২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ভোর ৫:২৫

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

আজ হিজরি ১২ রবিউল আউয়াল। বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা:)-এর জন্ম ও ওফাত দিবস। ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের এ দিনে মক্কার কুরাইশ বংশে মা আমেনার ঘরে জন্মলাভ করেন তিনি। খাঁটি তৌহিদ ও সাম্য-মৈত্রীর শিক্ষা প্রদান শেষে ৬৩ বছর বয়সে ৬৩২ খ্রিস্টাব্দের ১১ হিজরির ঠিক এ দিনেই তিনি আল্লাহ তায়ালার ডাকে সাড়া দিয়ে এ জগত ছেড়ে যান।এ জন্য দিনটি বিশ্বের মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। সর্বশেষ ও সর্বশেষ্ঠ নবীর জন্ম ও মৃত্যু একই দিনে হলেও মুসলিমরা দিনটিকে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সা. বা জন্মোৎসবের দিন হিসেবে পালন করে থাকে। দিনটি পালনে বাংলাদেশে বিগত বছরগুলোতে সরকারি ছুটি থাকলেও শনিবার হওয়ায় ছুটি ঘোষণার প্রয়োজন হয়নি।

স্কুল-কলেজসহ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে দিনটিতে ছুটি পালিত হবে। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সা. উদযাপনে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। সরকারি, আধা-সরকারি ভবন, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি ভবন ও সশস্ত্রবাহিনীর সব স্থাপনায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। জাতীয় পতাকা ও ‘কালিমা তায়্যিবা’ লিখিত ব্যানার ঢাকা মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ ট্রাফিক আইল্যান্ড ও লাইট পোস্টে প্রদর্শন করা হবে। এ ছাড়া রাতে সরকারি ভবনগুলো ও সামরিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আলোকসজ্জা করা হবে। সারা দেশে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, সশস্ত্রবাহিনী বিভাগ, বেসরকারি সংস্থাগুলোয় হজরত মুহাম্মদ সা.-এর জীবন ও কর্মের ওপর আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠান হবে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে মাসব্যাপী ইসলামি বইমেলার পাশাপাশি পক্ষকালব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারের পাশাপাশি বেসরকারি টেলিভিশন ও রেডিও দিবসটির যথাযোগ্য গুরুত্ব তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে। পত্রিকাগুলোয় বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করা হবে। শিশু একাডেমি শিশুদের জন্য বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। দেশের সব হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশুসদন, বৃদ্ধনিবাস, মাদকাসক্তি নিরাময়কেন্দ্রে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। এ ছাড়া বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনগুলোতে যথাযথভাবে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সা. পালন করা হবে। দেশের মসজিদ-মাদরাসাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে আলোচনা সভা, মিলাদ মাহফিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে।

পৃথিবীর যেকোনো মানুষের মৃত্যুই তার পরিবার, সমাজ ও দেশের জন্য বিরাট শূন্যতা সৃষ্টি করে। কিন্তু মহানবীর মৃত্যু মানবসমাজ ও সভ্যতার কোনো পর্যায়ে কোনো শূন্যতার সৃষ্টি করেনি। যদিও তাঁর মৃত্যুর চেয়ে অধিক বেদনাদায়ক কোনো বিষয় উম্মতের জন্য হতে পারে না। তিনি প্রেরিত হয়েছিলেন সমগ্র পৃথিবীর জন্য আল্লাহর রহমত হিসেবে। চল্লিশ বছর বয়সে নবুওয়াত লাভের পর দীর্ঘ ২৩ বছর হজরত মুহাম্মদ সা. কঠোর পরিশ্রম ও শত বাধাবিপত্তি মোকাবেলা করে ইসলামের সুমহান আদর্শ প্রচার করে গেছেন। তার প্রতিটি কাজ ও কথা আমাদের জন্য আদর্শ। তার দেখানো পথেই পৃথিবীতে আসতে পারে শান্তি ও মানবতার মুক্তি।

আল্লাহ বলেন, আমি আপনাকে (নবী সা.) সমগ্র বিশ্বের জন্য রহমত হিসেবে প্রেরণ করেছি। (সূরা আল-আম্বিয়া: ১০৭)। মহান আল্লাহ রাসূলুল্লাহ সা.-এর আদর্শকে জীবনে ধারণ করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন, ‘হে রসূল! আপনি বলে দিন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবেসে থাক তাহলে আমাকে অনুসরণ করো, আল্লাহ তায়ালা তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহগুলো মাফ করে দেবেন। আর আল্লাহ পরম মাশীল, অসীম দয়ালু। (সূরা আল-মায়িদা: ৩১)

রাসূলুল্লাহ সা. চারিত্রিক শ্রেষ্ঠত্বের মাধ্যমেই একটি শ্রেষ্ঠ জাতি গঠন করেছিলেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, নিশ্চয়ই আমি সর্বোত্তম চরিত্রের পূর্ণাঙ্গতা সাধনের জন্য প্রেরিত হয়েছি। (ইবনে মাজা) রাসূলুল্লাহ সা.-এর আদর্শ ধারণ করেই সাহাবায়ে কেরাম রা. যুগের সর্বোত্তম মানুষ হতে পেরেছিলেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, সর্বোত্তম মানুষ হলো আমার যুগের মানুষ, অতঃপর তাদের পরবর্তী যুগের মানুষ, তারপর তাদের পরবর্তী যুগের মানুষ। (সহীহ বোখারি)

এ জন্য রাসূল সা.-কে অনুসরণ ও সেই অনুযায়ী জীবন ও সমাজ গঠন করতে হলে তাঁর জীবনী পড়তে হবে এবং তা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে হবে। তিনি যেসব কাজ করতে বলেছেন তা করতে হবে এবং যা করতে নিষেধ করেছেন তা আস্তে আস্তে ছেড়ে দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, রসূল সা.-এর জীবনকে অনুসরণ ও অনুকরণের মাধ্যমেই কেবল তাঁকে ভালোবাসা যাবে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যাবে। এর বাইরে কোনো পদ্ধতি নেই তাকে ভালোবাসার কিংবা আল্লাহকে পাবার। আর রসূল সা.-কে বাদ দিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করলে সেটাও সম্ভব হবে না। কারণ আল্লাহর হুকুম কীভাবে পালন করতে হবে তা দেখানোর জন্যই রসূলকে পাঠানো হয়েছিল।

তাই আসুন, শুধু প্রচলিত কিছু আচার-প্রথা পালন নয়, বরং রসূল সা.-এর জীবনী সঠিকভাবে জানি এবং সেই অনুযায়ী ব্যক্তি, পারিবারিক ও সমাজ জীবনের সংস্কার আনার চেষ্টা করি। তাহলেই দুনিয়ার জীবনে শান্তি ও আখিরাতের জীবনে মুক্তি মিলবে।

দৈনিকদেশজনতা/ আই সি

প্রকাশ :ডিসেম্বর ২, ২০১৭ ১০:৪৬ পূর্বাহ্ণ