আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ক্যান্সারে মারা যাওয়া ছেলের জমিয়ে রাখা শুক্রাণু থেকেই ভারতের এক দম্পতি ফিরে পেয়েছেন ছেলেকে। তাদেরই এক আত্মীয়ার গর্ভে সেই শুক্রাণু থেকে তৈরি ভ্রূণ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে জন্ম নিয়েছে এক যমজ। একটি পুত্র, একটি কন্যা। পুনে শহরের প্রকৌশলী প্রথমেশ পাটিল জার্মানিতে পড়তে গিয়েছিলেন, সেখানেই তার প্রাণঘাতি ক্যান্সার ধরা পড়ে।-খবর বিবিসি অনলাইনের।
ভারতে ফিসে এসে বছর তিনেকের চিকিৎসার পরে তিনি মারা যান। তার মা বলছেন, চিকিৎসা শুরুর আগেই জার্মানির একটি স্পার্ম ব্যাঙ্কে জমিয়ে রাখা ছিল তার ছেলের শুক্রাণু। তা থেকেই আবারও ঘরে ফিরে এসেছে প্রিয় পুত্র।
ক্যান্সারের সঙ্গে বছর তিনেক লড়াই করার পরে পুনে শহরের বাসিন্দা ২৭ বছরের যুবক প্রথমেশ পাটিল মারা যান ২০১৬ সালে। জার্মানিতে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেলেকে ভারতে ফিরিয়ে আনেন প্রথমেশের মা রাজশ্রী পাটিল। তিনি বলছিলেন, কেবল আমরাই না, ওর বন্ধুবান্ধব, আত্মীয় সকলেই তাকে খুব মিস করছিল। ছেলের থেকে মেয়ে প্রায় নয় বছরের ছোট। সে ভাইয়ের সঙ্গে ওই বছর তিনেক এতটাই মিশে হয়ে গিয়েছিল যে, ও মারা যাওয়ার পরে ভীষণ অবসাদে ভুগছিল। যে বছর তিনেক ভারতে চিকিৎসা হয়েছে, এমন একটা দিনও যায় নি যে কোনও না কোনও বন্ধু ওর কাছে আসে নি।
তিনি আরও বলেন, তবে আমি নিজে মনে করতাম ছেলে সামনেই আছে। ওর ঘরে শুধুই ওর ছবি রেখে দিয়েছি। সবসময়ে ছেলের একটা ছবি নিজের কাছেও রাখি। এমন কি কোনও কিছু খেলেও সামনে থাকে প্রথমেশের ছবি।
পেশায় স্কুল শিক্ষিকা রজশ্রী পাটিল বলেন, তারপর হঠাৎই একদিন মনে হল, ছেলের শুক্রাণু তো জমিয়ে রাখা আছে জার্মানিতে। সেটা দিয়েই তো কৃত্রিম প্রজননের সাহায্যে আমিই ফিরিয়ে আনতে পারি প্রথমেশকে। জার্মানিতে ক্যান্সারের চিকিৎসা শুরু করার আগেই সেখানকার ডাক্তারেরা প্রথমেশের শুক্রাণু জমিয়ে রেখে দিয়েছিলেন পরিবারের অনুমতি নিয়েই। তা রাখা ছিল সিমেন ক্রায়োপ্রিজারভেশন পদ্ধতিতে, চলতি কথায় যাকে বলে স্পার্ম ব্যাঙ্ক। রাজশ্রী পাটিল বলছিলেন, সেই শুক্রাণু দেশে এনে কৃত্রিমভাবে ভ্রূণ প্রজনন ঘটিয়ে তিনি নিজের গর্ভে প্রতিস্থাপন করাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু চিকিৎসকরা তাতে সম্মতি দেন নি। তখনই তার এক সম্পর্কিত বোন এগিয়ে আসেন। প্রথমেশের জমিয়ে রাখা শুক্রাণু থেকে ভ্রূণ তৈরি করে সেই আত্মীয়ার গর্ভে প্রতিস্থাপন করা হয়, যাকে আই ভি এফ পদ্ধতি বলা হয়। সেই আত্মীয়ার গর্ভেই থেকে ১২ ফেব্র“য়ারি জন্ম নিয়েছে এক যমজ।
এই গোটা প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ছিলেন ডা. সুপ্রিয়া পুরাণিক। তিনি বলেন, প্রথমে তো জার্মানি থেকে প্রথমেশের রেখে যাওয়া শুক্রাণুটা নিয়ে আসাই একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল – যদিও ঠিকমতো রাখলে কখনও শুক্রাণু নষ্ট হয় না। কিন্তু অনেকগুলো জটিল আইনি ব্যাপার এর মধ্যে জড়িত আছে।
তিনি আরও বলেন, প্রথমেশের মার গর্ভে ওই ভ্রূণ প্রতিস্থাপন সম্ভব হত না। তার যে আত্মীয় গর্ভধারণ করেছেন, তিনি প্রথমবারের চেষ্টাতেই যমজ সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। এমনিতেই কোনও মৃত ব্যক্তির শুক্রাণু ব্যবহার করে সন্তানের জন্ম দেওয়া ভারতে খুবই কম হয়। বিদেশে হয় এরকম আকছার।
ডা. সুপ্রিয়া পুরাণিক বলেন, তবে ভারতের চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে এরকম কোনও ঘটনা জানা নেই, যেখানে এক পুত্রহারা মা তার সন্তানের শুক্রাণু ব্যবহার করিয়ে বলতে গেলে ছেলের পুনর্জন্ম ঘটাতে চেয়েছেন।
রাজশ্রী পাটিল জানান, যমজ সন্তান ঘরে আসার পর থেকেই গোটা পাড়া – আত্মীয় স্বজন তাদের বাড়িতে আনন্দ উৎসবে মেতেছে। ছেলের শুক্রাণু থেকে জন্ম হলেও সদ্যজাতদের তিনি নাতি-নাতনী বলতে নারাজ। তিনি বলেন, এরা তো আমার ছেলে আর মেয়েই। তাই পুত্র শিশুটির নাম রেখেছি মৃত ছেলের নামেই – প্রথমেশ, আর কন্যা শিশুটির নাম পৃষা।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ