নিজস্ব প্রতিবেদক:
অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া কিশোরী ভাগনিকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে এক সৎমামার বিরুদ্ধে। ধর্ষণের কারণে মেয়েটি এখন ৩৩ সপ্তাহের (প্রায় ৮মাস) অন্তঃসত্ত্বা বলে অভিযোগ করেছে ওই কিশোরীর পরিবার। ঘটনাটি ঘটেছে টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কালিয়া ইউনিয়নের কচুয়া পুকুরপাড় এলাকায়। এ ঘটনায় শুক্রবার রাত সাড়ে ৯ টার দিকে মেয়েটির চাচা বাদী হয়ে ধর্ষণে সহযোগিতায় সৎমা রোজিনা আক্তার ও ধর্ষক সৎমামা হাসানের (১৯) নামে মামলা করেছেন। হাসান উপজেলার কচুয়া দক্ষিনপাড়া গ্রামের আবদুর রহিমের ছেলে। ধর্ষণের শিকার মেয়েটি উপজেলার কচুয়া ওয়াজেদিয়া দাখিল মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেণিতে পড়লেও অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় প্রায় চার মাস ধরে বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
ওই ছাত্রী, তার পরিবার ও মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, মেয়েটির বাবা কয়েক বছর ধরে চাকরিসূত্রে সৌদি আরবে রয়েছেন। সাত-আট বছর আগে মেয়েটিকে রেখে তার মা অন্যত্র বিয়ে করে চলে যান। এরপর চার বছর আগে সৎমা রোজিনাকে বিয়ে করেন বাবা। বাড়িতে পুরুষ মানুষ না থাকায় সৎমা রোজিনা আক্তার বছর দুয়েক ধরে তার ভাইকে বাড়িতে এনে রাখছেন। হাসান একা ঘরে থাকলে স্বপ্নে তাকে ‘বোবায়’ ধরে এমন অজুহাতে রোজিনা মেয়েটিকে মামার ঘরেই থাকার জন্য অনুরোধ করেন।
মেয়েটি জানায়, এক রাতে ঘুমানোর পর ওই সৎমামা তাকে ধর্ষণ করেন। সুযোগ বুঝে এভাবে মাঝে মধ্যেই মেয়েটিকে ধর্ষণ করে ওই সৎমামা। এ বিষয়ে তার সৎমাকে জানালেও তিনি এ বিষয়ে কর্ণপাত করেননি। উল্টো মেয়েটিকে কেউ কিছু না জানাতে শাসিয়ে দিয়ে প্রাণ নাশের হুমকিও দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। একপর্যায়ে মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। এলাকায়ও কানাঘুষা শুরু হলে মেয়েটিকে সৎমা গৃহবন্দী করে রাখে।
মেয়েটি এখন (৩৩ সপ্তাহ) ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা বলে (২২ ফেব্রুয়ারি) আল্ট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে নিশ্চিত করেছে স্থানীয় একটি ক্লিনিকের চিকিৎসক। মেয়েটির চাচা অভিযোগ করেন, প্রায় চার মাস ধরে বিষয়টি জানাজানি হলেও হাসান ও তার বোন বিষয়টি পাত্তা দিচ্ছে না। সৎমা রোজিনা তার ছোট ভাই (অভিযুক্ত ধর্ষক) হাসানসহ মেয়েটিকে ফেলে রেখে বাবার বাড়ি চলে গেছেন। এদিকে, মেয়ের চাচারা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন দাবি করে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত হাসান।
মেয়েটির পরিবারের লোকজনের দাবি, ওই মাদ্রাসার পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ইদ্রিছ শিকদারের মধ্যস্থতায় স্থানীয়ভাবে একাধিকবার মীমাসাংসার চেষ্টা করা হলেও কোনো লাভ হয়নি। এ বিষয়ে কচুয়া ওয়াজেদিয়া দাখিল মাদ্রাসার পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ইদ্রিছ শিকদার ও মাদ্রাসার সুপার মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় চার মাস ধরে বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মেয়েটিও অনাগত সন্তানসহ নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছে। সে বলে, কী হতে কী হলো বুঝে উঠতে পারেনি; আমি বাঁচতে চাই, পড়তে চাই, আপনারা সহযোগিতা করেন এ বলে ওই সৎমায়ের বিচার দাবি করে মেয়েটি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সখীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ নাজমুল হক ভুঁইয়া এ প্রতিবেদককে বলেন, শুক্রবার রাতে মেয়ে ও মেয়ের চাচা থানায় একটি মামলা করেছেন।
অভিযুক্তদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে জানিয়ে অন্তঃসত্ত্বার বিষয়ে মেয়েটিকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হবে বলেও জানান তিনি।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ