কায়সার হামিদ মানিক, উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি :
মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ওপর যে অত্যাচার, নির্যাতন ও নৃশংস নিধনযজ্ঞ হয়েছে তা আইয়ামে জাহিলিয়াতকেও হার মানিয়েছে। জাহেলিয়াত যুগে কন্যা শিশুদের পাথর মেরে হত্যা করা হয়েছে,আর এখন আমাদের দেশ মিয়ানমারে মেয়েদেরকে বাবার সামনে ধর্ষণের পর আগুনে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে। এমন দৃশ্য কোন বাবাই সহ্য করতে পারে না। হাজার হাজার হতভাগা বাবা এই নজিরবিহীন দৃশ্য দেখে সর্বস্ব হারিয়ে এখানে পালিয়ে এসেছে। অশ্র“ভরা নয়নে কথাগুলো বলছিলেন, থাইংখালী হাকিমপাড়া ক্যাম্পের মাঝি আব্দুল্লাহ। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের স্বদেশ প্রত্যাবাসনের সময় ঘনিয়ে আসছে তাদের নিরাপত্তা ও নাগরিকত্ব নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়েই। পাশাপাশি রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সরকারের সাম্প্রতিক বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে রোহিঙ্গাদের জন্য সেখানে আরো কঠিনতর পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে। এসব কিছুকেই বিবেচনায় রেখেই আনসার ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের ডিরেক্টর মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন মনে করেন, বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং অপর প্রতিবেশী দেশ ভারত, চীনসহ সংশ্লিষ্ট দেশগুলো খেয়াল করছে এবং তারা এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে। হাকিমপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আরেক মাঝি মংডু এলাকার মশি উল্লাহ বলেন, রাখাইনের মুসলিম অধ্যুষিত মংডু এলাকায় এখনও চলছে কারফিউ। মংডু জেলা প্রশাসন বিভাগ গত ২৬ ডিসেম্বর থেকে এই কারফিউ জারি করেছে, যা চলবে আগামী ২৫ ফেব্র“য়ারি মাস পর্যন্ত। আমরা রাখাইনে আমরা মূলত চাষাবাদ করে জীবন যাপন করতাম। গত ২৫ আগস্টের পর রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে আসার পর আমাদের চাষ করা ধানসহ সব ফসল সরকারি উদ্যোগে কেটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাদের জমি-জমা ঘরবাড়ি বর্তমানে সরকারের নিয়ন্ত্রণে। প্রত্যাবাসন ইস্যুতে রোহিঙ্গা ক্যাম্প উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
এদিকে দেশে ফিরতে ইচ্ছুক থাইংখালী রোহিঙগা ক্যাম্পের হেড মাঝি মোহাম্মদ ইউনুছকে রোহিঙ্গারাই গুলি করে হত্যা করেছে। যারা এই মুহুর্তে মিয়ানমারে ফিরতে চান না তারা বলছে, মিয়ানমারে নাগরিকত্ব, বসতভিটা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তাদের ফেরত যাওয়ার পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি। এই পরিস্থিতিতে তারা দেশে ফিরতে চাইছে না। জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক সংস্থাও (ইউএনএইচসিআর) মনে করছে, রোহিঙ্গাদের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত না হলে তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো ঠিক হবে না। মানবাধিার সংস্থাগুলো এবং জাতিসংঘও বলছে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া স্বেচ্ছায় হতে হবে। কুতুপালং লম্বাশিয়া ক্যাম্পের মাঝি মোরশেদ আলম বলেন, আমরা রোহিঙ্গারা স্বদেশে ফিরতে চাই। তবে মিয়ানমারে কিছু পরিবর্তনও দেখতে চাই। য়েমন তাদের নাগরিকত্ব এবং নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চান। আমরা আমাদের মৌলিক অধিকার ফিরে পেতে চাই। আমাদের ফিরে যাওয়াটা যেন টেকসই হয়। আমাদের যেন আবার ফিরে আসতে না হয় এমনটাই জানান ফিরতে আগ্রহী রোহিঙ্গারা।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ