২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৩:২৫

অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনশনরত শিক্ষকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

প্রধান শিক্ষকদের পরের গ্রেডে বেতনের দাবিতে আমরণ অনশনে অংশ নেওয়া শিক্ষকরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। ১০০-১৫০ জন শিক্ষক এরই মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। যারা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে শিক্ষক নেতারা দাবি করেছেন। তবে আমাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল প্রতিনিধি জানান, এখন পর্যন্ত আজমল, সালমান মুক্তারি, আব্দুল হাই, জাহিদ হাসান, ইমদাদুল, নাসরিন ও রফিকুল ইসলাম নামে এই সাতজন শিক্ষক জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন।

বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক মহাজোটের আহ্বানে দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে আমরণ অনশন। অনশনে অংশ নিয়েছেন সারা দেশ থেকে আসা হাজার হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা।

‘আমাদের দাবি আমাদের দাবি, মানতে হবে মানতে হবে’, ‘বিজয় না নিয়ে আমরা ফিরে যাব না’ আমরা ঘরে ফিরে যাবো না যাবো না’ প্রভৃতি স্লোগানে শিক্ষকরা রোববারও মুখরিত করে রেখেছেন শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ। বক্তব্য ও সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে দাবি তুলে ধরেছেন তারা। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে শনিবার সকাল ১০টা থেকে অনশন করছেন শিক্ষকরা।

অনশনে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাবেরা বেগম বলেন, আমরা মরে যাবো তবুও এখান থেকে যাবো না। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শ্রেণিকক্ষে ফিরবো না। আমরা চাই আমাদের বেতন বৈষম্য দূর হোক। আমাদের আন্দোলন মর্যাদার। একই স্কুলে থেকে দুই রকমের মর্যাদা চাই না। আমাদের ১০০-১৫০ জন শিক্ষক ও শিক্ষিকা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের এখন ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এদের মধ্যে অনেকের অবস্থা মুমূর্ষু।

শিক্ষক নেতাদের ভাষ্য অনুযায়ী, বেতন বৈষম্য দূর করে প্রধান শিক্ষকদের পরের ধাপে (গ্রেডে) বেতন কাঠামো ঘোষণা করার আগ পর্যন্ত তাদের এই কর্মসূচি চলবে। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন শিক্ষক নেতারা।

বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মহাজোটের আহ্বানে কর্মসূচিতে আরও অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি, বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজ, জাতীয় প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক ফাউন্ডেশন, সহকারী শিক্ষক ফ্রন্টসহ ১০টি সংগঠনের অধীনে হাজার হাজার শিক্ষক।

জানা গেছে, ২০১৫ সালে ঘোষিত ৮ম জাতীয় পে-স্কেল অনুযায়ী প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকরা (২য় শ্রেণি) ১১তম গ্রেড অর্থাৎ ১২ হাজার ৫০০ টাকা এবং প্রশিক্ষণ ছাড়া প্রধান শিক্ষকরা ১২তম গ্রেডে বেতন পাচ্ছেন ১১ হাজার ৫০০ টাকা।

প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকরা ১৪তম গ্রেডে অর্থাৎ ১০ হাজার ২০০ টাকা বেতন পাচ্ছেন আর প্রশিক্ষণ ছাড়া সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ১৫তম গ্রেডে ৯ হাজার ৭০০ টাকা। কিন্তু বর্তমানে নতুন স্কেলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকরা ১০ম গ্রেড এবং প্রশিক্ষণ ছাড়া প্রধান শিক্ষকরা পাবেন ১১তম গ্রেডে, যা অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন। সহকারী শিক্ষক, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও প্রশিক্ষণ ছাড়া প্রধান শিক্ষকরা যে বেতন পাবেন তার পরের ধাপে তারা বেতন চান। অর্থাৎ প্রধান শিক্ষকদের এক ধাপ নিচে বেতন চান সহকারী শিক্ষকরা।

অনশনে অংশ নেওয়ার আগে শিক্ষকরা জানান, তাদের এই দাবি পূরণের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সংসদ সদস্য, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় পর্যায়ে প্রাথমিক শিক্ষা উপ-পরিচালকদের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। তারা আরো জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিবের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনসহ সারাদেশে জেলা পর্যায়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন, এরপরও সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ

প্রকাশ :ডিসেম্বর ২৪, ২০১৭ ৩:৫২ অপরাহ্ণ