ব্যস্ততা তার নিত্যসঙ্গী। পূর্ববাংলা থেকে আজকের বাংলাদেশ, একাধিক ইতিহাসের সাক্ষী বহন করে চলেছেন তিনি। প্রচলিত আছে, একজন কূটনীতিবিদের নিজস্বতা বলে কিছু থাকে না। হাজারও ব্যস্ততার মধ্যে পাওয়া গেলো দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলীকে। তিস্তাচুক্তি থেকে আসামের বাঙালি সমস্যার মতো একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন বাংলানিউজের সঙ্গে। এই প্রথম তিনি কলকাতায় এককভাবে সময় দিলেন কোনো সংবাদমাধ্যমকে।
সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী: ১৯৬৮ সালে যখন আমি প্রথম কূটনৈতিক সার্ভিসে যোগ দেই তখন অশান্ত সময় চলছে। তৎকালীন অধুনা বাংলাদেশে দীর্ঘ সময়ের পর আইয়ুব খানের পতন শুরু হয়েছে। কাজেই অশান্ত সময়ের মধ্যে আমার কূটনৈতিক সার্ভিসে যোগ দেওয়া। এরপর ১৯৭০ সালে ওয়াশিংটনে আমার প্রথম পোস্টিং হয় তৃতীয় সচিব পদে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা পাওয়ার পর ওয়াশিংটনে প্রথম বাংলাদেশ সরকারের দূতাবাস প্রতিষ্ঠা করা হয়। তারপর ২০০১ সালে পররাষ্ট্রসচিবের দায়িত্ব পালনের পর কূটনীতিক জীবন থেকে অবসর নেই। কাজেই বুঝলাম কূটনৈতিকদের জীবনে সংগ্রাম থাকে। সংগ্রাম থাকলে দায়িত্ব বাড়ে, দায়িত্ব থাকলে কাজ বাড়ে। কাজের চাপ বাড়লে ক্লান্তিও আসে এটাই স্বাভাবিক। তা কাটাতেও চেষ্টা করি। কাজেই আমি মনে করি ডিপ্লোম্যাট অ্যাজ দ্য অ্যাডজাস্টমেন্ট জব।
কর্মজীবনে একজন ডিপ্লোম্যাটেরে একাধিক দেশে দায়িত্ব পালন করতে হয়। এতে সন্তানের মানসিক বিকাশ বা শিক্ষার বিকাশে কতটা সমস্যায় হয় কিনা?
সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী: দেখুন, ডিপ্লোম্যাটদের সন্তানদের একটা ভিন্ন নামে ডাকা হয়। যাকে বলা হয় ‘ডিপ কিট’ মানে ডিপ্লোম্যাটিক কিটস। সাধারণভাবেই শিক্ষা জীবনে তার বাবার আটবার বদলি হয় আট জায়গায়। তারা লেখাপড়া করে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সিস্টেমে। আমি মনে করি এতে শিক্ষার সঙ্গে মনের বিকাশও ঘটে। গ্লোবালাইজেশনের যুগে তারা একটি কমপ্লিট কম্পোজিট পিকচার পায়। যাকে বলে গ্লোবাল নলেজ।
ভারতে তিন বছরের বেশি সময় কাটছে, কেমন সে অভিজ্ঞতা?
সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী: ৭১’র মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সংহতি ও সম্প্রীতির যে বন্ধন, তা আমি তিন বছর কাছ থেকে দেখেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদী আমাদের দু’দেশের সম্পর্ক উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। সম্পর্ক এতোটাই গভীর হয়েছে যে আজ আমাদের দু’দেশের মধ্যে প্রত্যেক বিভাগে সহযোগিতার ক্ষেত্র উন্মোচন হয়েছে। আমার ভারতে দায়িত্ব থাকার মধ্যে ৬৮ বছরের এক বড় সমস্যা ছিল ছিটমহল। সেই ছিটমহল হস্তান্তরের মতো ঐতিহাসিক বিষয়ের সাক্ষী রয়েছি। ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধুর এক দূরদর্শিতার মধ্যদিয়ে ‘ইন্দিরা-মুজিব’ নামে একটা চুক্তি হয়েছিল। সেই চুক্তি বাস্তবায়ন হয় ২০১৫ সালে। একটা সময় ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে শুধুলেনদেন ছিল ইলিশ আর জামদানির। এখন আর তা নয়। একটা কোয়ালিটি চেঞ্জ হয়েছে। একাধিক বিভাগে আমাদের দু’দেশের মধ্যে একাধিক মউ চুক্তি হয়েছে। আর এই ইতিহাসের সাক্ষী আমি নিজেও। এছাড়া ভারতের সঙ্গে আট প্রতিবেশী দেশ আছে। তারমধ্যে বাংলাদেশ একমাত্র দেশ যার সঙ্গে স্থল ও নৌ-সীমানা নিয়ে কোনো বিরোধ নেই।
বাংলানিউজ: আপনি এমন এক রাজ্যের কাছাকাছি আছেন যেখান থেকে গোটা ভারতের নীতিনির্ধারণ হয়। সরাসরি জানতে চাই তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে।
সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী: দেখেন, ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ৫৪টি অভিন্ন নদী রয়েছে। যেটা ভারতের মধ্যদিয়ে বাহিত হয়ে বাংলাদেশ হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে। তিস্তা ৫৪টির মধ্যে একটি নদী। যার জন্ম সিকিমে এবং পশ্চিমবাংলা থেকে বাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে যমুনা নদীতে মিলে বঙ্গোপসাগরে