নিজস্ব প্রতিবেদক :
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার একটি কেন্দ্রে শনিবার মোবাইল ফোনে গণিতের ফাঁস হওয়া প্রশ্ন নিয়ে পরীক্ষা দেয়ার সময় তিন ছাত্র এবং দায়িত্বে অবহেলার জন্য দু’শিক্ষককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।
অপর ঘটনায় প্রশ্নপত্র নিয়ে কেন্দ্রের বাইরে যাওয়ার সময় জেলার শ্রীপুর উপজেলার মাওনা বহমুখী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের গেইট থেকে ওই কেন্দ্রের সহকারী কেন্দ্র সচিবকে পুলিশ আটক করেছে।
অপরদিকে কালিয়াকৈরে একটি পরীক্ষা কেন্দ্রে সাধারণ গণিতের নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নপত্র বিতরণ নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। এতে কয়েকজন শিক্ষার্থী ওই বিষয়ে পাস নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে।
শনিবার দুপুরে পরীক্ষা শেষে ওই কেন্দ্রের সামনে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা।
আটকরা হলেন— শ্রীপুরের রেড়াইদেরচালা আলহাজ্ব ধনাই বেপারী মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমজাদ হোসেন নাহীন। তিনি মাওনা বহমুখী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে সহকারী কেন্দ্র সচিব হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করছিলেন। কালীগঞ্জ উপজেলার চুপাইর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সঞ্জিব কুমারদেব নাথ ওরফে সবুজ ও জাঙ্গালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক নজরুল ইসলাম ওরফে মানিক, তিন ছাত্র প্রণয় দাস, সঞ্জয় শীল ও সজিব দাস।
পুলিশ জানায়, কালীগঞ্জ উপজেলার সবগুলো কেন্দ্রেই শনিবার সকাল থেকে পরিদর্শনে যান উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সোহাগ হোসেন। সকালে কালীগঞ্জ উপজেলার নোয়াপাড়া মায়েজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শনের সময় একটি কক্ষে প্রণয় দাস নামের এক ছাত্রের কাছে মোবাইল ফোন দেখা যায়। পরে তার কাছ থেকে মোবাইল ফোনটি জব্দ করে পরীক্ষা করে দেখা যায় তাতে গণিতের ‘খ’ সেটের এমসিকিউ প্রশ্নের হুবহু মিল থাকা প্রশ্ন রয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ওই কক্ষে আরো ৮ শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়। পরীক্ষা চলাকালীন হলের দায়িত্বে ছিলেন চুপাইর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সঞ্জিব কুমার দেবনাথ ও জাঙ্গালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক নজরুল ইসলাম।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সোহাগ হোসেন জানান, পরে তিনি ওই দুই শিক্ষক ও তিন শিক্ষার্থীকে আটক করে থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছেন। একইসঙ্গে তিন শিক্ষার্থীকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার ও ৬ শিক্ষার্থীকে একটি পরীক্ষার জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলম চাঁদ জানান, তিন শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া দুই শিক্ষককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় আনা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
এদিকে শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাহমুদুল হাসান জানান, নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর বেলা পৌনে ১১টার দিকে আমজাদ হোসেন নাহীন কেন্দ্রের বাইরে যাচ্ছিলেন। এসময় গেইটের কাছে সন্দেহজনকভাবে তাকে তল্লাশি করে তার কাছে রচনামূলক (গণিত) প্রশ্নপত্র পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। পরে কেন্দ্র সচিব ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবহিত করা হয়।
মাওনা বহমুখী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের সচিব শাহজাহান জানান, ঘটনা জানার পর তাৎক্ষণিক অভিযুক্ত শিক্ষককে চলতি বছরের জন্য দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
শ্রীপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, তাৎক্ষণিক তার বিরুদ্ধে পরীক্ষা সংক্রান্ত অনিয়মের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাকে কারণ দর্শানো নোটিশ ও পরে থানা পুলিশের হেফাজতে দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনী প্রক্রিয়া চলমান।
এদিকে, গাজীপুরের কালিয়াকৈরে একটি পরীক্ষা কেন্দ্রে সাধারণ গণিতের নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নপত্র বিতরণ নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলার গোলামনবী মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। ওই পরীক্ষা কেন্দ্রের ২০৪ নম্বরসহ কয়েকটি কক্ষে সাধারণ গণিতের রচনামূলক পরীক্ষা শেষে নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নপত্র বিতরণ নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়। চার সেট নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন নিয়ে শিক্ষার্থীদের বেঞ্চে পৃথকভাবে রেখে তাদের নিতে বলে কক্ষ পরিদর্শকরা (শিক্ষক)।
পাঁচ-সাত মিনিট পর ওই কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুস সাত্তার প্রবেশ করে দেখেন বেশকিছু শিক্ষার্থী একই সেট প্রশ্নে পরীক্ষা দিচ্ছে। এসময় ২০৪ নম্বরসহ কয়েকটি কক্ষের নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র নিয়ে যায়। প্রায় ১৫-১৬ মিনিট পর শিক্ষার্থীদের নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র দেওয়া হয়। এতে শিক্ষার্থীরা প্রায় ১৮-২০ মিনিট পরীক্ষা দিতে পারেনি। একারণে পরীক্ষা শেষে কেন্দ্রের সামনে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন ও উত্তরপত্র আটকে রাখার বিষয়টি কেন্দ্র ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা স্বীকার করলেও কেন্দ্র সচিব ওই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ একরামুল হক জানান, এটা ভিত্তিহীন, পরীক্ষা চলাকালে কেউ অভিযোগ করেনি। তবে তাদের পরীক্ষা খারাপ হওয়ার কারণে এ অভিযোগ তুলেছে।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ