নিজস্ব প্রতিবেদক:
এমপিওভুক্তির দাবিতে অনশনের চতুর্থ দিনে নন এএমপিও শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার এবং সাধারণ সম্পাদক বিনয় ভূষণ রায়। এর মধ্যে দ্বিতীয় জনকে কিছুক্ষণ আগে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতাল নেয়া হয়েছে। গত রবিবার থেকেই না খেয়ে অবস্থান নিয়ে আছেন শিক্ষকরা। এর আগে পাঁচ দিন অবস্থান কর্মসূচিতে সরকারের কাছে সাড়া না পেয়ে শনিবার অনশন কর্মসূচি ঘোষণা করেন শিক্ষক নেতারা।
শিক্ষকরা জানান, তাদের আমরণ অনশনের চতুর্থ দিনে ৫২ শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের অনেকেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। আবার অনেকে চিকিৎসা নিয়ে আবার অনশনে যোগ দিয়েছে। তবে অসুস্থ হলেও কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে এখনও অটল শিক্ষকরা। অনশন থেকে ফেরাতে আশ্বাস নিয়ে আশা শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে মঙ্গলবারই ফিরিয়ে দিয়েছেন শিক্ষকরা। তারা বলছেন, এবার সুনির্দিষ্ট ঘোষণা অথবা প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস না পেলে তারা বাড়ি ফিরে যাবেন না।
নন এএমপিও শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার অসুস্থ হয়ে স্যালাইন লাগানোয় এখন মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করছেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাশিদুল ইসলাম রাশেদ। তিনি বলেন, ‘আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনশন চলবে। আমরা শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাখান করছি। তার আশ্বাসে আমরা আশ্বস্ত হই নাই। কারণ এ ধরনের আশ্বাস তিনি আগেও দিয়েছেন।’ দুপুরের আগে আগে অসুস্থ হয়ে পড়েন শিক্ষকদের আরেক নেতা বিনয় ভূষণ রায়। তার অবস্থা গুরুতর হওয়ার প্রেক্ষিতে খবর দেয়া হয় অ্যাম্বুলেন্সকে। তাকেও হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
শিক্ষকরা জানান সারা দেশের সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অন্যের ভাগ্য গড়তে শ্রম দিলেও নিজের সন্তান আর পরিবারের ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তাদের। সরকার থেকে অর্থ না পাওয়ায় অল্প কিছু বেতন বা ক্ষেত্র বিশেষ বিনা পয়সায় পড়াতে হচ্ছে তাদের। কেউ কেউ জানিয়েছেন, ১৮ বছর চাকরি করেও এক টাকা বেতন পাচ্ছেন না তারা। বাংলাদেশে সব শেষ ২০১০ সালে এমপিওভুক্তি করা হয় এক হাজার ৬২৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে। এরপর আর অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এই সুবিধার আওতায় আনা যায়নি বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রী দেশের বাইরে যাওয়ার আগে তার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে। তিনি দেশে ফিরলে অর্থের সংস্থান করবেন।
এমপিও আওতায় আনা হলে শিক্ষকদের মূল বেতনের শতভাগ দেয় সরকার। আর সঙ্গে কিছু ভাতাও পাওয়া যায়। এর সঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কিছু টাকা পাওয়া গেলে সংসার চালিয়ে নেয়া যায়। আবার এমপিও সুবিধার বাইরে থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বেশিরভাগ গ্রাম এলাকায় হওয়ায় তাদের ছাত্র সংখ্যা এবং আয়ও কম। ফলে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষকদেরকে সেভাবে বেতন সহায়তা দিতে পারে না। একটি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী এমপিও সুবিধার বাইরে থাকা শিক্ষকদেরকে এই সুবিধার আওতায় আনতে হলে বছরে এক থেকে দেড় হাজার কোটি টাকা লাগবে। জাতীয় বাজেট চার লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে বাড়তি এই টাকার যোগান দেয়া কঠিন হবে না বলে দাবি করছেন শিক্ষক নেতারা।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি