নিজস্ব প্রতিবেদক:
যান্ত্রিক জীবনে কোলাহল থেকে রাজধানিবাসীর স্বস্তির আরেক নাম হাতিরঝিল। নগর জীবনের যান্ত্রিকতা থেকে বেরিয়ে সৌন্দর্য উপভোগ বলতেই শহরবাসীর কাছে এখন মনোরম পরিবেশের হাতিরঝিলই ভরসা। হাতিরঝিল’কে বিশ্বমানের পর্যটন স্থানে পরিণত করতে কাজ করছে সরকার।
ইতোমধ্যে দেশি-বিদেশী পর্যটকদের চিত্তবিনোদনের জন্য হাতিরঝিলের মনোরম পরিবেশে ‘গ্রান্ড মিউজিক্যাল ড্যান্সিং ফাউন্টেইন’ এবং অ্যাম্ফিথিয়েটার উদ্বোধন হয়েছে। লেকের উপর নির্মিত এই অ্যাম্ফিথিয়েটার এবং মিউজিক্যাল ড্যান্সিং ফাউন্টেইন হাতিরঝিল প্রকল্পের অধীনে নগরবাসীর বিনোদনে নতুন সংযোজন। এটি দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ। অ্যাম্ফিথিয়েটারের আসন সংখ্যা দুই হাজার। এই ফাউন্ডেইন পরিদর্শনকালে এর সৌন্দর্য উপভোগ করে যে কেউ মুগ্ধ হবেন। এখানে নাটক, কনসার্ট, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এমনকি আলোচনা সভারও আয়োজন করা যাবে। এর মাধ্যমে ভিন্ন এক সাংস্কৃতিক স্বাদ পাবেন রাজধানীবাসী।
বিনোদনের জন্য হাতিরঝিলে নিয়মিত যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন আয়োজন। অনেক দিন আগেই ওয়াটার ট্যাক্সি চালু করা হয়েছে হাতিরঝিলে। নগরবাসীর কাছে বেশ সাড়া ফেলেছে এটি। এবার যুক্ত করা হয়েছে নানান রং-ঢংয়ের প্যাডেলচালিত বোট (পা দিয়ে চালিত নৌকা)।
এক ঘাট থেকে অন্য ঘাটে যাওয়া ওয়াটার বাসে নির্দিষ্ট চালক থাকেন। তবে প্যাডেলচালিত বোট চালানোর সুযোগ নিজেদেরই। ফলে নৌকা ভ্রমণের একটা অভিজ্ঞতাও নেওয়া যেতে পারে! বোটে উঠার সময় লাইফ সাপোর্ট জ্যাকেট পড়ার বিষয়টি নিয়ম করা হয়েছে। ফলে ভ্রমণকারীরা সাঁতার না জানারাও নিশ্চিন্তে বোট নিয়ে ঘুরতে পারবেন হাতিরঝিলের জলে। তবে কিছু বাধ্য বাধকতাও রয়েছে। একটি বোটে সর্বোচ্চ দুইজন বা চারজন, তার চেয়ে বেশি একসাথে উঠতে পারবেন না। সবচেয়ে বড় বাধ্য বাধকতা হলো একটা নির্দিষ্ট সীমানার মধ্যেই ঘুরতে হবে বোট নিয়ে।
এ প্রসঙ্গে ঘাটের ইনচার্জ সার্জেন্ট কবির বললেন, ‘এখানে ওয়াটার ট্যাক্সি চলায় বেশি দূর যেতে দিই না। আর সীমানা না থাকলে লোকজন নিজেদের মতো করে অনেক দূর চলে যাবে। তখন তাদের আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না। ফলে নির্দিষ্ট সীমানা করে দেওয়া হয়েছে।’
মেরুলবাড্ডা ও রামপুরা ঘাটের মাঝামাঝি অংশে এই বোট চালানো হচ্ছে বলে জানায়ে তিনি আরও বলেন, বোট চালানোর ফি ধরা হয়েছে এক ঘণ্টা ও আধা ঘণ্টা; এই দুই প্যাকেজে। আধা ঘণ্টা বোটে থাকলে গুনতে হবে ১৫০ টাকা। আর এক ঘণ্টার জন্য ফি পড়বে ২৫০ টাকা। টিকিট পাওয়া যাবে মেরুলবাড্ডার ওয়াটার ট্যাক্সির ঘাট থেকে। সকাল সাতটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত বোট ঘাটে থাকে বলেও সার্জেন্ট কবির।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নতুন প্যাডেলচালিত বোট চালানোর সুযোগ অনেকেই মিস করতে চান না। এর ফলে ঘাটে অনেক ভিড়। কথা হলো বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র রবিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, হাতিরঝিলের ওয়াটার ট্যাক্সিতে চড়েছি। সেখানে ড্রাইভার থাকে কিন্তু প্যাডেলচালিত বোটের ড্রাইভার আমি নিজেই। তাই প্যাডেলচালিত বোটে চড়ার ব্যাপারে বেশ আগ্রহ আমার। ভয় করছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভয় করছি না, আমি সাঁতার জানি। আবার বোটে উঠার সময় লাইফ সাপোর্ট জ্যাকেট পড়ার নিয়ম করা হয়েছে। সুতরাং ভয়ের কিছু নেই।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলেন, হাতিরঝিলে বেড়াতে আসা দর্শনার্থীদের চিত্তবিনোদনের জন্য মনোরম পরিবেশে সব ব্যবস্থা করছে সরকার। এরপর হাতিরঝিলে বিলাসবহুল ইয়ট নামানোরও চিন্তা করছেন বলেও জানান প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
দেশ জনতা/এন এইচ