নিজস্ব প্রতিবেদক:
সিঙ্গাপুরে জঙ্গি তৎপরতায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে বেশ ক’জন বাংলাদেশি গ্রেফতার হওয়ায় দেশটিতে জনশক্তি রপ্তানিতে ধস নেমেছে। গত বছর বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৫৫ হাজার শ্রমিক সিঙ্গাপুর গেলেও চলতি বছর তা নেমে এসেছে ৩৮ হাজারে। একই সঙ্গে সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কড়াকড়ির মধ্যে পড়তে হচ্ছে। এ অবস্থায় সমস্যা সমাধানে দেশটির সঙ্গে কূটনীতিক তৎপরতা চালানোর তাগিদ সংশ্লিষ্টদের। বাংলাদেশের অন্যতম শ্রম বাজার সমৃদ্ধশালী দেশ সিঙ্গাপুর। প্রতি বছরই বাংলাদেশ থেকে গড়ে ৫০ হাজার দক্ষ ও আধা দক্ষ শ্রমিক নিয়ে যায় দেশটি। মূলত জাহাজ নির্মাণ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্যই সবচেয়ে বেশি রয়েছে বাংলাদেশি শ্রমিক। কিন্তু গত বছরের মে মাসে জঙ্গি সংগঠন আইএস-এর সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণে আট বাংলাদেশি শ্রমিককে আটক করে দেশে ফেরত পাঠায় সিঙ্গাপুর সরকার। পরবর্তীতে বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের গ্রেফতার দেখিয়েছে। জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগে শ্রমিক আটক হওয়ায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া পড়ে সিঙ্গাপুরের জনশক্তি রপ্তানিতে।
সিঙ্গাপুরের এনবিএল মানি ট্রান্সফার লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো জাকারিয়া হাবিব বলেন, ‘আইএস এর সঙ্গে সরাসরি কর্মকাণ্ডে জড়িত না, হয়তো বা কিছু কর্মকাণ্ডে ওরা মন্তব্য বা যেটাই করেছে, সেকারণে সিঙ্গাপুর সরকার তাদের দেশের জন্য সিকিওর ফিল করে নাই। এই কারণ দেখিয়ে ওরা তাদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে।’ জনশক্তি রপ্তানি অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুরে শ্রমিক গিয়েছিলো ৫৪ হাজার ৭৩০ জন। কিন্তু চলতি বছরের ১১ মাসে শ্রমিক গেছে ৩৭ হাজার ৬৩৬ জন। প্রবাসী শ্রমিকদের একজন বলেন, ‘সিঙ্গাপুরের আইন-কানুন সবই বেড়ে গেছে। তাই এখন আর আগের মতো কাজ করেও শান্তি পাইনা।’ আরেক প্রবাসীর বক্তব্য, ‘বেশিরভাগ কোম্পানিই আর আগের মত নাই। এখন ঠিকমতো বেতন অনেকে পায় না।’ তবে সিঙ্গাপুরে শ্রমিক যাওয়ার হার কমে যাওয়াকে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হিসেবে দেখছে জনশক্তি রপ্তানি অধিদপ্তর।
কিন্তু বাংলাদেশি শ্রমিকদের দাবি, বাংলাদেশের পাশাপাশি আরও কয়েকটি দেশের শ্রমিক জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগে আটক হলেও তাদের দেশ পরিস্থিতি সামাল দিতে পেরেছে। এ অবস্থায় সিঙ্গাপুরের সঙ্গে কূটনৈতিক আলাপ চালিয়ে যাওয়ার তাগিদ দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। জনশক্তি রপ্তানি অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক জহিরুল আলম মনজুর বলেন, ‘ডিমান্ড এবং সাপ্লাই অনুসারেই সিঙ্গাপুরে আমাদের কর্মী যাচ্ছে, অন্য কোনো কারণে না।’ ডায়মন্ড সিমেন্ট লিমিটেডের পরিচালক হাকিম আলি বলেন, ‘রেমিটেন্সের জন্য সরকারকে এখানে ভালো একটা উদ্যোগ নিতে হবে। দুই দেশের কূটনৈতিক পর্যায়ের আলাপ-আলোচনা করে এটার সমাধানে আসা দরকার।’
সিঙ্গাপুরে বর্তমানে প্রায় দেড় লাখ শ্রমিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন। নানা জটিলতার কারণে হয়তো আগের সেই সুদিন নেই। তারপরও প্রতি রোববার সিঙ্গাপুরের রবার্টসল্যান্ড হয়ে ওঠে একখণ্ড বাংলাদেশ। হাজার হাজার তরুণ এখানে সমবেত হয়ে এদিন ভাগাভাগি করে নেয় সুখ-দুঃখ, ভুলে থাকার চেষ্টা করে পরিবার-পরিজনদের ছেড়ে থাকার কষ্ট।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি