২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ২:৩৫

বাংলাদেশ-মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তি সই: মাতৃভূমিতে ফিরতে অধীর আগ্রহে রোহিঙ্গারা

কায়সার হামিদ মানিক:
মিয়ানমারের মংডু ফকিরাবাজার এলাকার স্বর্ণ ব্যবসায়ী ও মংডু শহর স্বর্ণ ব্যবসায়ী সমিতির সেক্রেটারী উখিয়ার কুতুপালং লম্বাশিয়া এলাকায় বসবাসকারী রোহিঙ্গা দিল মোহাম্মদ (৫৫) বাংলাদেশ-মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তি সই’য়ের ব্যাপারে তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, কোনদিন চিন্তা করিনি নিজ মাতৃভূমি ছেড়ে চলে আসতে হবে। যেহেতু সেখানকার রাখাইন সম্প্রদায় ও আইন-শৃংখলাবাহিনীর সাথে আমাদের সখ্যতা ছিল ভালো। কিন্তু হঠাৎ তাদের মুখ ফেরানোর কারণে দেশ ছাড়তে হয়েছে। ৬টি স্বর্ণের দোকান, ২০ একর ধানী-জমিসহ মূল্যবান সম্পদ ছিল যা বাংলাদেশী মুদ্রামানে প্রায় ১০কোটি টাকা। মুহুর্তের মধ্যে তচনচ করে দিয়েছে বর্মি বাহিনী। তবুও আজকের বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার খবরে নিজ মাতৃভূমিতে ফিরতে অধীর আগ্রহে দিন গুনছি।
একই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন পাশ্ববর্তী ঝুপড়িতে বসবাসকারী রোহিঙ্গা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু বলীবাজার এলাকার বাসিন্দা মাহামুদুর রহমান (৩৫)। তিনি বলেন, রাতের বেলায় ঘুমাতে গেলে কান্নায় বুক ভেসে যায়। একটি মাত্র অনুভূতি, জীবনের শেষ বেলায় কি একবার মিয়ানমারে ফিরতে পারবো?
তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করে আরো বলেন, বাংলাদেশ সরকার যদি তাদেরকে আশ্রয় না দিত তাহলে মিয়ানমার সেনা, বিজিপি ও সশস্ত্র রাখাইন জনগোষ্ঠির হাতে অথবা নাফ নদীতে প্রাণ দিত হতো। তাই বাংলাদেশে সরকারের প্রতি আজীবন কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। তার মতো একই অভিমত অন্যান্য রোহিঙ্গাদের। তারাও চায় নিজ মাতৃভূমিতে ফিরে গিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে বাঁচতে।
কুতুপালং ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গা নেতা ডাঃ জাফর আলম বলেন, মিয়ানমার যেভাবে বাংলাদেশের ডাকে সাড়া দিয়ে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া চালু করার জন্য এগিয়ে এসেছে এতে উভয় দেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে রোহিঙ্গারা। তবে তিনি এও বলেন, মিয়ানমারে আগে শান্তি ফিরে আনতে হবে। জ্বালাও-পোড়াও, হত্যা, নিযার্তন, জুলুম বন্ধ করতে হবে। এ অবস্থায় রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরানো আগুনের কুন্ডলিতে লাকড়ি নিক্ষেপের মতো ব্যাপার।
তিনি আরো বলেন, চুক্তিটি কাগজে কলমে নয়, বাস্তবে দেখতে চায় রোহিঙ্গারা। তবে বাংলাদেশ সরকার যে ভাবে খোলামেলা মন নিয়ে এগিয়েছে মিয়ানমারকেও ঠিক সেভাবে আগাতে হবে। কারণ আমরা ফিরে যেতে চাই নিজ মাতৃভূমিতে। আর কতো বছর এদেশে রয়ে যাবো!
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, মিয়ানমার সেনা ও বিজিপি ও রাখাইন উগ্রবাদীর নির্যাতনের মুখে ২৫ আগষ্টের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৬ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়াও পূর্বে থেকে বসবাস করছে আরো ২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। এতো রোহিঙ্গার চাপ এমন ছোট রাষ্ট্রের পক্ষে কখনো সম্ভব নয়। তাই আমরা বার বার দাবী জানিয়ে আসছিলাম যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গা নাগরিকদের মিয়ানমারে ফেরত নেয়ার জন্য। অবশেষে জাতিসংঘ, ইইউসহ বিশ্বের সংখ্যাগরিষ্ট দেশের চাপের মুখে এবং আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তিতে সই করেছে।
এদিকে প্রত্যাবাসন চুক্তির অগ্রগতি নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। নেপিডোয় সদ্য সমাপ্ত আসেম বৈঠকে ইউরোপ ও এশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় এই চুক্তি সইয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। আন্তর্জাতিক ফোরামে মিয়ানমারের জোরালো সমর্থক চীন উদ্বাস্তু সঙ্কট নিরসনে যে তিন দফা প্রস্তাব দিয়েছে, প্রত্যাবাসন চুক্তি তার অন্যতম।

দৈনিক দেশজনতা /এন আর

প্রকাশ :নভেম্বর ২৪, ২০১৭ ৮:৪২ অপরাহ্ণ