১৯শে জানুয়ারি, ২০২৫ ইং | ৫ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৩:০৯

ছয় মাস লাগতে পারে আট হাজার রোহিঙ্গা ফিরতে: সাখাওয়াত

নিজস্ব প্রতিবেদক:

গণহত্যা ও নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার সরকার সহসাই ফেরত নেবে না বলে মন্তব্য করেছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, মিয়ানমার যে আট হাজার ৩২ জন রোহিঙ্গা ফেরত নেবে বলেছে, সেটা আমি মোটেও বিশ্বাস করি না। এই আট হাজার যেতে যেতে হয়তো আরও ছয় মাস লাগবে।

শুক্রবার রাতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আইয়ের ‘আজকের সংবাদপত্র’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা আট হাজার ৩২ জন রোহিঙ্গার একটি তালিকা দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী খ শোয়ের হাতে তুলে দিয়েছে বাংলাদেশ। শুক্রবার বিকালে সচিবালয়ে দুই দেশের মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে তালিকাটি হস্তান্তর করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

বৈঠক শেষে মন্ত্রী জানান, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ১১ লাখ রোহিঙ্গার তালিকা করা হয়েছে। এর মধ্যে আজকের বৈঠকে এক হাজার ৬৭৩টি রোহিঙ্গা পরিবারের আট হাজার ৩২ জনের তালিকা দেয়া হয়েছে। গত ১৬ জানুয়ারি রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য ফিজিক্যাল অ্যারাঞ্জমেন্ট চুক্তি সই হয় দুই পক্ষে। তবে সে প্রত্যাবাসন এখনও শুরু করা যায়নি।

আলোচনায় অংশ নিয়ে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর গতকালকের বৈঠকের পর আমরা জেনেছি মিয়ানমার বাংলাদেশ থেকে আট হাজার ৩২ জন রোহিঙ্গা ফেরত নিতে রাজি হয়েছে। তবে প্রথমেই দেখতে হবে এই আট হাজার ৩২ জন রোহিঙ্গা কারা? তারা কি মিয়ানমারে ফিরে যেতে রাজি? তারা যদি মিয়ানমারে ফিরে যেতে রাজি হয়, তবে মিয়ানমার দেখাতে চাইবে আমরা বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে আসছি। যাতে তাদের আন্তর্জাতিক চাপ কমে।’

সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, জাতিসংঘ মনে করেছে রোহিঙ্গা নির্যাতন ও তাদের দেশ থেকে বিতাড়িত করার ফলে সু চি মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন। কেননা, সু চিকে নোবেল পাইয়ে দেয়ার মাধ্যমে পশ্চিমা দেশগুলো চেয়েছিল মিয়ানমারে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে। কিন্তু তারা হতাশ হয়েছে।

সু চি ব্যর্থতার কারণ উল্লেখ করে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘ওয়েস্টার্ন ওয়ার্ল্ড ভাবছিল সু চিকে দিয়ে মিয়ানমারে একটা গণতন্ত্র হবে। কিন্তু কনস্টিটিউশন এবং সেনাবাহিনীর উপস্থিতি, তাদের যে প্রি-ডমিনেন্স, সু চি যে তাদের প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না সেটাতে আমার মনে হয় ওয়েস্টার্ন কান্ট্রিগুলোর মোহভঙ্গ হয়েছে। তারা বুঝে গেছে, মিয়ানমারে প্রকৃত গণতন্ত্র আসতে অনেক দেরি। এবং এই রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আন্তর্জাতিক স্টাটেটিক গেমস চলছে। সেখানে বাংলাদেশে অত সহজে একটা বায়োলেটাল অ্যাগ্রিমেন্ট করতে পারবে বলে আমার মনে হয় না।’

নিরাপত্তা বিশ্লেষক তার ব্যক্তিগত অভিমত প্রকাশ করে বলেন, ‘মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হাতে যেভাবে নির্যাতি হয়ে রোহিঙ্গারা দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে তাতে করে সেদেশে তারা আর ফিরে যাবে বলে মনে হয় না। তাদের ঘরবাড়িও মিয়ানমারে আর নেই। তাদের যে জমিগুলো ছিল তা ইতোমধ্যে মিয়ানমার সরকার দখল করে নিয়েছে। এই অবস্থাতে তারা যেবাবে নির্যাতিত হয়েছে তাতে কোনো গ্যারান্টি ছাড়া তারা মনে হয় মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারবে না। এই গ্যারান্টি বাংলাদেশও দিতে পারবে না। এই গ্যারান্টি মিয়ানমারও দিচ্ছে না মুখে মুখে ছাড়া। তাই সেখানে একটা আন্তর্জাতিক গ্যারান্টি দরকার। তারা যেন সেখানে গিয়ে আবার নির্যাতিত না হয়।’

দৈনিকদেশজনতা/ আই সি

প্রকাশ :ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৮ ১:৫৪ অপরাহ্ণ