২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১০:৩২

উখিয়ায় স্থানীয়রা আতঙ্কে এনজিওর সহযোগিতায় সক্রিয় প্রত্যাবাসন বিরোধী চক্র

কায়সার হামিদ মানিক, উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি :

কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মানবিক সেবার নামে বিভিন্ন কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত কতিপয় এনজিওর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ইন্ধনে উপ্তত্ত হয়ে উঠছে ক্যাম্পের পরিবেশ। এরই মধ্যে উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প মসজিদে ছুরিকাঘাতে মোয়াজ্জিন খুন, থাইংখালী তাজনিমারখোলা ক্যাম্পে প্রত্যাবাসন সক্রিয় মাঝিকে গুলি করে হত্যা, কুতুপালং লম্বাশিয়া ক্যাম্পে ধারালো কিরিচ দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে রোহিঙ্গা নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে ত্রাস সৃষ্টিসহ প্রত্যাবাসন বিরোধী নেতা মুহিববুল্লাহর নেতৃত্বে বিভিন্ন ক্যাম্পে বিক্ষোভের অপচেষ্টায় লিপ্ত ক্যাম্পে আশ্রিত কতিপয় প্রত্যাবাসনবিরোধী অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর অপতৎপরতায় সাধারণ রোহিঙ্গাদের মাঝে ঝিমিয়ে পড়েছে প্রত্যাবাসনের কাঙ্কিত স্বপ্ন। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও ভয়ভীতির মধ্যে রয়েছেন স্থানীয়রা। বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী, উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নিকারুজ্জামান চৌধুরী জানান, আনুষঙ্গিক কার্যক্রম শেষ হলে প্রত্যাবাসন দ্রুত শুরু করা হবে। এদিকে আন্তর্জাতিক ইস্যু রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে বানচাল করার উদ্দেশ্যে ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। প্রত্যাবাসন ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের ওপর কারণে-অকারণে দমন-নিপীড়ন, খুন, জখম, অপহরণ প্রভৃতি কর্মকান্ড নিয়ে সাধারণ রোহিঙ্গারা প্রত্যাবাসনবিরোধী রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে বলে একাধিক রোহিঙ্গা মাঝি জানিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, তাদের নামে পত্রপত্রিকায় খবর ছাপানো হলে প্রত্যাবাসনবিরোধী সন্ত্রাসীরা তাদের পেছনে লেগে থাকে। কুতুপালং ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা ডাক্তার জাফর আলম বলেন, বিবৃতি দেয়ায় এখন তাকে হত্যার হুমকি প্রদর্শন করা হচ্ছে। ফলে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পরিবেশ। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শেষ না হওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণ করতে ৫টি পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের কার্যক্রম চলছে। ইতিমধ্যে বালুখালী ও লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ২টি পুলিশ ক্যাম্পে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করেছেন এডিশনাল ডিআইজি মো. রুকন উদ্দিন। তিনি বলেন, পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের ফলে ক্যাম্পের নিয়মশৃঙ্খলা অনেকটা উন্নত হয়েছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও রোহিঙ্গা অধ্যুষিত ইউনিয়ন পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা নিয়ন্ত্রণে ৫টি পুলিশ ক্যাম্পের ২৫০ জন লোকবল যথেষ্ট নয়। তারপরও রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী দমনে সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে তাতে এলাকাবাসী খুশি। এলাকার মানুষ শান্তিতে ঘুমাতে পারছে না। কারণ ক্যাম্পে কর্মরত কতিপয় এনজিও মানবিক সেবার নামে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রত্যাবাসনবিরোধী রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে লালন পালন করায় তারা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। গত ১০ দিনে পালংখালী ইউনিয়নে যেসব অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে,৬ তা নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয়রা। গ্রামবাসী বলছেন, কখন তাদের ওপর জুলুম শুরু হয়। উখিয়া থানার ওসি আবুল খায়ের কয়েক দিনে সংঘটিত লোমহর্ষক ঘটনা নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের সংমিশ্রনে গঠিত সশস্ত্র কয়েকটি ডাকাত দল বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপস্থিতির সুযোগে বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের দমন করতে ইতিমধ্যেই ইনানী পুলিশ ফাঁড়িতে দক্ষ জনবল পাঠানো হয়েছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক চৌধুরী বলেন, ‘মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনকে সামনে রেখে কিছু এনজিও রোহিঙ্গাদের উসকানি দিচ্ছে। এসব এনজিও সরকারবিরোধী বিভিন্ন কর্মকান্ডে লিপ্ত রয়েছে। নিজেদের স্বার্থে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন রোধে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া দিয়ে রোহিঙ্গাদের উসকে দিচ্ছে। যে কারণে গত ১০ দিনের মাথায় ৪টি খুনসহ চুরি, ডাকাতি, প্রত্যাবাসনবিরোধী বিক্ষোভের মতো অনাকাঙ্কিত ঘটনা ঘটছে। তাই এসব এনজিওর বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা না নেয়া হলে আগামী ৩০ জানুয়ারি উখিয়ায় অবস্থান ধর্মঘট পালন করা হবে। উখিয়া থানার ওসি আবুল খায়ের বলেন, ক্যাম্পে অবস্থানরত কতিপয় রোহিঙ্গা উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করার চেষ্টা করছে। গত ১০ দিন রোহিঙ্গাদের হাতে তিন রোহিঙ্গা খুন হয়েছে।

দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ

প্রকাশ :জানুয়ারি ২৮, ২০১৮ ৮:৪৭ অপরাহ্ণ