২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৩:৩৭

রংপুর সিটির শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ শেষ, চলছে গণনা

রংপুর প্রতিনিধি:

উৎসবমুখর পরিবেশে শেষ হয়েছে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। বৃহস্পতিবার সকাল আটটা থেকে শুরু হওয়া এই ভোট উৎসব শেষ হয় বিকাল চারটায়। গণতন্ত্রের উৎসবে শামিল হতে স্বতস্ফূর্তভাবে সাড়া দিয়েছে রংপুর নগরীর ভোটাররা। কিছু অভিযোগ থাকলেও সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই শেষ হয়েছে ভোট। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে শুরু হয় ভোটগণনা। তারা আশা করছেন সন্ধ্যা নাগাদ আসতে শুরু করবে ভোটের ফলাফল। রাতেই জানা যাবে কে হচ্ছেন রংপুর সিটির পরবর্তী নগরপিতা।

নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সবধরনের আয়োজন নেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বিঘ্নে ভোট উৎসব শেষ করতে প্রশাসনের প্রতি কঠোর নির্দেশ ছিলো ইসির। প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হওয়া এই নির্বাচনে লড়াই হয়েছে মূলত নৌকা, লাঙ্গল আর ধানের শীষের মধ্যে। নির্বাচনকে নির্বিঘ্ন করতে পুরো নগরীতে দায়িত্ব পালন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। নির্বাচনে ৩৩টি ওয়ার্ডে মোট ১৯৩টি কেন্দ্রে নেয়া হয় ভোট। এর মধ্যে অধিক গুরুত্বপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে প্রশাসনের চিহ্নিত করা ১০৮টি কেন্দ্রের আশপাশে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়। ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিটি কেন্দ্রে ১০ জন করে পুলিশ ও ১৪ জন করে আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়। আর সাধারণ কেন্দ্রে আট জন পুলিশ ও ১৪ জন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করে।

নির্বাচনে মেয়র পদে সাতজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের সরফুদ্দীন আহমেদ ঝন্টু (নৌকা), জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা (লাঙ্গল), বিএনপির কাওসার জামান বাবলা (ধানের শীষ), বাসদের আবদুল কুদ্দুস (মই), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের এ টি এম গোলাম মোস্তফা বাবু (হাতপাখা), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির সেলিম আখতার (আম) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ (হাতি)। এছাড়া ৩৩টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২১১ জন ও সংরক্ষিত ১১টি ওয়ার্ডে ৬৫ জন নারী কাউন্সিলর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হলেও কাউন্সিলর পদে নির্দলীয় প্রতীকে ভোট হয়।

সকালে ভোট দেওয়ার পর আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেও নির্বাচন নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন বিএনপির প্রার্থী। তারপরেও কোনো ধরনের সংঘাত ছাড়াই শেষ হয় ভোটগ্রহণ। পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে সকাল থেকেই প্রতিটি কেন্দ্রে ভিড় করতে থাকে ভোটাররা। প্রতিটি লাইনে ছিল ভোটারদের দীর্ঘ সারি। পুরুষদের পাশাপাশি নারী ভোটাররাও সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাড়িয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেন। ভোট দিতে ১৯৩টি কেন্দ্রে ১১৭৭টি ভোটকক্ষ করা হয়। এসব কেন্দ্রের মধ্যে বেগম রোকেয়া সরকারি কলেজ কেন্দ্রের ছয়টি বুথে ভোটগ্রহণ করা হয় ইভিএম পদ্ধতিতে।

সকাল সাড়ে নয়টায় শহরের সেনপাড়া শিশুমঙ্গল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। ভোট দেয়ার পর এরশাদ সাংবাদিকদের বলেন, খুব শান্ত পরিবেশ ভোট হচ্ছে। মানুষ উৎসবমুখর পরিবেশে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিচ্ছে। নগরীর ২৪ ওয়ার্ডের সালেমা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী সরফুদ্দীন আহমেদ ঝন্টু। ভোট দেয়ার পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে। ভোট এভাবে শেষ পর্যন্ত সুষ্ঠু হলে আমি জিতব। জনগণ যে রায় দেবে তা আমি মেনে নেব। আলমনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেয়ার পর জাতীয় পার্টির মেয়রপ্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা জানান ভোটে জনগণ যে রায় দেবে আমি মেনে নিব।

দেওয়ানটুলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেয়ার পর বিএনপির প্রার্থী কাওসার জামান বাবলা ভোটের ফলাফল নিয়ে শঙ্কার কথা জানান। বলেন, যদি ফলাফলে কোনো ধরনের জালিয়াতি না হয় এবং সুষ্ঠু ভোট হয় তাহলে জনরায় মেনে নেব। নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ ছিল জানিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র সরকার বলেন, নির্বাচন শুরুর পর কোথাও কোনো গোলযোগ ছাড়াই শেষ হয়েছে। সব কেন্দ্রগুলোতে শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে। এ নিয়ে আমরা কারও কোনো অভিযোগ পাইনি।

উল্লেখ্য, রংপুর সিটি নির্বাচনে ১৯৩টি কেন্দ্রে ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৯৯৪ জন ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।

দৈনিকদেশজনতা/ আই সি 

প্রকাশ :ডিসেম্বর ২১, ২০১৭ ৪:২৭ অপরাহ্ণ