নিজস্ব প্রতিবেদক:
সিলেটের সালুটিকর এলাকার ছালিয়া গ্রামের একটি বাড়ি। এখানে শান্তির নীড় গড়ে তুলেছে দেশীয় কয়েক প্রজাতির হাজার হাজার পাখি। কালোথাবা মুক্ত এবং বিভিন্ন ফলমুলের গাছ থাকাতেই এই বাড়িটি পছন্দ করে নিচ্ছে তারা। বাড়ির কিনারের সড়কে যাতায়াতকারীদের নজর কাড়ে লাল-সাদা রঙের বক, মাছরাঙা, কোকিলসহ হরেক রকমের পাখির মিলনমেলা। ভরদুপুরের রোদে কুহুসুরে কোকিলের কণ্ঠে ভেসে আসা গান মুগ্ধ করে পথিককে। ক্লান্তির যাত্রা সামান্য হলেও আরামদায়ক হয়ে ওঠে দূর-দূরান্তের যাত্রীদের। একেকটি গাছে প্রায় ২০-২৫টি পাখি নিজেদের মতো করে সাজিয়েছে বাসা। কোনো বাসাতে দেখা মিলছে নীল ও সাদা রঙের ডিম। কোনো বাসাতে ছোট-বড় আকারের ফুটফুটে বাচ্চা। মায়াবী সন্তানের মুখে সরু ঠোঁটের আদর মাখা খাবার তুলে দিচ্ছে পাখিরা। সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ সড়কের পাশেই অবস্থিত আমেরিকা প্রবাসীর ছিমছাম পরিপাটি এই বাড়ির অভয়ারণ্যে মুক্তপাখিদের বসবাস। বাড়িটি যারা দেখাশোনা করছেন তারাই দায়িত্ব পালন করছেন পাখিদের নিরাপত্তার। বিশেষ অনুমতি ছাড়া বাড়িতে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। এর কারণেই বাড়িটির চারদিকে বিভিন্ন গাছের সবুজ পাতা ও বাঁশঝাড়ের ফাঁকে খড়কুটো দিয়ে আপন মনে ঘর সাজিয়ে বসবাস করছে বক, পানকৌড়িসহ বিভিন্ন জাতের ডানামেলা পাখির দল। ভোরের সূর্যের আলো ফোটার সঙ্গেই দলবদ্ধ হয়ে খাবারের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে। সূর্যাস্তের আগেই বাচ্চাদের জন্য খাবার নিয়ে নীড়ে ফিরে আসে তারা। লতাপাতা আর খড়কুটো দিয়ে গাছের মগডালে তৈরি করা অস্থায়ী বাসায় বংশবিস্তারে বৈশাখ থেকে শুরু করে ভাদ্র মাস পর্যন্ত বসবাস থাকে। নিজেদের মতো করে বোনা বাসায় ডিম পাড়া, বাচ্চাদের যত্ন সহকারে লালন করার কাজগুলো অভয়ে নিজের মতো করে যাচ্ছে তারা। পালাবদল করে ডিমে তা দেওয়া ও বাচ্চাদের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার মতো কাজ সাধারণভাবে মানিয়ে বসবাস করছে পাখিগুলো। নানা বর্ণের পাখির কলকাকলিতে মুখরিত বাড়িটিতে প্রতিদিন পাখিপ্রেমী মানুষের ভিড় লেগে থাকে। দূর-দূরান্ত এলাকা থেকে আসা পথচারী কিংবা যাত্রীরা গাড়ি থামিয়ে এক নজর হলেও দর্শন করেন মুক্ত পাখিদের আবাসস্থল। যাত্রাবিরতি করা মানুষ নিজেকে প্রকৃতির সঙ্গে বিলিয়ে দেওয়া মুহূর্তগুলো ছবির ফ্রেমে বন্দি করে রাখতে ছবি তোলেন, কেউবা ভিডিও করেন।