২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৮:৩৭

নির্বাচনে হেফাজতে ইসলাম কোন দলকে সমর্থন করবে না : মুফতি ফয়জুল্লাহ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

মুফতি ফয়জুল্লাহ, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব ও হেফাজতে ইসলামী বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব। চারদলীয় জোট সরকারের অংশীদার ও পরবর্তীকালে ২০ দলীয় জোটের রাজপথের সঙ্গী ইসলামী ঐক্যজোট সম্প্রতি জোট থেকে বের হয়ে এসেছে। জোট থেকে বের হবার কী কারণ, সরকারের সাথে কী ধরনের বোঝাপড়া এবং বিশ্বরাজনীতিতে বর্তমান সৌদি আরবের ভূমিকা নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো।

জোট সরকারের পাঁচ বছরের শাসনামলে ইসলামী ঐক্যজোটের সঙ্গে বিএনপির মনমালিন্যের খবর কয়েকবার মিডিয়ায় এসেছে। বিশেষ করে তৎকালীন চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনির সঙ্গে মন্ত্রিত্ব নিয়ে টানাপোড়েনের বিষয়টি কয়েকবার উঠে এসেছে মিডিয়ায়। পরবর্তীকালে চারদলীয় জোটের বিরোধীদলে অবস্থানের সময়ও এই জোট অটুক থাকে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে ইসলামী ঐক্যজোট বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট থেকে বের হয়ে এসেছে। যদিও ২০ দলীয় জোট থেকে বলা হয়েছে ইসলামী ঐক্যজোটের একটি অংশ জোট থেকে সরে গেলেও ২০ দলীয় জোট অটুক রয়েছে। এ প্রসঙ্গে মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, অনেকেই না জেনে ও বুঝে বলছেন যে ইসলামী ঐক্যজোটের একটি অংশ বের হয়ে গেছে। কিন্তু এই তথ্য একেবারেই ঠিক নয়। কারণ ইসলামী ঐক্যজোট একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। আর নিবন্ধিত দলটিই ২০ দলীয় জোট থেকে চলে এসেছে। সেক্ষেত্রে ইসলামী ঐক্যজোট জোটের একটি অংশ এটি বলা যাবে না।

মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের নিজস্ব পরিকল্পনা ও কর্মপন্থা রয়েছে। ইসলামী ঐক্য জোটেরও তেমনি নিজস্ব কর্মপন্থা রয়েছে। ইসলাম কায়েমের বিষয়ে ইসলামী ঐক্যজোট যে স্বপ্ন দেখে, সেগুলো কিভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তরান্বিত করা যায় সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের নিজস্ব ভাবনা ও চিন্তা থেকেই জোট থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর এই সিদ্ধান্ত অনেক ভালো হয়েছে ও ফলপ্রসূ হয়েছে।

তিনি বলেন, চলার পথে কেউ আমাদের বন্ধু হবে আবার কেউ শত্রু হবে। সরকার ইসলামী ঐক্যজোটের বন্ধু না, আবার দুশমনও না। আমি পরিষ্কার করে বলছি ইসলামী ঐক্যজোট স্বতন্ত্র অবস্থান নিয়েছে। আমাদের কারো সাথে কোন সখ্যতা ও যোগসূত্র নেই। আর এভাবেই চলতে চলতে আমরা এগিয়ে যাবো।

সরকারের সাথে এখন আপনাদের সম্পর্ক কেমন? জানতে চাইলে মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, আমাদের আমির মুফতি আমিনী সাহেব বলতেন, কোন দলকে তার আদর্শ ও কাজ দিয়ে মূল্যায়ন করতে হবে। কেউ আওয়ামী লীগ করে এজন্য সে শত্রু আবার কেউ অন্যকোন দল করে এজন্য সে মিত্র বিষয়টি এভাবে বিবেচনা করা যাবে না।

তিনি বলেন, ভুল ভ্রান্তি সবারই থাকে। অতীতে আওয়ামী লীগও অনেক ভুল করেছে, অনেক বিভ্রান্তিমূলক কাজও করেছে। কাজের মাধ্যমে প্রমাণিত হবে যে তারা কী ইসলাম বিরোধী না ইসলামের পক্ষে। সম্প্রতি তাদের কিছু ইতিবাচক কাজ আমরা দেখতে পাচ্ছি। আগে কি করেছিল সেটি বিবেচনা না করে এখন তাদের চিন্তাভাবনাগুলো কি সেটি বিবেচনায় নিতে হবে। তাদের ভাবনা যদি কওমি মাদ্রাসা, সদন ও শিক্ষার পক্ষে হয়, কোরআন হাদিসের পক্ষে হয়, আলেম ওলামারা যা বলেন তা শুনবার মানসিকতা থাকে তাহলে অবশ্যই বুঝতে হবে তাদের চিন্ত মানসিকতার মাঝে পরিবর্তন হয়েছে। তাহলে আমি মনে করি নিশ্চয় এটি ইতিবাচক।

মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, যেকোন নির্বাচনে হেফাজতে ইসলাম কোন দলকে সমর্থন করবে না। আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়েও হেফাজতের কোন চিন্তা বা পরিকল্পনা নেই। হেফাজতে ইসলাম একটি অরাজনৈতিক জনকল্যাণমুখী সংগঠন। রাজনৈতিক কর্ম অতীতে কখনো অংশ গ্রহণ করেনি ভবিষ্যতেও করবে না।

বর্তমান সৌদি প্রশাসন ২০৪১ সালকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। অর্থনৈতিক সংস্কারের পাশাপাশি নারীদের স্বাধীনতা ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা দিচ্ছে সৌদি সরকার। বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখছেন। এর উত্তরে মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, উন্নয়নের জন্য অর্থনৈতিক সংস্কার মন্দের কিছু না। তবে যে মাটিতে আল্লাহর প্রিয় নবী মুহাম্মদ (স.) শুয়ে আছেন এবং বাইতুল্লাহ শরিফ রয়েছে সেখানে কোন ইসলাম বিরোধী কাজ হবে তা আশা করি না। যদি সেরকম কিছু হয় তাহলে আমরা ও সমস্ত মুসলিম বিশ্ব এক হয়ে এর প্রতিবাদ করবো।

তিনি বলেন, ইসলাম কোন দেশ জাতি বা গোষ্ঠির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। কোন মানুষের উপর ইসলাম নির্ভর করে না। ইসলাম কোরআন সুন্নাহর আলোকেই প্রণীত হয়, এবং পরিচালিত হয়। নবী যে দীন নিয়ে এসেছেন, তা সামাজিক জীবনে রাষ্ট্রীয় জীবনে বাস্তবায়ন করা আমাদের কর্তব্য। তবে সৌদি আরবের বর্তমান প্রশাসন সে দায়িত্ব বাস্তবায়ন করতে পারবে কিনা সে বিষয়ে অনেকেই সন্দেহ পোষণ করেন। তাদের মতো আমারও সে সন্দেহ রয়েছে।

আরবের ধনী শ্রেণি ও রাজ পরিবারের সদস্যদের মাঝে ইহুদি ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের বিয়ের প্রবণতা দেখা যায়। সেটি ইসলাম কিভাবে অনুমোদন কওে, জানতে চাইলে এ প্রশ্নের জবাবে মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, আহলে কিতাবের অনুসারীদের বিয়ে করা ইসলাম অনুমোদন করে। তবে সঠিক আহলে কিতাব অনুসারী হতে হবে। কিন্তু এখন যারা আহলে কিতাবের অনুসারী দাবি করেন. তারাতো সঠিক আহলে কিতাবের অনুসারী নন। ইঞ্জিল তৌরাত বিকৃত হয়েছে অনেকবার। সঠিক আহলে কিতাবের অনুসারীদের সাথে বিয়ে শরীয়ত অনুমোদ করে। তবে এ ধরণের কাজে না যাওয়ায় উত্তম।

দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ

প্রকাশ :ডিসেম্বর ২৫, ২০১৭ ১:০৪ অপরাহ্ণ