২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সন্ধ্যা ৭:৪১

বিএনপি চেয়ারপার্সনের অফিস তছনছ

পুলিশ কর্তৃক বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশানস্থ কার্যালয়ে তল্লাশীর নামে তছনছ করার ঘটনায় সারা দেশে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। পুলিশের এহেন কার্যকলাপকে সচেতন মহল গর্হিত ও ন্যাক্কারজনক বলে অভিহিত করেছেন। গত শনিবার সকালে পুলিশ এ তল্লাশী চালায়। গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে,সকাল সাতটার দিকে একদল পুলিশ গুলশানের ৮৬ নম্বর রোডের ৬ নম্বর বাড়িটি ঘিরে ফেলে। এরপর তারা মূল ভবনে প্রবেশ করে সেখানে অবস্থানরত দুই কর্মচারিকে একটি কক্ষে আটকে রাখে। পুলিশ ভবনটির বিভিন্ন কক্ষে থাকা কম্পিউটার, কাগজপত্র তছনছ করে তল্লাশী চালায়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা তল্লাশী চালিয়ে তারা ‘শূন্য’ হাতেই ফিরে যায়। পুলিশ বলেছে- একটি অজ্ঞাতনামা  জিডি’র সূত্র ধরে আদালত থেকে পরোয়ানা নিয়ে তারা এ অভিযান চালিয়েছে। উক্ত জিডিতে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে রাষ্ট্রবিরোধী কাগজপত্র আছে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। বেনামি ওই জিডি’র সূত্র ধরেই পুলিশ এ অভিযান চালায়। অভিযান শেষে পুলিশ কর্মকর্তারা ‘কিছুই পাওয়া যায়নি’ বলে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের জানিয়েছেন।
এ ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিএনপি। অভিযান চলাকালে উপস্থিত কয়েকজন নেতা অভিযোগ করেন, দলের চেয়ারপার্সনকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করতেই এ অভিযান চালানো হয়েছে। তারা বলেন, বিএনপিকে হীনবল করার চক্রান্তের অংশ হিসেবে নেতাকর্মীদের মধ্যে ভীতি সঞ্চারই ছিল এ অভিযানের মূল উদ্দেশ্য। পুলিশ যখন তল্লাশী চালাচ্ছিল, সে সময়  কার্যালয়ের বাইরে কয়েক শ’ নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। তারা খন্ড খন্ড বিক্ষোভ মিছিলও করেন। এছাড়া সারাদেশে বিভিন্ন স্থানে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ মিছিল করেছে বিএনপি নেতাকর্মীরা। এদিকে চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে পুলিশের হয়রানিমূলক তল্লাশীর প্রতিবাদে বিএনপি রবিবার সারদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেয়।
বেগম খালেদা জিয়া শুধু বিএনপি চেয়ারপার্সন নন, তিনি এদেশের তিন বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তাঁর বাসস্থান কিংবা রাজনৈতিক কার্যালয়ের তাই আলাদা একটি ভাবমর্যাদা রয়েছে। অভিযোগকারীর নাম ঠিকানা বিহীন অর্থাৎ বেনমি একটি জিডি’র ভিত্তিতে সে কার্যালয়ে পুলিশের তল্লাশী অভিযান চালানো তাই কতোটা যুক্তিযুক্ত হয়েছে তা অবশ্যই ভেবে দেখা দরকার। যেখানে চাক্ষুস স্বাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে অভিযোগ পেয়েও পুলিশ নড়ে চড়ে না সেখানে একটি ভূয়া জিডি’র ভিত্তিতে দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে তল্লাশী অভিযান চালানোর পেছনে যে সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে তা বুঝতে কারো বাকি আছে বলে মনে হয় না। এখানে পুলিশ একটু চালাকির আশ্রয় নিয়েছে। তারা উল্লিখিত জিডি’র সূত্র ধরে আদালতের পরোয়ানা নিয়ে এসেছিল বলে জানিয়েছে। এটা যে  নিজেদের উদ্দেশ্য প্রণোদিত কার্যকলাপকে আদালতের পরোয়ানার চাদরে ঢেকে দিয়ে ‘যুক্তিযুক্ত’ করার প্রয়াস সে কথা বলাই বাহুল্য।
ঘটনাকে অনভিপ্রেত, অনাকাঙ্খিত ও দুঃখজনক বলে অভিহিত করে দেশের বিশিষ্টজনেরা বলেছেন, এটা হয়রানি ছাড়া আর কিছুই নয়। সরকারের নির্দেশ ছাড়া পুলিশ এ কাজ করেছে তা বিশ্বাস করা যায় না। বস্তুত. বিএনপিকে বিব্রত, বিধ্বস্ত ও হত্যোদম করতে সরকার নানা রকম অগ্রণতান্ত্রিক পদক্ষেপ নিচ্ছে। বছরের পর বছর মিথ্যা মামলা গ্রেফতার অভিযান চলছে। সভা সমাবেশ করতে দেয়া হয় না। ভিশন -২০৩০ ঘোষণার পর যে মুহূর্তে বিএনপি গা ঝাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করেছে, অমনি অজ্ঞাত নামা ব্যক্তির জিডির সূত্র ধরে চেয়ার০পার্সনের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে সরকার ভীতিকর অবস্থা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে এ ধরনের কর্মকান্ড শুধু অনাকাঙ্খিতই নয়, অনৈতিক এবং গণতান্ত্রিক রীতি নীতির বরখেলাপও বটে। সরকারের এহেন কার্যকলাপ বিরোধী দলকে বিশৃঙ্খলার রাজনীতিতে প্রবৃত্ত হওয়ার উস্কানি বললেও বোধকরি অত্যুক্তি হবে না।
আমরা এ ঘটনায় উদ্বিগ্ন। কেননা, এ ধরনের সরকারি ক্রিয়াকলাপ গণতন্ত্রের জন্য শুভ ফল বয়ে আনে না। আমরা আশা করবো, সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে এবং বিরোধী দলগুলোকে তাদের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যকলাপ নির্বিঘেœ চালানোর পরিবেশ সৃষ্টিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

 

প্রকাশ :মে ২১, ২০১৭ ২:২৯ অপরাহ্ণ