স্বাস্থ্য ডেস্ক:
ওষুধ সেবনের মধ্য দিয়েই কিডনী আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। কথাটি শুনে আশ্চর্য হবারই কথা। কিন্তু কিভাবে অপ্রয়োজনীয় ওষুধ সেবনের মধ্যে দিয়ে শিশুরা কিডনীতে আক্রান্ত হচ্ছে তার ব্যাখ্যা দিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু ও শিশু কিডনী রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক গোলাম মাঈন উদ্দিন।
এতে সাময়িক রোগ উপশম হলেও, ওইসব ওষুধ সেবনের কারণেই পরবর্তীতে কিডনীজনিত রোগে আক্রান্ত হয় শিশুটি। তাই শিশু শরীরে কোনো সমস্যা দেখা দিলে, অবশ্যই তাকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ সেবন করাতে হবে।
শ্বাস কষ্ট, শরীর ফুলে যাওয়া, প্রস্রাব কমে যাওয়া, প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত বা প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া, অতিরিক্ত শারীরিক দুর্বলতা, বমি প্রবণতা, ওজন কমে যাওয়া, খিঁচুনি কিংবা হঠাৎ করে হাত-পা বাঁকা হয়ে যাওয়াটা শিশুর কিডনীজনিত রোগের লক্ষণ।
অধ্যাপক ডা. গোলাম মাঈন উদ্দিন জানালেন, দেশের প্রায় দুই কোটি কডনী রোগীর মধ্যে ৪০ লাখ শিশু রয়েছে, যারা কিডনীজনিত রোগে ভুগছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে প্রতিদিন যত শিশু রোগী আসে তার ৫ শতাংশই কিডনী সংক্রান্ত জটিলতার শিকার। তবে এখানে এসে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থতা ফিরে পাচ্ছে তারা।
শুধু তাই নয়, কিডনী প্রতিস্থাপনের মাধ্যমেও সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন পাচ্ছে অনেক শিশু।
চিকিৎসা ও মানব সেবায় বিশেষ অবদানের জন্য আলোকিত বাংলার মুখ ফাউন্ডেশন কর্তৃক “মাদার তেরেসা স্বর্ণপদক-২০১৭” প্রাপ্ত এই চিকিৎসক জানালেন, শিশু কিডনী প্রতিস্থাপনে দেশের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান বিএসএমএমইউ। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় আড়াই থেকে তিনগুণ কম খরচে অর্থাৎ মাত্র দুই থেকে তিন লাখ টাকায় সম্পূর্ণ সফলতার সাথে শিশু কিডনী প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে এই হাসপাতালে।
২০০৬ সাল থেকে শিশু কিডনী প্রতিস্থাপন চালু হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে।
চলতি বছর পর্যন্ত ১০ জনের কিডনী প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। যাদের মধ্যে ৯ জন সুস্থ স্বাভাবিক জীনব ফিরে পেয়েছে। শুধু একটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। কিডনী প্রতিস্থাপনের পর ওই শিশুর অভিভাবকরা চিকিৎসকদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা না করায় ওই শিশুটির মৃত্যু হয়েছে বলে জানালেন এই শিশু কিডনী রোগ বিশেষজ্ঞ।
একই সঙ্গে তিনি বললেন, ২০০৬ সালে প্রথমবারের মতো বিকাশ নামের যে কিশোরটির কিডনী প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল, সে কিছুদিন আগে বিয়ে করে সুখের সংসার করছে বলে জানিয়েছে আমাদের। বিকাশকে কিডনী দিয়েছিল তার চাচা।
শিশু কিডনী প্রতিস্থাপনে বিএসএমএমইউ-কে কেন সফল ও সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান বলা হচ্ছে জানতে চাইলে ডা. গোলাম মাঈন উদ্দিন বলেন, এখানে যেমন রয়েছে উন্নত প্রযুক্তি, তেমনি রয়েছে দক্ষ চিকিৎসক। যাদের নিবিড় পরিচর্যায় কিডনী প্রতিস্থাপনের পর সুস্থ স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাচ্ছে শিশুরা। আর সবচেয়ে বড় কথা আমরা জীবিত মানুষের কিডনী (লাইভ কিডনী) শিশুর শরীরে প্রতিস্থাপন করে থাকি, তাই ঝুঁকি কম। অর্থাৎ আক্রান্ত শিশুর বাবা-মা বা তার আত্মীয়-স্বজনের কিডনী ওই শিশুর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়। কিন্তু অন্যান্য হাসপাতালে এরকম কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তাই আমরা সফল।
জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের নেফ্রোলজী বিভাগের ৭জন এবং ইউরোলজী বিভাগের ৭জন মোট ১৪জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সমন্বয়ে এখানে শিশু কিডনী প্রতিস্থাপন করা হয়ে থাকে।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ