আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
জেরুজালেমকে দখলদার ইসরাইলের রাজধানী করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বীকৃতির প্রতিবাদে লেবাননে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। সোমবার রাজধানী বৈরুতে দেশটির ইসলামী সংগঠন হিজবুল্লাহর আহ্বানে এ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। খবর: আলজাজিরা ও আরটি।
বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা ‘আমেরিকার মৃত্যু ঘণ্টা’ বাজুক, ‘ইসরাইলের ধ্বংস হোক’ বলে স্লোগান দেন। এই বিক্ষোভে হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের এখন একমাত্র অগ্রাধিকার ফিলিস্তিন। হিজবুল্লাহ এবং এর সঙ্গীরা এই অঞ্চলেই অবশ্যই বিজয়ী হবে। এর বিকল্প কিছু নেই।’ তিনি ইসরাইলকে মাঠে সরাসরি জবাব দেওয়ার হুমকি দেন।
লেবাননের হিজবুল্লাহকে শিয়া সংখ্যাগরিষ্ট ইরান সমর্থন দিয়ে থাকে। তাদের শক্তিশালী একটি সামরিক শাখা রয়েছে, যারা মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) এবং লেবাননে সরকার বিরোধীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন লড়াই করছে। দক্ষিণ বৈরুতে হাসান নাসরুল্লাহর ঘাঁটি থেকে ট্রাম্প ও ইসরাইল বিরোধী এই বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। এতে অংশগ্রহণকারীরা ‘জেরুজালেম একমাত্র ফিলিস্তিনের রাজধানী’, ‘জেরুজালেম শুধুই আমাদের’ লেখা ব্যানার বহন করেন।
হিজবুল্লাহ প্রধান আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের মূর্খামি সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে ইসরাইলের ধ্বংসযাত্রা শুরু হলো।’ বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে তিনি প্রশ্ন রাখেন, আপনারা কি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এই বিক্ষোভ অব্যাহত রাখতে পারবেন? সমস্বরে হ্যাঁ জবাব আসে। এরপর হাসান নাসরুল্লাহ বলে চলেন, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত নতুন করে ফিলিস্তিনিদের প্রতি আগ্রাসন এবং অধিকার ভূ-লুণ্ঠিত করার শামিল। গত ৬ ডিসেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক ভাষণে জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেন। একই সঙ্গে তেল আবিব থেকে দেশটির দূতাবাস সেখানে হস্তান্তরের ঘোষণা দেন।
তার এই স্বীকৃতির পর সারাবিশ্বে নিন্দার ঝড় ওঠে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ মুসলিম বিশ্ব এ সিদ্ধান্তে কড়া প্রতিবাদ জানায়। ফিলিস্তিন ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ট্রাম্প ও ইসরাইল বিরোধী বিক্ষোভ হচ্ছে। হিজবুল্লাহ সমর্থকরা এই বিক্ষোভের আগে বৈরুতে মার্কিন দূতাবাসের অন্তত ১০০ মিটার সামনে ব্যাপক বিক্ষোভ করে। সেখান থেকে তাদের সরাতে পুলিশ জলকামান ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। বিপরীতে বিক্ষোভকারীরা পুলিশের দিকে পাথর ছুড়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
লেবাননে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ ফিলিস্তিনি শরণার্থী হিসেবে রয়েছেন, যা দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ। ১৯৪৮ সালে দখলদার ইসরাইল গঠনের পর এসব ফিলিস্তিনিরা লেবাননে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। ট্রাম্পের এই ঘোষণার পর সিরিয়ায় আসাদের পক্ষ নেওয়া হিজবুল্লাহ জানাচ্ছে, তারা সিরিয়ায় আইএসের বিরুদ্ধে বিজয়ী হয়েছে। এখন মনোযোগ কমিয়ে সেখান থেকে ফিলিস্তিন ইস্যুকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
২০০৬ সালে হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরাইলের যুদ্ধ হয়। এতে লেবাননের এক হাজার ২০০ মানুষের প্রাণহানি ঘটে। বিপরীতে ১২০ ইসরাইলি নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই সৈন্য। দীর্ঘ ২২ বছর দখলদারিত্ব শেষে ২০০০ সালে ইসরাইল লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল থেকে তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করে। এরপর থেকেই লেবাননের সঙ্গে ইসরাইলের ছায়া যুদ্ধ চলে আসছে। প্রায়ই সীমান্তে পরস্পরের বিরুদ্ধে মিসাইল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ