সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন- বর রুবেল বেপারীর বাবা আব্দুর রশিদ বেপারী (৭০), বোন লিজা (২৪), ভাগনী তাবাসসুম(৬) ও ভাবী রুনা (২৪), ভাবীর বোন রেনু (১২), বরের ভাতিজা তাহসান (৪), ফুপা কেরামত বেপারী (৭০), বরের প্রতিবেশী মফিজুল মোল্লা (৬৫), মাইক্রোবাস চালক বিল্লাল (৪০)।
এদিকে স্বজনরা হাসপাতাল থেকে মরদেহ আনার পর থেকেই প্রতিবেশীরা ভিড় করছেন শোকস্তব্ধ পরিবারের বাড়িতে। বাড়ির সামনে স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে গিয়েছে বাতাস। স্বান্তনা দেওয়ার ভাষা নেই প্রতিবেশীদের।
স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কনের নাম নিশি। তিনি ঢাকার কামরাঙ্গী চরের আব্দুর রশীদের মেয়ে। আজ দুপুর পৌনে একটার দিকে কাবিনের জন্য কনের বাড়িতে বর রুবেল ও তার স্বজনরা দুটি মাইক্রোবাসে যাত্রা শুরু করে। দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত মাইক্রোতে যাত্রী ছিলেন ১২ জন।
রুবেলের চাচাতো বোন জামাই আব্দুর রউফ বলেন, আমার ঢাকা থেকে এই বিয়েতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দুর্ঘটনার খবর পেয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে আসি। বিয়ের আনন্দ একটি দুর্ঘটনায় শেষ হয়ে গেছে। শনিবার (২২ নভেম্বর) সকাল ১০টায় ব্রাক্ষ্মণগাও স্কুল মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর হলদিয়া সাতঘরিয়া কবরস্থানে তাদের দাফন করা হবে।
একমাত্র ছেলে ও স্ত্রীকে হারিয়ে স্তব্ধ বরের বড় ভাই সোহেল বেপারী। তিনি বলেন, আল্লাহ যাতে কাউকে এরকম কষ্ট না দেয়।
বর রুবেলের বড় ভাই সোহেলের শ্বশুর আলী নূর সরকার। দুর্ঘটনায় তিনি হারিয়েছেন দুই মেয়ে ও একমাত্র নাতিকে। কান্নারত অবস্থায় তিনি বলেন, কয়দিন আগে আমার মেয়ে রেনু কলা খেতে চেয়েছিল । ওর জন্য চর থেকে দেশি কলা কিনে এনেছি। নুরজাহান খান উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণিকে পড়ত। সে ক্লাসে ফার্স্ট গার্ল ছিল।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর রুবেলের খালাতো ভাই জাহাঙ্গীর (৪২), প্রতিবেশী জয়নাল আবেদীন (৫২) ও সোহরাব (৫৫) ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এরমধ্যে জাহাঙ্গীরের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এদিকে দুর্ঘটনার কারণ তদন্তে পাঁচ সদ্যসের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আসমা শাহীনকে প্রধান করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। অন্য সদস্যরা হলেন-শ্রীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, শ্রীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক।
তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান জানান, সড়ক দুর্ঘটনার নিহতের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত ৯ জনের দাফন কাজ সম্পন্ন করতে প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে।