কায়সার হামিদ মানিক,উখিয়া:
বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী প্রত্যাবাসনের পর রোহিঙ্গারা যাতে তাদের নিজ বাড়িঘরে যেতে না পারেন সেজন্য রাখাইনে রোহিঙ্গাদের অবশিষ্ট বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
রোহিঙ্গাদের সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে রাতের বেলায় সেনা সদস্য ও স্থানীয় মগরা নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ওপারের তুমব্রু এলাকায় রোহিঙ্গাদের ফেলে আসা বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করছে। বিশেষ করে রাতে সেনাবাহিনীর সহয়তায় মগরা এসে তুমব্রু এলাকার অক্ষত থাকা কয়েকটি বাড়িতে আগুন দিয়ে চলে যায়। এতে কেউ হতাহত না হলেও রোহিঙ্গাদের ফেলে আসা বাড়িঘরে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
অগ্নিসংযোগের এসব ঘটনা মূলত সেনাবাহিনীর সহায়তা এবং পরিকল্পনামাফিক মগরা ঘটাচ্ছে। কারণ, প্রত্যাবাসনের পর রোহিঙ্গারা স্বাভাবিকভাবে তাদের নিজ বাড়িতেই থাকতে চাইবে। এ কারণেই মিয়ানমারের প্রশাসন স্থানীয় মগদের সহায়তায় রোহিঙ্গাদের অবশিষ্ট বাড়িঘর পুড়িয়ে দিচ্ছে। এতে করে ফিরে যাওয়া রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের মধ্যেই বন্দী করে রাখা সম্ভব হবে।
এদিকে, ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট অনুযায়ী বাংলাদেশ সীমান্তের পাঁচটি পয়েন্টে ট্রানজিট ক্যাম্প তৈরির জন্য জায়গা নির্ধারণ করা হয়ে গেছে। সেসব জায়গায় ট্রানজিট ক্যাম্প স্থাপন করতে হবে। প্রত্যাবাসনের জন্য রোহিঙ্গাদের পরিবারভিত্তিক তালিকা তৈরির কাজও এগিয়ে চলছে। সব কাজ ঠিকঠাক থাকলেও রোহিঙ্গাদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিরও উদ্যোগ নিতে হবে যাতে রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় স্বদেশে ফেরত যেতে উৎসাহিত হয়।
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে আরো সময় প্রয়োজন উল্লেখ করে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার বলেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে অনেকগুলো পূর্বশর্ত পূরণের বিষয় আছে। কারণ, সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী মিয়ানমার সরকারকে রোহিঙ্গাদের নিরাপদে ও স্বেচ্ছায় ফেরত যাওয়ার মতো পরিবেশ তৈরি করতে হবে সেখানে। রোহিঙ্গাদের জন্য এটি করতে গেলে অনেক কিছু করণীয় আছে। সেগুলো মিয়ানমারে যেমন একইভাবে আমাদেরও প্রয়োজন আছে। সে হিসেবে আমাদের অংশের কাজ করছি। আশা করি, মিয়ানমার তাদের অংশের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করবে।
উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হেড মাঝি আবু তাহের জানান, নির্ধারিত তারিখে প্রত্যাবাসন না হলেও রোহিঙ্গাদের যাবতীয় দাবি-দাওয়া আদায় করে তাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। এজন্য রোহিঙ্গারা খুশি। তবে নির্দিষ্ট সময়ে রোহিঙ্গা যাওয়া শুরু হলে এখানে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের মাঝে উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি হতো। আবার কিছু কিছু প্রত্যাবাসন বিরোধী রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে বিলম্বিত করার অপচেষ্টা লিপ্ত হওয়ায় সাধারণ রোহিঙ্গাদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, রাখাইনে স্থানীয় মগ এবং সেনাদের অত্যাচারে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর সাড়ে ছয় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। কিছু কিছু রোহিঙ্গা নির্যাতন সহ্য করেও স্বদেশের ভিটে মাটি আঁকড়ে ধরে পড়ে আছে। তাদেরও বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়ার জন্য এসব অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটাচ্ছে স্থানীয় মগরা।
দৈনিক দেশজনতা /এন আর