টেকনাফ প্রতিনিধি:
গত দুইদিন ধরে সারাদেশে বয়ে যাওয়া শৈত্যপ্রবাহে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে কক্সবাজারের টেকনাফে আশ্রয় নেওয়া অসহায় রোহিঙ্গাদের জীবনযাত্রা কাহিল হয়ে পড়েছে। নারী, শিশু ও বয়স্ক রোহিঙ্গারা ছাড়াও ঝুপড়ি ঘরসহ শিবিরের বাইরে থাকা রোহিঙ্গারা প্রচণ্ড শীতে কাঁপছে। ফলে নারী ও শিশুরা শীতবস্ত্রের অভাবে ঠাণ্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। সোমবার বিকালে টেকনাফ উপজেলার নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত শিবির ও শিবিরের বাইরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা বস্তি’র খবর নিয়ে এমন তথ্য জানা গেছে।
টেকনাফের মৌচনি নিবন্ধিত শিবিরের প্রধান সড়কের সামনে গড়ে উঠেছে নতুন করে শতাধিক রোহিঙ্গাদের ঝুপড়ি ঘর। সেখানে অনেকের ঘরে ছাউনি থাকলেও নিচে কাদা মাটিতে বসবাস করছে। এমন এক রোহিঙ্গা নারী তসলিমা আক্তারের সঙ্গে কথা হয়। তার বাড়ি মিয়ানমার কিলাডং গ্রামে। তিনি জানান, গত সপ্তাহেও তেমন বেশি শীত অনুভব হয়নি। কিন্তু গত দুইদিন ধরে ঠাণ্ডায় খুব কষ্টে হচ্ছে। কথা বলার সময় তার কোলে ছিল এক বছরের কন্যাশিশু মিনারা বেগম। তার সর্দি-কাশির প্রভাবে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। বিরামহীনভাবে কেঁদে চলছে। পাশে থাকা অপর দুই সন্তান কাজল ও শফিকার গায়েও গরম কাপড় নেই। তসলিমা আক্তার জানান, এক কাপড়ে তারা মিয়ানমার ছেড়েছেন। গরম কাপড় তো দূরে, প্রাণ নিয়ে আসাটাও ছিল দুরূহ। এখন অনাহারে দিন কাটছে। শীতে কষ্ট পাচ্ছে সন্তানেরা।
সোমবার বিকালে টেকনাফের নয়াপাড়া ত্রাণ কেন্দ্রের পাশে একটি ধানের জমিতে নতুন করে ঘর তৈরি করতে দেখা যায়। শুধু ঘরের ছাউনি দিতে পেরেছেন কেউ কেউ। অনেকে আবার ছাউনি দিতে পারেনি। সেখানে কথা হয় জমিলা বেগম নামে এক বৃদ্ধ রোহিঙ্গা নারীর সঙ্গে। তখন তিনি ঠাণ্ডায় কাঁপছিলেন। বাঁশের বেড়া ও পলিথিনের ছাউনিযুক্ত ১৫ ফুট লম্বা একটি ঝুপড়ি ঘরে গাদাগাদি করে থাকছেন তিনিসহ পরিবারের ৪০ নারী ও শিশু। নারীদের সঙ্গে আছে পাঁচ মাস থেকে ছয় বছর বয়সী অন্তত ১৫ জন শিশু। তাদের মধ্যে বেশির ভাগ শিশু ঠাণ্ডা-কাশিতে আক্রান্ত।
জমিলা বেগম জানান, গত ২০ অক্টোবর সন্ধ্যায় বার্মার সেনাবাহিনী মংডুর হাসসুরা গ্রামটি ঘিরে ফেলে। এরপর গুলিবর্ষণ শুরু করে। ঘর-বাড়ি ছেড়ে পালাতে থাকে সবাই। এ সময় তাদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সেনাদের গুলিতে সেদিন নিহত হন তার স্বামী নুর আমিনসহ অন্তত ৫০ জন। এরপর পাঁচ সন্তানদের নিয়ে নাফনদী পেরিয়ে শাহপরীর দ্বীপ হয়ে টেকনাফে পালিয়ে আসেন। এখানে খুব কষ্টে দিন কাটছে তাদের।
রোহিঙ্গা নারীরা বলেন, শিশুদের কান্নাকাটি আর হইচইয়ের জন্য এই ঝুপড়ি ঘরে কারও ঘুম হয় না। রাতে ঝুপড়ি ঘরের বাঁশের বেড়া দিয়ে যখন ঠাণ্ডা বাতাস ঢোকে তখন শিশুরা কান্নাকাটি শুরু করে। একটা কম্বল কিংবা গরম কাপড় দিয়ে শিশুদের শীত নিবারণেরও কোনো অবস্থা নেই। এর মধ্যেও খাবারের সংকটও চলছে। কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার রোকসানা বিলকিস বলেন, আমরা প্রতিদিন ২৫০-৩০০ জন রোহিঙ্গাকে চিকিৎসা দিয়ে থাকি। তবে শীতকাল আসার পর থেকে রোগীর সংখ্যাটা বেড়েছে। তাদের মধ্যে বেশির ভাগ রয়েছে জ্বর, সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া ও চর্মরোগের রোগী ।
টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা টিটু চন্দ্র শীল বলেন, শীতকালে পাহাড় ও জঙ্গলে আশ্রয় নেওয়া নারী-শিশুরাই বেশি ঠাণ্ডাজনিত আক্রান্ত হচ্ছে। সকলে যাতে চিকিৎসা সেবা পায় সেই চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি