নিজস্ব প্রতিবেদক:
শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় প্রাপ্তবয়স্ক আসামির বিচার কোন আইন ও আদালতে হবে, তা স্পষ্ট করতে সংশোধিত শিশু আইন-২০১৩ চলতি সংসদে পাস হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। রোববার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমম্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এ সংক্তান্ত আদেশে একই সঙ্গে এ বিষয়ে সরকারের অগ্রগতি জানাতে আগামী ২৫ মার্চ মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইউসুফ মাহমুদ মোর্শেদ। আর সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষে সংশোধিত আইনের খসড়ার অগ্রগতি সম্পর্কে আদালতকে অবহিত করেন আইনজীবী আশিকুর রহমান।
আদালতকে আশিকুর রহমান জানান, শিশু আইনের সংশোধনী খসড়াটি সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে আইনটি এ অবস্থাতেই রয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে আদালত বলেন, কাজটি এত ধীর গতিতে চলছে, তাতে চলতি সংসদের আর মাত্র কয়েকটা দিনের মধ্যে সংশোধিত আইনটি পাস কি হবে? আমরা আজ অগ্রগতি সম্পর্কে জানলাম। বিষয়টি ২৫ মার্চ পর্যন্ত মুলতবি করলাম। আশা করি, চলতি সংসদে এটি পাস হবে।
এরআগে গত ১২ ফেব্রুয়ারি সংশোধিত শিশু আইন-২০১৩ এর অস্পষ্টতা দূরীকরণে সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে, তা জানাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে সমাজ কল্যাণ সচিবকে এ বিষয়ে লিখিতভাবে আদালতকে জানাতে নির্দেশ দেয়া হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় আইনটি সংশোধনী সম্পর্কে আজ আদালতকে অবহিত করে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১২ নভেম্বর হাইকোর্ট শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় প্রাপ্তবয়স্ক আসামিদের বিচার কোন আইনে বা কোন আদালতে হবে, তা স্পষ্ট করতে শিশু আইন-২০১৩ সংশোধনে সরকারকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দেন। পরে গত ১৫ জানুয়ারি শিশু ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় প্রাপ্তবয়স্ক আসামিদের বিচারে স্পষ্ট আইন তৈরি করতে হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক শিশু আইনের সংশোধিত খসড়া আদালতে দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। এ সময় আইন মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো ওই প্রতিবেদনের সঙ্গে খসড়া সংশোধনী প্রস্তাবও আদালতে দাখিল করা হয়।
বিদ্যমান আইনটির ‘শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক অপরাধীর একত্রে চার্জশিট প্রদান নিষিদ্ধ’ ১৫ ধারায় বলা হয়েছে, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ২৩৯ অথবা আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, শিশুকে কোনো প্রাপ্তবয়স্ক অপরাধীর সহিত একসঙ্গে কোনো অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত করিয়া একত্রে চার্জশিট প্রদান করা যাইবে না।’
এদিকে, সংশোধিত খসড়ায় এই ধারাটির সংশোধন করে বলা হয়েছে, ‘পুলিশ রিপোর্ট বা অনুসন্ধান প্রতিবেদন পৃথকভাবে প্রস্তুত ও আমলে গ্রহণ। -(১) ফৌজদারি কার্যবিধি বা আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোন অপরাধ সংঘটনে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি ও শিশু জড়িত থাকিলে পুলিশ রিপোর্ট বা ক্ষেত্রমত, অনুসন্ধান প্রতিবেদন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি ও শিশুর জন্য পৃথকভাবে প্রস্তুত করিয়া দাখিল করিতে হইবে।
(২) ফৌজদারি কার্যবিধি বা আপাতত বলবৎ অন্য কোনো যাহা কিছুই থাকুক না কেন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি ও শিশু কর্তৃক একত্রে সংঘটিত কোনো অপরাধ আমলে গ্রহণের ক্ষেত্রে তাহাদের অপরাধ পৃথকভাবে আমলে গ্রহণ করিতে হইবে। বিদ্যমান আইনটির ১৫ ধারায় নতুন করে ১৫ (ক) সন্নিবেশন করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘মামলা বিচারের জন্য প্রেরণ বা স্থানান্তর।- কোনো অপরাধ আমলে গ্রহণ করিবার পর, মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত করিয়া-
(ক) শিশু কর্তৃক সংঘটিত অপরাধ বিচারের জন্য মামলাটি প্রয়োজনীয় কাগজাদিসহ শিশু আদালতে প্রেরণ করিতে হইবে;
(খ) প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি কর্তৃক সংঘটিত অপরাধ বিচারের জন্য মামলাটি প্রয়োজনীয় কাগজাদিসহ এখতিয়ারসম্পন্ন আদালতে প্রেরণ করিতে হইবে; এবং
(গ) দফা (ক) ও (খ) এর অধীন মামলা প্রেরণের বিষয়টি পাবলিক প্রসিকিউটরকে অবহিত করিতে হইবে।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ