নিজস্ব প্রতিবেদক:
বুড়িগঙ্গার দক্ষিণ পাড়ে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে শতাধিক স্থাপনা। গড়ে তোলা হয়েছে ইট,বালু,পাথর, পিট কয়লা, মাটি ও সিমেন্টের গদি। প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চলছে এই অবৈধ বাণিজ্য। ধুলা-বালিতে এলাকার পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। এছাড়া ইট-বালুর উচ্ছিষ্ট অংশে নদীর তলদেশ দ্রুত ভরাট হয়ে যাচ্ছে। তবে সংশ্লিষ্টদের যথাযথ তদারকির অভাবে এই দখল বাণিজ্য বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে জানান স্থানীয়রা।
তবে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান এম কমোডর মোজাম্মেল হক বলেন, প্রায়ই নদীর উভয় তীরে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। এটি সংস্থার একটি নিয়মিত কাজ। তবে উচ্চ আদালতে মামলার কারণে এখনো বেশ কিছু স্থাপনা উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না। আদালতের নির্দেশ পেলে শিগগিরই তা ভেঙে ফেলা হবে।
ভুক্তভোগীরা জানান, ক্ষমতার পালা বদলের সাথে সাথে এখানে ব্যবসার হাত বদল হয়। এছাড়া অবৈধ দখলদাররা বিআইডব্লিউটিএ’র কতিপয় কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে নিয়মিত মাসোয়ারা দিয়ে তাদের অবৈধ বাণিজ্য টিকিয়ে রেখেছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, বুড়িগঙ্গা চীন মৈত্রী সেতুর দক্ষিণ প্রান্তে হাসনাবাদ,দোলেশ্বর ও চর মীরেরবাগ এলাকায় অবাধে চলছে ইট,বালু সিমেন্ট,পিট কয়লা ও মাটির বাণিজ্য। ড্রেজারের মাধ্যমে নদীর পাড়ে ফেলা হচ্ছে বালু। সেই বালু শত শত ট্রাক যোগে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আর মাটি যাচ্ছে বিভিন্ন ইট ভাটায়।
মীরেরবাগের স্থানীয় বাসিন্দা শমসের আলী জানান, শুধু বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মচারীরাই নয়, এসব অবৈধ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সাপ্তাহিক ও মাসিক হারে চাঁদা নিচ্ছে আইন-শৃংখলা বাহিনীর কতিপয় সদস্যও। এ ব্যাপারে কথা বলার উপায় নেই। এছাড়া আগানগর এলাকায়ও নদীর তীরে গড়ে উঠেছে একাধিক অবৈধ ইট-বালুর গদি। স্থানীয়রা জানান, প্রভাবশালীরা জড়িত বলে বছরের পর বছর ধরে চলছে এই বাণিজ্য।
এদিকে হাসনাবাদের ইট,বালুর গদির মালিক মোবারক হোসেন বলেন, ‘যাতায়াতের সুবিধার জন্য এখানে গদি স্থাপন করেছি। আমরা রাস্তা ছেড়েই ব্যবসা করছি। কারো কোনো ক্ষতি করছি না। বিভিন্ন সংস্থার লোকজন আমাদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা নিচ্ছে। তারপরও অভিযানের নামে প্রায়ই ঝামেলার সৃষ্টি করছে। তখন অধিক চাঁদা দিতে হচ্ছে।’
এ ব্যাপারে ঢাকা নৌ-বন্দরের যুগ্ম-পরিচালক জয়নাল আবেদীন বলেন, বুড়িগঙ্গার উভয় পাড়ে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হয়। শিগগিরই অবশিষ্ট স্থাপনাগুলোও ভেঙে ফেলা হবে। ইট,বালুর গদি সরিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বুড়িগঙ্গা বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, যথাযথ তদারকির অভাবে নদীর তীরে গড়ে উঠা উচ্ছেদ অভিযান ক্রমাগতভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে বুড়িগঙ্গা একসময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দখলে চলে যাবে। তিনি বলেন, একসময় দেখা যাবে নদীর প্রস্থ হ্রাস পেয়ে নালায় পরিণত হয়েছে। নদীর তলদেশ ভরাট হওয়ার কারণে স্বাভাবিক পানি প্রবাহও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন তরল বর্জ্য নদীর পানিকে দূষিত করছে। এভাবে চলতে থাকলে বুড়িগঙ্গা এক সময় অস্তিত্ব হারাবে।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ