১৮ই জানুয়ারি, ২০২৫ ইং | ৪ঠা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | দুপুর ১:৪৩

মালয়েশিয়ায় রপ্তানি হয় নরসিংদীর সবজি : কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশের বৃহত্তম সবজি উৎপাদন এলাকা হিসেবে পরিচিত নরসিংদী। জেলার ছয়টি উপজেলায় উৎপাদিত ফল-ফলাদির মধ্যে সবজিরও বেশ সুনাম রয়েছে। তবে জেলার সবচেয়ে বড় পাইকারি বারৈচা বাজার, নারায়ণপুর বাজার, জংলি শিবপুর, মরজাল বাজার, শিবপুর, পালপাড়া বাজারগুলো শীতকালীন সবজিতে এখন সয়লাব। দাম ভালো পাওয়ায় খুশি এ অঞ্চলের কৃষকরা।

কৃষিবিভাগ বলছে, প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে জেলার বিভিন্ন স্থানে সবজির ক্ষেত নষ্ট হলেও ফলন এসেছে বেশি। তাই গত বছরের তুলনায় এবছর কৃষকরা ভালো সবজির দাম পাচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, নরসিংদীর মাটি পুষ্টি গুণে ভরপুর হওয়ায় এবছর জেলায় সবজির অভাবনীয় ফলন এসেছে। উৎপাদন ছাড়িয়ে গেছে লক্ষ্য মাত্রার চেয়েও বেশি। চলতি বছর কৃষিবিভাগ ৮ হাজার ৯২২ হেক্টর জমিতে সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৯ হাজার ১৫ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে ২৪৭৫ হেক্টর জমিতে শিম, লাউ ১১২৫ হেক্টর জমিতে, বেগুন ৭৭৯ হেক্টর জমিতে, ফুলকপি ৬১০ হেক্টর জমিতে, বাঁধা কপি ১৯৩ হেক্টর জমিতে, টমেটো ৪৪০ হেক্টর জমিতে, উচ্ছে ৫৬৫ হেক্টর ও মিষ্টি কুমড়া ২৮৫ হেক্টর জমিতে, বরবটি ১১৯ হেক্টর, শশা ৯৪, ডাটা ৪২২ হেক্টর, মূলা ৫৪৮ হেক্টর, পালং শাক ১০৭ হেক্টর, লাল শাক ৪৯৯, পেঁপে ১৬৭ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে।

সরেজমিনে নরসিংদীর শিবপুরের পালপাড়া পাইকারি বাজারে দেখা গেছে, শীতকালীন সবজিতে বাজার সয়লাব। রাজধানী কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ী, শ্যামবাজার, কুমিল্লা, সিলেটসহ বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকাররা সবজি ক্রয় করছেন। পাইকারদের পদচারণায় মুখরিত বাজারের অলিগলি। কৃষকদের কাছ থেকে সবজি ক্রয় করে স্তূপ দিয়ে রাখা হচ্ছে। সেই সবজি প্যাকেটজাত করে ট্রাকে তুলা হচ্ছে।

মনোহরদীর চরমান্দালীয়া এলাকার কৃষক আবু তালিব বলেন, এ বছর অতি ঘন কুয়াশার কারণে অধিকাংশ শিম গাছ মরে গেছে। একই কারণে ক্ষেতের ফুলকপি গাছ মরে গেছে। দ্বিতীয় দফায় ফুলকপির চারা রোপন করতে হয়েছে।

এদিকে শিমের উৎপাদন কম হয়েছে। তাই সার, ফসফেটসহ সবকিছুর খরচ ডাবল হয়েছে।

মালয়েশিয়ায় সবজি রপ্তানিকারী শিবপুর ধানুয়ার মো. মাইনুদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, বাজারের সবচেয়ে ভাল সবজি কিনে বাছাই করে তারপর প্যাকেটিং করে এয়ারপোর্ট পাঠানো হয়। প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ টন বিভিন্ন সবজি পাঠানো হয়। প্রতি কেজিতে আমরা ১০ টাকা করে পেয়ে থাকি। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের ৪০ শতাংশ সবজির চাহিদা মিটিয়ে থাকে নরসিংদীর শিবপুর, জঙ্গলী শিবপুর, নারায়ণপুর, যোশর, সৃষ্টিগড় কোন্দারপাড়া, বেলাবো, মনোহরদী ও রায়পুরা এলাকা থেকে।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বারৈচা বাসস্ট্যান্ডের পাশে বারৈচা পাইকা সবজি বাজার।  সরেজমিনে কথা হয় বিভিন্ন এলাকার সবজি চাষিদের সঙ্গে। তারা জানান, সপ্তাহের তিন দিন সোমবার, বুধবার ও শুক্রবার হাট বসে। শিবপুরের পালপাড়া ও রায়পুরার নারায়ণপুর পাইকারি সবজির হাট বসে বৃহস্পতিবার। প্রতি হাটবারের দিন বিভিন্ন প্রকারের শাক-সবজি শতাধিক ট্রাকভর্তি করে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়।

শিবপুর কৃষি অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন বলেন, চলতি বছর অতিবৃষ্টি ও ঘন কুয়াশার কারণে বেশকিছু কৃষকের ফসলের ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও দ্বিতীয় দফায় সবজি আবাদ করতে হয়েছে। তারপরও ফলন ভালো হয়েছে। কৃষকরা বাজারে ভাল দাম পাচ্ছেন।

নরসিংদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. লতাফত হোসেন বলেন, নরসিংদীতে এবার শীতের সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও অধিক পরিমাণ জমিতে সবজি আবাদ হয়েছে। বাজারে দামও পাচ্ছে ভালো। এ জেলার উৎপাদিত সবজি রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লার মানুষের সবজি চাহিদা পূরণ করছে। এছাড়া বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে এসব সবজি।

দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ

প্রকাশ :জানুয়ারি ২৭, ২০১৮ ৬:১৯ অপরাহ্ণ