগুলোতে অধিক পরিমাণে ক্যালরি ভোজন করেন।’ ডা. গ্যাস্টিলাম বলেন, কিছু রোগী এটা উপলব্ধি করেন না যে, তারা তিনবেলা পরিকল্পিত খাওয়ার তুলনায় এক বসাতেই অধিক ক্যালরি গ্রহণ করছেন। তিনি বলেন, ‘যেসব রোগী বারবার ব্রেকফাস্ট বা পরিকল্পিত খাবার এড়িয়ে চলেন তারা বিশ্বাস করেন যে, তারা কম খাচ্ছেন। যা আসলে ভুল।’
বিপাক ধীরে হতে পারে: আপনি যখন ব্রেকফাস্ট বা খাবার খাবেন না, আপনার শরীর ফুয়েল সংরক্ষণ করতে কাজ করা থামিয়ে দেবে। ডা. গ্যাস্টিলাম বলেন, ‘ক্যালরি সীমাবদ্ধতার কারণে আপনার শরীর নিজের মূল মেটাবলিক রেট ধীর করে ফেলে।’ এছাড়া সকালে মেটাবলিজম ধীর বা মন্থর থাকে- এ মন্থরতা রাতে ঘুমের সময় থেকে শুরু হয়। ডা. গ্যাস্টিলাম বলেন, ‘দীর্ঘক্ষণ উপোস শরীরের ক্যালরি পোড়ানোর ইচ্ছাকে হ্রাস করতে পারে এবং অ্যাডিপোজ টিস্যুকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।’
নির্বোধ হয়ে যেতে পারেন: ব্রেকফাস্ট না খেলে ব্রেইনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। আপনার গ্লুকোজের ওপর নির্ভর করে মস্তিষ্ক চালিত হয়, দীর্ঘ সময় উপোস অবস্থায় থাকার ফলে রক্ত শর্করা হ্রাস পেলে আপনার জ্ঞানীয় কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা থাকে। ওয়েস্টেন বলেন, ‘ব্রেইনকে পর্যাপ্ত পুষ্টি সরবরাহ করার জন্য ব্রেকফাস্ট খাওয়া উচিত, বিশেষ করে সারারাত উপবাসের পর।’ গবেষণায় দেখা যায় যে, যেসব ছেলেমেয়ে ব্রেকফাস্ট খেয়েছে তাদের পরীক্ষার ফল অধিকতর ভালো হয়েছে। ওয়েস্টন বলেন, ‘যেহেতু ডায়েটারি কার্বোহাইড্রেট ভেঙে গ্লুকোজে রূপান্তরিত হয়, সেহেতু জ্ঞানীয় মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি সর্বোচ্চ করতে ব্রেকফাস্টে সঠিক পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ।’
আপনি রেগে যেতে পারেন: যখন আপনি ক্ষুধার্ত থাকবেন, তখন খুব সহজে রেগে যেতে পারেন। এ কারণে ব্রেকফাস্ট না খেলে আপনি বদমেজাজী বা রাগান্বিত হতে পারেন। যুক্তরাজ্যের একটি গবেষণা থেকে জানা যায়, যেসব পুরুষ ব্রেকফাস্ট খেয়েছিল, ব্রেকফাস্ট না খাওয়া পুরুষদের তুলনায় তাদের মেজাজ টেস্ট সেশনের শুরুতে অধিকতর ইতিবাচক ছিল এবং পরে অধিকতর সুস্থিরতা অনুভব করে। খাবার গ্রহণ এবং মস্তিষ্কে উৎপাদিত নিউরোট্রান্সমিটারের ভারসাম্যের মধ্যে একটি সম্পর্ক আছে। খাবার এড়িয়ে গেলে শরীরের ওপর স্ট্রেস বা চাপ পড়ে এবং স্ট্রেস ডোপামিন ও সেরোটোনিনের মাত্রাকে প্রভাবিত করে। অন্যদিকে, নিয়মিত ভোজন সুখময় অনুভূতির উদ্রেক করে।
আপনার শক্তি হ্রাস পাবে: ব্রেকফাস্ট না খেলে আপনার শক্তি কমে যাবে, যে কারণে আপনি ওয়ার্কআউট করতে অনুৎসাহ বোধ করবেন এবং এর ফলে আপনার ওজন বেড়ে যেতে পারে। যদি আপনি অলসতা অনুভব করেন, জিমে যেতে না চান অথবা জিমে গেলেও মধ্য সেশনে ব্যায়াম থামিয়ে দেন। এছাড়া সকালে ওয়ার্কআউট করলে শরীরে পুনরায় ফুয়েল যোগানোর জন্য আপনাকে খাবার খেতে হবে। সকালে ওয়ার্কআউট করলে এবং ব্রেকফাস্ট না খেলে আপনি অত্যধিক দুর্বল হয়ে পড়বেন। ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিনের তথ্যানুসারে, ব্রেকফাস্ট দৈনন্দিন শক্তির ২৫ শতাংশ সরবরাহ করে- যেখানে ফুয়েলের জন্য ফাইবার ও প্রোটিনও থাকে।
পরবর্তীতে অধিক ক্ষুধা লাগবে: একটি প্রোটিন-প্যাক দিয়ে দিন শুরু করলে আপনার সারাদিনের ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ হতে পারে। ওয়েস্টন বলেন, ‘গবেষণায় দেখা গেছে যে যুক্তিসঙ্গত পরিমাণে (প্রায় ২০ গ্রাম) প্রোটিনযুক্ত ব্রেকফাস্ট ভোজনে দিনের অবশিষ্ট সময়ে পুষ্টিগত প্রভাব পড়ে। এর কারণ হচ্ছে, ডায়েটারি প্রোটিন ক্ষুধা দমন করে এবং একবেলা থেকে আরেকবেলা পর্যন্ত তৃপ্তি প্রদান করে। যেসব লোক উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ ব্রেকফাস্ট খায়, তারা উচ্চ কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ ব্রেকফাস্ট খাওয়া লোকদের তুলনায় সারাদিন ধরে কম পরিমাণে ক্যালরি ভোজন করে।’ সাধারণত ক্ষুধার্ত অবস্থায় আমরা নিম্নমানের খাবার নির্বাচন করি, সুতরাং ব্রেকফাস্টের পর তৃপ্তির অনুভব আপনাকে সঠিক ট্র্যাকে রাখতে পারে। কিন্তু সকালে যদি সত্যিই আপনার ক্ষুধা লাগে তাহলে শরীরের কথা শুনতে পারেন, এক্ষেত্রে হালকা কিছু খেতে পারেন।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি